যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য বিরোধের মধ্যেও ২০২৩ সালে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোট আয় ৯ শতাংশ বেড়ে ৭০ হাজার কোটি ইয়েন (৯ হাজার ৮৫০ কোটি ডলার) ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে চীনের প্রযুুক্তি কোম্পানিটি।
২০২২ সালে হুয়াওয়ের আয় ছিল ৬৪ হাজার ২৩০ কোটি ইয়েন। তবে ২০১৯ সালের ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার আয়ের তুলনায় এটি কম। আয় বৃদ্ধির আশা বা পূর্বাভাসের মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। ২০১৯ সালে জটিল বৈশ্বিক প্রযুক্তি ও উন্নত চিপ ব্যবহারে হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এত কিছুর পরও আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার মাধ্যমে কোম্পানিটি পুনরায় শক্তভাবে বাজারে ফিরে আসার সংকেত দিচ্ছে।
বছর শেষে কর্মীদের উদ্দেশে দেয়া বার্তায় হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান কেন হু বলেন, ‘বিভিন্ন উত্থান-পতনের মধ্যেও আমাদের সঙ্গে থাকায় কর্মীসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা মোকাবেলায় একত্রে কাজ করার জন্য হুয়াওয়ে টিমের সব সদস্যকে ধন্যবাদ।’
তিনি আরো বলেন, ‘পুরো বছরজুড়ে আমরা কঠিন সময় পার করেছি। পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আমরা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছি।’ কর্মীদের পাঠানো বার্তায় হু জানান, হুয়াওয়ের ডিভাইস বিজনেস সেগমেন্ট ২০২৩ সালে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পারফর্ম করেছে।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের আগস্টে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা ছাড়াই মেট ৬০ প্রো স্মার্টফোন উন্মোচন করে হুয়াওয়ে। মূলত এ ডিভাইসই কোম্পানির ব্যবসা ঘুরিয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। এটি বিশেষজ্ঞদের হতবাক করে দিয়েছিল। মূলত চীন যেন উন্নত চিপ ব্যবহার করতে না পারে সেজন্যই বিভিন্নভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তার পরও হুয়াওয়ে উন্নত চিপের ডিভাইস বাজারজাত করেছে।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের গ্রাহকরা হুয়াওয়ের ডিভাইসটি সাদরে গ্রহণ করেছে এবং এর মাধ্যমে দেশটিতে অ্যাপলের বাজার হিস্যাতেও প্রভাব ফেলে কোম্পানিটি। চীনেই ডিভাইসটির চাহিদা ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
বছরওয়ারি হিসেবে বিদায়ী বছরের অক্টোবরে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রি ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। কাউন্টারপয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, এর মাধ্যমে একই সময়ে চীনের স্মার্টফোন বাজার ১১ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৪ সালের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে হুয়াওয়ে জানায়, নতুন বছরে ব্যবসা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে কোম্পানির ডিভাইস বিজনেস খাতে গুরুত্ব দেয়া হবে। এ বিষয়ে হু বলেন, ‘প্রযুক্তি খাতের বিধিনিষেধ বৈশ্বিক পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো বিষয়ও রয়েছে।’
অন্যদিকে দীর্ঘদিন থেকে মার্কিন নীতিনির্ধারকরা দাবি করছেন, হুয়াওয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। এছাড়া চীন সরকার কোম্পানিটির সরঞ্জাম ব্যবহার করে গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তবে হুয়াওয়ে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে আসছে।
নিজস্ব হাইসিলিকন চিপ বিভাগের তৈরি কিরিন প্রসেসর ব্যবহার করে স্মার্টফোন উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়েও আশা প্রকাশ করেছে হুয়াওয়ে। মেট ৬০ প্রোতে ব্যবহৃত প্রসেসর চিহ্নিত করে নভেম্বরের প্রতিবেদনে এমনটি অনুমান করেছেন কাউন্টারপয়েন্টের বিশ্লেষকরা। কোম্পানিটি নোভার অধীনে নতুন মিডরেঞ্জ লাইনআপের সেলফোনও উন্মোচন করেছে। এর দাম নাগালের মধ্যে থাকায় বিশ্লেষকদের মতে এটিও গ্রাহক আকৃষ্টে সক্ষম হবে।