আমি নিশা আমি আমার সার্চ ইংলিশে যুক্ত হবার পর আমার যে উন্নতি আর সার্চ ইংলিশ গ্রুপে যুক্ত হবার আগে ইংলিশ নিয়ে আমার জীবনের যে কষ্ট সেটা আমি শেয়ার করতে চাই।
আমি নিশা জাহান। আমি বগুড়াতে থাকি। আমি বিবাহিত। আমার দুটি সন্তান আছে। অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়ে যায়। তখন আমি অনেক ছোট। আমি পড়ালেখায় মোটামুটি ভালই ছিলাম। কিন্তু বিয়ে হবার কারণে আমি পড়ালেখাটা আর চালিয়ে যেতে পারি নি।
বিয়ের পরে আমার ক্লাসমেটদের দেখে, আমার বন্ধু-বান্ধবীদের দেখে, তারা স্কুলে যাচ্ছে, এটাতে আমার খুবই আফসোস হতো। আমার খুবই আফসোস হতো যে আমি আমার পড়ালেখাটা শেষ করতে পারিনি। কিন্তু আমার একটা ইচ্ছা ছিল যে আমি জীবনে কিছু করতে চাই। আমি বড় হতে চাই। আমি যখন দেখতাম যে আমার বয়সের মেয়েরা ছেলেরা কলেজে যায়, তারা একটা চাকরি করে ভাল একটা পর্যায়ে গিয়েছে। এগুলো দেখে আমি ভীষণ হতাশ হয়ে পড়তাম। আমার কষ্ট লাগত। আমার একটা ননদের মেয়ে ছিল। সে আমার সমবয়সী এবং একই ক্লাসে পড়ত। তো এই ব্যাপারটা আমাকে আরো বেশি কষ্ট দিত। ও সবসময়ে আমার কাছে থাকত। তার মুখ থেকে তার স্কুলের কথাগুলো শুনতাম। এগুলো মূলত আমাকে অনেক কষ্ট দিত। আমি অনেক হতাশ ছিলাম সেই সময়ে।
আর একটা চিন্তা সবসময়ে আমাকে তাড়া করে বেড়াত যে কিভাবে আমি নিজে কিছু করতে পারব। আমি কিছু করতে চাই। তো আমি কম্পিউটারে মোটামুটি কাজ জানি। আমি মূলত ফ্রিল্যান্সিং করতাম। এসইও সহ টুকটাক কাজ আমি অনেক ভাল জানতাম। কিন্তু ইংরেজিতে দূর্বলতার কারণে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং করতে গিয়ে আমাকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ইংরেজিতে দূর্বলতার কারণে আমি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে এতটা ভাল করতে পারিনি। দেখা যেত আমার কাজ নামানোর জন্যে অন্যের কাছে যেতে হতো। আমার একটা ছোট খালাতো ভাই ছিল। বায়ার ইন্টারভিউতে আমাকে কোন প্রশ্ন করলে সেটার উত্তর দেবার জন্যে তার কাছে আমাকে যেতে হতো। তো একদিন যখন আমি তার কাছে গেলাম সে আমাকে একরকম বলেই ফেলল যে আপনি পারেন না জানেন না ইংলিশ তাহলে আপনি কেন ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করতে এসেছেন। তার এই কথাটায় আমি মনে খুবই আঘাত পেয়েছিলাম। তারপরে আমি আর কখনো তার কাছে যাইনি। কারণ সে অনেক ছোট কিন্তু সে আমাকে এভাবে কথা বলে। এটা আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।
তারপর থেকে সবসময়ে আমি ভাবতে থাকি যে কিভাবে আমি ইংরেজি ভাষা শিখতে পারব। এর মাঝে আমার দ্বিতীয় সন্তান আমার ছেলে তনয়ের জন্ম হয়। ও হবার পরে আমাদের এখানে আমি একদিন ফেসবুকে অনলাইনে একটা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখি। আমি সেখানে কোর্স করার জন্যে যাই। আমার ধারণা ছিল যে এই কোর্সটা সম্পন্ন করতে পারলে মোটামুটি আমি হয়তো ভাল করতে পারব। কিন্তু যখন আমি ওই কোর্সটা করতে যাই। তখন ওরা আমাকে একটা ফর্ম পূরণ করতে দেয়। আমি যে প্রশিক্ষণটা নেব সেটার নাম ছিল অ্যাডমিন সাপোর্ট। তো আমি যখন ওই কোর্সের নামটা লিখতে গেলাম “Admin Support”। আমি “Admin” শব্দটা লিখতে পেরেছিলাম কিন্তু “Support” শব্দটা আমি ঠিক মতো লিখতে পারি নি। তখন আমার পাশে