পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে বিশ্ববাজারে ৭০০-এর বেশি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড প্রতিযোগিতা করত। ফিচার, বৈশিষ্ট্য ও ডিজাইনভেদে ব্র্যান্ডগুলোর গ্রাহকও আলাদা ছিল। ২০২৩ সালে এসে সক্রিয় ব্র্যান্ডের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ কমে আড়াইশতে নেমে এসেছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের গ্লোবাল হ্যান্ডসেট মডেল সেলস ট্র্যাকার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ৭০টির বেশি প্রধান ব্যবসায়ী দেশে এসব ব্র্যান্ডের বিক্রি পর্যবেক্ষণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সেলফোনের গঠনে পরিবর্তন, রিপ্লেসমেন্ট নীতিমালা, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সরবরাহ চেইনের সমস্যাসহ প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ব্র্যান্ড বাজার ছেড়েছে এবং বিক্রি কমেছে।
স্থানীয় পর্যায়ের স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোই বেশি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্র্যান্ডগুলো ক্রমাগত অবস্থান ধরে রেখেছে। অধিকাংশ স্থানীয় ব্র্যান্ডই সাশ্রয়ী মূল্যের বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করে। এর মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক, লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অন্যতম। কাউন্টারপয়েন্টের পর্যবেক্ষণে ব্র্যান্ডগুলোর বাজার হারানোর কিছু কারণ উঠে এসেছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে বড় কোম্পানিগুলো সেলফোন বাজারজাতে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। যেখানে ছোট ব্র্যান্ডগুলো সাধারণ ডিভাইসের মাধ্যম বাজারে অবস্থান তৈরি করতে চেয়েছে।
বড় কোম্পানিগুলো বিভিন্ন প্রচারণা ক্যাম্পেইনের মাধ্যমেও আয় করে। এর মধ্যে বিভিন্ন খেলাধুলা, চলচ্চিত্রের প্রচারণায় ব্র্যান্ডগুলো যুক্ত থাকে। কিন্তু স্থানীয় বা লোকাল ব্র্যান্ডগুলোর পক্ষে সে রকম কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে গ্রাহকের চাহিদায়ও পরিবর্তন আসছে। সাধারণ ফিচারে কাজ হলেও বর্তমানে উন্নত ডিজাইন, বেশি ফিচার গ্রাহকের চাহিদার কেন্দ্রে রয়েছে।
বৈশ্বিক পর্যায়ে আগে স্মার্টফোন ব্র্যান্ড কম ছিল। যে কারণে স্থানীয় পর্যায়ের কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি ছিল। পরবর্তী সময়ে শাওমি, অপো, ভিভোর মতো চীনা ব্র্যান্ডগুলো দ্রুত বাজারে প্রবেশ করে। কোম্পানিগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে বেশি ফিচারের ডিভাইস সরবরাহ করায় গ্রাহকের পছন্দেও পরিবর্তন আসে। কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব, যন্ত্রাংশ সরবরাহ সংকট, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বড় কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে মুনাফা করলেও ছোট ব্র্যান্ডগুলো কার্যক্রম চালু রাখতেই হিমশিম খেয়েছে।
প্রযুক্তিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সামনের মাসগুলোয় স্থানীয় পর্যায়ের স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের সংখ্যা আরো কমবে। অন্যদিকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হলেও বড় কোম্পানিগুলোও এর সঙ্গে মিলিয়ে চলতে পারবে।
গ্রাহকের চাহিদার পরিবর্তনের সঙ্গে বড় ব্র্যান্ডগুলো গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। বাজারে অবস্থান ধরে রাখার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। এ কারণে অনেক ছোট ব্র্যান্ড হয় ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে অথবা অন্য কারো মালিকানায় চলে গেছে।
বর্তমানে যেসব লোকাল ব্র্যান্ড রয়েছে তারা যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে গবেষণা ও উন্নয়নে মনোনিবেশ করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি যে বাজারে কোম্পানিগুলো কাজ করছে সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি ও ত্রুটির জায়গাগুলো শনাক্ত করতে হবে। উন্নতির জায়গা চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।