প্রযুক্তি খাতে চীনের আধিপত্য রোধে তথ্য চুরির অভিযোগ এনে সব ধরনের রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় চীনের প্রযুক্তি খাতে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। কেননা কোম্পানিগুলো বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোচিপ তৈরি করে চলেছে। হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের একটি ইউনিট বর্তমানে সার্ভিলেন্স ক্যামেরার জন্য চীনের তৈরি নতুন চিপ রফতানি করছে। এটিকে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টটির মার্কিন রফতানি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এড়ানোর প্রয়াস হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
হুয়াওয়ের হাইসিলিকন চিপ ডিজাইন ইউনিট থেকে রফতানি চলতি বছরে চালু হয়েছিল। কিছু স্থানীয় চীনা সার্ভিলেন্স ক্যামেরা নির্মাতা ছিলেন সেখানে। সম্প্রতি চীনের বাজারে হাইএন্ড বা ফ্ল্যাগশিপ ক্যাটাগরিতে নতুন স্মার্টফোন মেট ৬০ প্রো উন্মোচন করেছে হুয়াওয়ে টেকনোলজিস।
স্মার্টফোন প্রসেসরের চেয়ে সার্ভিলেন্স চিপগুলো তৈরি করা সহজ বলে বিবেচিত হওয়ায় আগামীতে চিপ বাজার ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তরা। হুয়াওয়ে নিজেদের পুনরুত্থানের জন্য চিপ ডিজাইন সফটওয়্যারের কাজে মার্কিন বিধিনিষেধকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। গত মার্চে হুয়াওয়ে ঘোষণা করে তারা ১৪ ন্যানোমিটারের উৎপাদিত চিপের ডিজাইন টুলসে অগ্রগতি অর্জন করেছে।
হাইসিলিকন মূলত হুয়াওয়ের জন্য চিপ সরবরাহ করে। তবে তাদের দাহুয়া টেকনোলজি ও হিকভিশনের মতো বাইরের গ্রাহকও রয়েছে। মার্কিন রফতানি নিয়ন্ত্রণ চেষ্টার আগে এটি সার্ভিলেন্স ক্যামেরা সেক্টরের প্রভাবশালী চিপ সরবরাহকারী ছিল। ব্রোকারেজ সাউথওয়েস্ট সিকিউরিটিজ ২০১৮ সালে তার বিশ্বব্যাপী শেয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছিল।
কনসাল্টিং ফার্ম ফ্রস্ট অ্যান্ড সুলিভানের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে হাইসিলিকনের বৈশ্বিক বাজার হিস্যা ৩ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
ইউনিটটির প্রচেষ্টা সম্পর্কে সূত্রের বরাতে জানা যায়, হাইসিলিকন ২০১৯ সাল থেকে কিছু নিম্ন স্তরের সার্ভিলেন্স চিপ সরবরাহ করেছে। তবে তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল হাইএন্ড চিপ নিয়ে কাজ করা, পাশপাশি তাইওয়ানের নোভাটেক মাইক্রো ইলেকট্রনিকস করপোরেশনের মতো কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বাজার শেয়ার পুনরুদ্ধার করা। এদিকে হুয়াওয়ে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
হুয়াওয়ে আগস্টের শেষের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, যখন তারা মেট ৬০ প্রো নামে একটি নতুন স্মার্টফোন চালু করেছিল, যা একটি উন্নত চিপ দ্বারা নির্মিত ৫জি প্রযুক্তির স্মার্টফোন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার হওয়ার পর হুয়াওয়ের স্মার্টফোনের এমন প্রত্যাবর্তন চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবং জনসাধারণ স্বাগত জানিয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেকইনসাইটস, যারা মেট ৬০ প্রো পরীক্ষা করে দেখেছে, তাদের ভাষ্যমতে, এটি একটি নতুন কিরিন ৯০০০এস দ্বারা পরিচালিত স্মার্টফোন। এ উন্নত চিপ সম্ভবত চীনের শীর্ষ চিপ ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন (এসএমআইসি) দ্বারা তৈরি করা হয়েছে।
হুয়াওয়ে বর্তমানে সেলফোনের জন্য কিরিন চিপ সরবরাহের পথ তৈরিতে কাজ করছে বলে ধারণা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে হুয়াওয়ের হাইসিলিকন ডিভিশন কিরিন চিপসেট তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। পাশাপাশি তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) চিপ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে।
মার্কিন আইনপ্রণেতারা হুয়াওয়ে এবং এসএমআইসির ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানালেও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো জানান, হুয়াওয়ে বিপুল পরিমাণ উন্নত চিপযুক্ত স্মার্টফোন তৈরি করতে পারে এমন কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেই।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ইলেকট্রনিক ডিজাইন অটোমেশন সফটওয়্যারে হাইসিলিকনের প্রবেশাধিকার সীমিত হয়েছে। তবে হুয়াওয়ের সাম্প্রতিক অগ্রগতি দেখায় যে তারা নিজস্ব সরঞ্জাম তৈরি করেছে এবং তা অর্জনে কিছু অপ্রচলিত উপায় ব্যবহার করছে।