দেশীয় পর্যায়ে উৎপাদন ও বাজার বাড়াতে বিদেশী কম্পিউটার, ট্যাবলেটসহ প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে লাইসেন্সিং আরোপের কথা ভাবছিল ভারত। এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো শঙ্কায় ছিল। বর্তমানে এ বিধি কার্যকরের সিদ্ধান্ত থেকে থেকে সরে এসেছে দেশটি।
নতুন লাইসেন্সিং কার্যকরের পরিবর্তে বর্তমানে ভারত এখন অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে বাজার দেখভালের পাশাপাশি আলাদা ব্যবস্থা কার্যকরের কথা ভাবছে। ফলে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, কম্পিউটারসহ প্রযুক্তিপণ্য বিদেশ থেকে আনার ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না। ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে এ অনুমোদন ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে, যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে হার্ডওয়্যার পণ্য আমদানির পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে।
আগে অনুমতি গ্রহণের বিধি কার্যকরের কথা বলা হলেও বর্তমানে তা আর থাকছে না, ফলে দীর্ঘমেয়াদেও বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না। নতুন এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ডেল, এইচপি, অ্যাপল, স্যামসাং, আসুসসহ বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি অনেকটাই স্বস্তি ফিরে পেয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর লাইসেন্স গ্রহণের কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল। বর্তমানে এর পরিবর্তে কোম্পানিগুলোকে নির্ধারিত সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ভারত সরকারের কিছু কর্মকর্তা জানান, ছয় থেকে আট মাস পর আমদানি কার্যক্রম দেখভাল ও নিয়ন্ত্রণে আলাদা ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমতি দেয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিদেশ থেকে প্রযুক্তিপণ্য বা হার্ডওয়্যার নিয়ে আসার ক্ষেত্রে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে না বলে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
তিনটি বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিগুলোকে আমদানি অনুমতি দেয়া হবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। এগুলো হলো আগের বছরের পণ্য আমদানির হার বা গত তিন বছরের গড়, অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে উৎপাদিত হার্ডওয়্যার পণ্য ও মোট রফতানীকৃত ইলেকট্রনিকস পণ্য। এছাড়া ভারত সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে একটি সানসেট ক্লজও কার্যকরের কথা ভাবছে। সানসেট ক্লজ হচ্ছে কোনো বিধান বা নীতিমালা অকার্যকর হয়ে যাওয়ার সময়সীমা। অর্থাৎ নতুন করে বিধানে কোনো পরিবর্তন বা সংযোজন না আনা হলে সময়সীমা শেষে তা বাতিল বা অকার্যকর হয়ে যাবে।
ভারতের প্রযুক্তিপণ্য খাতসংশ্লিষ্টরা সম্প্রতি দেশটির তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখরের সঙ্গে আমদানিসংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্তের জন্য সাক্ষাৎ করেছে। এ সাক্ষাতে ডেল, অ্যাপল, স্যামসাং, এইচপি, এইচপিই, ইন্টেল, আসুস, এসার, ইন্ডিয়া সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস অ্যাসোসিয়েশন (আইসিইএ) এবং দ্য ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ফর ইনফরমেশন টেকনোলজির (এমএআইটি) মুখপাত্ররা অংশ নিয়েছিলেন।
হার্ডওয়্যার খাতসংশ্লিষ্টরা শিগগিরই ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) সঙ্গে দেখা করবেন বলে সূত্রে জানা গেছে। এ সময় পণ্য আমদানির বিষয়ে চূড়ান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। পণ্য আমদানি পরিচালনা কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে পরিচালিত হবে এবং ডিজিএফটি এর দেখভাল করবে।
আরেক সরকারি কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো যেকোনো পরিমাণে পণ্য আমদানি করতে পারবে। ভবিষ্যতে আমদানিতে কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রণয়নের অংশ হিসেবে আপাতত ডিভাইস আমদানির উৎস ও দামের বিষয়টি দেখা হবে। চাহিদা পূরণের জন্য কোম্পানিগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।