বর্তমানে স্মার্টফোনগুলোকে ছোটখাটো একটা কম্পিউটারই বলা চলে। তবে ভেবে দেখুন, আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের ফোনগুলোর কথা…কেমন ছিল? যদিও সেসবের মাঝে নোকিয়ার বেশ কিছু মোবাইল ফোন পেয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা।
প্রথমেই শুরু করা যাক নোকিয়া ৩২১০ সেলফোন দিয়ে। এই মডেলটি বের হয় ১৯৯৯ সালে। এটি ছিল নোকিয়ার প্রথম বিগহিট সেলফোন। যে বৈশিষ্ট্য সেইসময়কার অন্যসব মোবাইল থেকে এটিকে আকর্ষণীয় করেছিল তা হলো, এতে থাকা বিখ্যাত ‘স্নেইক’ গেম। সেই সময়ে অন্যসব ব্রান্ডের মোবাইল ছিল খুব একঘেয়ে। তবে এই মোবাইলটির দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় এবং গেম থাকার কারণে তা খুব সহজেই গ্রাহকদের কাছে হয়ে উঠেছিল আকর্ষণীয়। মুঠোফোনও যে বিনোদনের মাধ্যম হবার ক্ষমতা রাখে, নোকিয়া ৩২১০ বাজারে থাকা আর সব সেলফোনের সাথে প্রতিযোগিতা করে তা দেখিয়ে দেয়। তাছাড়া সেই সময়ে নোকিয়ার এই সেট বিক্রি হয়েছিলো ১৬ কোটিরও বেশি ইউনিট।
এবারে আসা যাক, নোকিয়া ৩৩১০ মোবাইল ফোন সম্পর্কে। ২০০০ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই সেটটি প্রথম বাজারে আসে। প্রায় ২২ বছর পরেও এই সেলফোনটি এখনো সমানভাবে বেশ পরিচিত। নোকিয়ার এই সেটটি জনপ্রিয় ছিল এর টেকসই গঠন এবং ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য। এছাড়া এই সেটের সার্বিক পরীক্ষায়, ১০০০ ফুট উপর থেকে ফেলার পরেও দেখা গিয়েছে যে, সেলফোনটি দিব্যি চলছে। তখন এই সেটের ১৩ কোটি ৬০ লাখের বেশি পিস বিক্রি হয়েছিল।
২০০০ সালে রিলিজ হওয়া নোকিয়া ৯২১০ কমিউনিকেটর ফোনটিকে বলা হতো বিজনেস ক্লাস স্মার্টফোন। এর ভেতরের অংশে কিবোর্ড থাকায় এটি দেখতে ছিল অনেকটা মিনি ল্যাপটপের মতো। এটি দিয়ে ফ্যাক্সও আদান প্রদান করা যেতো। এতে ছিল দুইটি ডিসপ্লে। নোকিয়ার এটিই প্রথম সেল ফোন যাতে মেমরি কার্ড ব্যবহার করা যেত।
২০০৩ সালের স্মার্টফোন বলা হয় নোকিয়া ৬৬০০ -কে। তরুণ-তরুণীদের অন্যতম আকাঙ্ক্ষিত সেল ফোনে পরিণত হয়েছিল এটি। কারণ সেসময়ের অন্যান্য ফোনের তুলনায় এই মডেলটির স্ক্রিন ছিল বড়…সেই সাথে ছিল ক্যামেরাও, যা দিয়ে ছবি তোলাসহ পরিষ্কার ভিডিও ধারণ করা যেত। এছাড়াও ছিলো ব্লুটুথ, ৬এমবি ইন্টারনাল স্টোরেজ, মেমরি কার্ড এবং থার্ড পার্টি এপ্লিকেশনও ডাউনলোড করা যেত।
নোকিয়া এনগেইজ বিশ্বের প্রথম স্মার্টফোন যেটি দেখতে ছিল পোর্টেবল গেমিং কনসোলের মতো। এর দুই দিকে থাকা স্লাইডে ইয়ার পিস ও মাইক্রোফোন বসানো ছিল। ‘সিম্বিয়ান ওএস’ চালিত ফোনটি প্রথম বাজারে আসে ২০০৩ সালে। তবে গেমিং ছাড়া এই সেটটি অন্য কোনো সেগমেন্টে ভালো করতে পারেনি বলে খুব একটা সফল হয়নি। তারপরেও ফোনটি এর অনবদ্য ডিজাইনের জন্য ছিল বেশ আলোচনায়।
২০০৩ সালে নোকিয়া ১১০০ এবং ২০০৫ সালে নোকিয়া ১১১০ মডেলটি বের হয়। নোকিয়ার এই দুটো মোবাইল সেটই প্রায় ২৫ কোটি পিস বিক্রি হয়েছিল পুরো বিশ্বে। এই সেল ফোনগুলোর না ছিল কোনো ক্যামেরা, ছিল না কোনো কালার স্ক্রিনও। মূলত নোকিয়া, এই ফোন দুটো দিয়ে টার্গেট করেছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। পৃথিবীতে এমন প্রচুর মানুষ আছে যাদের আইফোনের প্রয়োজন না থাকলেও, একটি মুঠোফোনের প্রয়োজন থাকে অসীম! যার মাধ্যমে যোগাযোগটা অন্ততপক্ষে রক্ষা করা যায়। তাদের জন্যই মূলত এই ধরনের মোবাইল সেট। ফোনগুলোতে ছিল ফ্ল্যাশলাইট, কম্পোজার, ক্যালকুলেটরসহ নানান ফিচার। ২০০৯ সালে Nokia 1100 এর প্রোডাকশন বন্ধ করে দেয়া হয়।
নোকিয়া ৭৬০০ ফোনটি তার অনবদ্য ডিজাইনের জন্য যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছিল। এই ফোনে মাঝখানে স্ক্রিন ও দুই দিকে কিপ্যাড ছিল। ২০০৪ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে ফোনটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল। এর ওজন ছিল মাত্র ৮৪ গ্ৰাম। এতে ০.৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ছিল। তবে লঞ্চের কিছু সময় পর ৫০ এমবি স্টোরেজযুক্ত এই ফোনটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
২০০৫ সালে কারোর কাছে ক্যামকর্ডার থাকা অনেক বিশাল একটি ব্যাপার ছিল, অথচ সেই সময় নোকিয়া অত্যন্ত অ্যাডভান্স নোকিয়া এন৯০ সেলফোন লঞ্চ করেছিল, যার স্ক্রিন পুরোপুরি ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরানো যেতো। এতে কার্ল জেইসের (Carl Zeiss) তৈরি করা 2 মেগাপিক্সেল ক্যামেরা লেন্স যোগ করা হয়েছিল। এই ফোনে অটোফোকাস ফিচার ও একটি এলইডি ফ্ল্যাশলাইট দেয়া হয়েছিল, যা তখনকার সময়ে ছিলও একদম নতুন টেকনোলজি।
এছাড়া ছিল নোকিয়া ৭২৮০ মডেলটি। যাকে লিপস্টিক ফোন হিসেবেই ডাকা হত। এই সেল ফোনটি রিলিজ করা হয় ২০০৫ সালে। কোনো কিবোর্ড ব্যবহৃত না হলেও এতে ছিল একটি স্পিনার, যার মাধ্যমে নাম্বার ডায়াল করা যেত।