অ্যান্টিসেমিটিজম বা ইহুদি বিদ্বেষ বিতর্কে এক্স থেকে বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিচ্ছে একের পর এক বড় ব্র্যান্ড। প্লাটফর্মটির মালিক ইলোন মাস্কের মন্তব্যের পাশাপাশি নাৎসীপন্থী পোস্টে পাশে বিজ্ঞাপন দেখানোকে কেন্দ্র করে শুরু হয় এ করপোরেট গণবয়কট।
শুরুতে এক্সের বিরুদ্ধে সরব হয় আইবিএম। এরপর সংস্থাটিকে অনুসরণ করে অ্যাপল, ডিজনি, কমকাস্ট, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি, ইউরোপীয় কমিশন, টিভি নেটওয়ার্ক প্যারামাউন্ট ও মুভি স্টুডিও লায়নসগেট।
মূলত এক্সের মালিক ইলোন মাস্ক ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বিষয়ে একমত পোষণ করার পর এই ঘটনা ঘটছে। এছাড়া নাৎসি-পন্থী পোস্টও বিজ্ঞাপন প্রভাব ফেলেছে।
এক্সের একজন মুখপাত্র বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে ‘এই ধরনের সামগ্রীর পাশে’ ব্র্যান্ডগুলোকে রাখে না এক্স। বরং প্ল্যাটফর্মটি ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিবেদিত।
এর আগে বুধবার ‘ইহুদিবিরোধী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ সম্পর্কিত একটি পোস্টে মাস্ক লেখেন, ‘প্রকৃত সত্য’। তবে নিজেকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী নয়’ বলে দাবি করেন টেসলা ও স্পেসএক্সের উদ্যোক্তা। বলেন, তার মন্তব্যগুলো ঢালাওভাবে সব ইহুদিদের নিয়ে নয়। বরং অ্যান্টি-ডিফেমেশন লীগ বা এডিএল ও অন্য কিছুকে গোষ্ঠীকে উল্লেখ করেছেন।
মাস্কের পোস্টের নিন্দা করেছে হোয়াইট হাউস। মুখপাত্র অ্যান্ড্রু বেটস বলেছেন, আমরা ইহুদিবিদ্বেষী ও বর্ণবাদের এই ঘৃণ্য প্রচারের তীব্র নিন্দা জানাই।
তবে বিরল এক পোস্টে গতকাল মাস্কের প্রশংসা করেছে এডিএল। কারণ তিনি বলেছিলেন, এক্সে ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি’-এর স্লোগানের প্রচারকে স্থগিত করা হতে পারে।
এদিকে এক্সের প্রধান নির্বাহী লিন্ডা ইয়াকারিনো গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, অ্যান্টিসেমিটিজম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অত্যন্ত স্পষ্ট। বিশ্বের কোথাও এর কোনো স্থান নেই।
মূলত বামপন্থী গ্রুপ মিডিয়া ম্যাটারসের একটি তদন্তের পর এক্সের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। তারা জানায় যে হিটলারের উদ্ধৃতি, নাৎসিদের প্রশংসা ও হলোকাস্ট অস্বীকারের পোস্টের পাশে কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার আইবিএম বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেয়। তারা জানান, এক্সে নাৎসি বিষয়বস্তুর সঙ্গে তাদের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
তবে এক্স দাবি করেছে যে অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের তুলনায় তারা শক্তিশালী ব্র্যান্ড নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করছে। মাস্কের মালিকানায় আসার পর নিরাপত্তা টিমে বড় ধরনের কাটছাঁট হলেও প্ল্যাটফর্মে ঘৃণাসূচক বক্তব্য ও চরমপন্থা কমেছে। যদি কিছু কিছু সংস্থা বলছে, মাস্কের নেতৃত্বে চরমপন্থা ও ঘৃণাসূচক বক্তব্য বেড়েছে।
চার হাজার ৪০০ কোটি ডলারে টুইটার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর একাধিক বদল আনেন মাস্ক। যার প্রভাব পড়ে মাইক্রো ব্লগিং সাইটটির আয়েও। তবে এক্সের আয় বর্তমানে কতটা বিজ্ঞাপন নির্ভর তা স্পষ্ট নয়। কারণ এখন তারা ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে না। তবে মাস্ক নিয়ন্ত্রণে নেয়ার আগে বিজ্ঞাপন থেকে আসত টুইটারের আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ। বর্তমান বিজ্ঞাপন নির্ভরতা কমিয়ে সাবস্ক্রিপশন, ব্লু টিক ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে আয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।