দেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। এখাতে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ নিয়োজিত আছেন, প্রতিনিয়ত বাড়ছে এই সংখ্যা।
নতুন আয়কর আইনে ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের বিপরীতে ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তনের বিধান রাখা হয়েছে। সেই বিধান পরিপালনের আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ সার্কুলার জারি করে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে।
তবে এ নির্দেশনাকে অগ্রহনযোগ্য বলে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে খাতটি। সেই সঙ্গে বৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা আসার রাস্তাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
রাজধানীর মিরপুরের ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠান অ্যানিমেশন। এখানে কাজ করেন প্রায় ২৫০ ফ্রিল্যান্সার। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদ হোসেইন বলেন, ‘এমনিতেই ডলারের বর্তমান রেটের চেয়ে আমরা ২ টাকা করে কম পাচ্ছি। তারপর আবার যদি আমাদের আনা রেমিট্যান্সের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়, তাহলে তা রেমিট্যান্স প্রবাহে আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেকেই কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সের টাকা দেশে আনবেন না। রেমিট্যান্সের খারাপ সময়ে যেখানে তা উৎসাহিত করার কথা, সেখানে বাড়তি কর কাটার মাধ্যমে রেমিট্যান্সকে নিরুৎসাহিত করা ঠিক হচ্ছে না। তখন অনলাইনে লেনদেন হবে, হুন্ডিতে টাকা আসবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারির আগে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন কর অঞ্চল-১১। মূলত বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ থেকে কর কাটার বিধান এবং এনবিআরের উৎসে কর কাটার অধিক্ষেত্র আদেশ অনুযায়ী, সমগ্র বাংলাদেশের কর্তিত কর কর অঞ্চল-১১ এর অধিক্ষেত্রাধীন।
বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, আয়কর আইনের ১২৪ ধারায় উৎসে কর কেটে নির্ধারিত কোডের অনুকূলে জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হলো। নির্ধারিত কোডে জমা করতে ব্যর্থ হলে আয়কর আইনের ১৪৩ ধারা অনুযায়ী আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আয়কর আইন অনুযায়ী, ফি, সেবা চার্জ বা পারিশ্রমিক বা প্রকৃতির রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে কাজের বিনিময়ে বিদেশ থেতে পাঠানো অর্থ কোনো ব্যক্তির হিসাবে পরিশোধ বা জমা প্রদানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রাপকের হিসাবে অর্থ পরিশোধ বা জমা প্রদানকালে উক্ত পরিশোধিত বা জমাকৃত অর্থের উপর ১০ শতাংশ হারে কর কর্তন করবেন। এরমধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশে প্রদত্ত কোনো সেবা, কোনো বিদেশি ব্যক্তিকে পরিষেবা প্রদান এবং বিজ্ঞাপন বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোনো অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহারের অনুমতি প্রদান।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান স্থানীয় কর্মী নিলে খরচ বেশি হয়। অনেক সময় চাহিদামতো এত কর্মীও তারা পাননা। তারা তখন বাইরে থেকে নির্দিষ্ট কাজটি করিয়ে নেন। এতে ওই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির যেমন অর্থ সাশ্রয় হয়, তেমনি যেকোনো স্থান থেকে কাজটি করে ওই ব্যক্তিও আয় করেন। এজন্য বাসা কিংবা যেকোনো স্থানে বসেই কাজ করা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন হবে দক্ষতা, বিদ্যুৎ আর ইন্টারনেট-সংযোগ।
অনলাইন শ্রমবাজার বা ফ্রিল্যান্সিং খাতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। সারাবিশ্বের এ শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অংশ প্রায় ১৬ শতাংশ। তবে এ খাতের কর্মী হিসাবে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও আয়ের দিক থেকে ৮ম। বিশ্বে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাজার দেড় ট্রিলিয়ন ডলার। তাই এই বাজার আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।