ব্যবস্থাপনায় পড়াশুনা করছেন এমন এক বড় আপু ছিলেন। উনি আমার লেখার এই অবস্থা দেখেই ওটা বলে দিলেন। এরপরে আমি ওই শব্দটা লিখতে পারি। তো এই ব্যাপারটা আমাকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলেছিল যে সে আমার ব্যাপারে কি ভাববে। যে মেয়েটা সামান্য “Support” এই শব্দটাও ঠিকমতো বানান করে লিখতে পারে না সে আবার ট্রেনিং নিচ্ছে। কারণ এই সেক্টরে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা ছাড়া কখনোই কেউ ভাল করতে পারবে না। কারণ আপনাকে নিয়মিত বিদেশীদের সাথে কথা বলতে হবে। ভালভাবে কথা না বলতে পারলে আপনি কাজ পাবেন না। আপনি যতই ভাল কাজ জানেন। আপনি কোন ভাবেই ভাল কিছু করতে পারবেন না। এরকম একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে আমি পড়লাম।
তারপরে ফর্মের আরেকটা অংশে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করতে হবে। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে আমি মাত্র অষ্টম শ্রেণী পাস। এটাই লিখেছি।তো এটাও আমাকে খুব লজ্জায় ফেলেছিল। সেদিন থেকে ইংরেজি শেখার জন্যে আমি পাগল হয়ে যাই। সেদিনই আমি সিদ্ধান্ত নেই যে আমি আবার স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করব। আমি ওখান থেকে আসার পরে স্কুলে ভর্তি হই। তারপরে আমি ইংরেজি শেখার জন্যে বেশ কয়েকটা কোচিং সেন্টারে যোগাযোগ করি। কিন্তু আমার সেখানে যেতে মন টানেনি।
তো যখন আমি সেই অ্যাডমিন সাপোর্টের ট্রেনিং নিতে যাই প্রতিদিন ক্লাস করতে যাই আমাদের শিক্ষক একদিন বললেন যে তোমাদের যদি ইংরেজিতে সমস্যা থাকে তাহলে সার্চ ইংলিশ নামে একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে যেখানে তোমরা যুক্ত হতে পার। ওখানে কেউ তোমাদের ভুল ধরবে না, কেউ তোমাদের ভুল দেখে হাসাহাসি করবে না, লজ্জায় ফেলবে না, তোমরা তিনমাসেই তোমাদের ইংরেজির দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে। এভাবেই আমি সার্চ ইংলিশ গ্রুপের নামটা জানতে পারি।
তারপরে বাসায় এসে আমি সার্চ ইংলিশ গ্রুপের সাথে যুক্ত হই। তখন ছিল খুব সম্ভবত ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারি মাস। তখন আমি রাতদিন সবসময়ে গ্রুপের পোস্ট পড়ে কমেন্ট লেখার চেষ্টা করতাম। তো দুই মাসের মধ্যেই আমি ইংরেজি লেখাতে ভাল উন্নতি করতে সক্ষম হই। তো সে সময়ে Razib Ahmed স্যারকে উদ্দেশ্য করে একটা পোস্ট লেখি। ওই পোস্টে আমি বলি যে স্যার আমি শুধু এতটুকুই লেখাপড়া করেছি। আমি কিছু করতে চাই আমাকে সাহায্য করুন। তো সেই পোস্টটা স্যারের নজরে পড়েনি। তারপরে আমি আবার হতাশ হয়ে যাই।
সার্চ ইংলিশ গ্রুপ থেকেই আমি ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ (ডি এস বি) গ্রুপে যুক্ত হই। তো হঠাৎ একদিন আমি দেখতে পেলাম যে ডি এস বি গ্রুপে আড্ডা পোস্ট হচ্ছে। তো পরের দিন আমি আ্ড্ডা পোস্টে যোগ দেই। আর আমি এই আড্ডা পোস্টগুলো খুবই উপভোগ করতে থাকি। ঠিক পরে দিন ঐ আড্ডা পোস্টে যুক্ত হবার জন্যে আমি আগের দিনের সব কাজকর্ম সবকিছু শেষ করে একদম প্রস্তুত হয়ে বসে থাকতাম যে আমি আড্ডা পোস্টে যুক্ত হব। ধীরে ধীরে আ্ড্ডা পোস্টে আড্ডা দিয়ে অনেকের সাথে পরিচিত হলাম। তো আমি লক্ষ্য করলাম যে রাজিব স্যার ডি এস বি গ্রুপে লেখার জন্যে একটা টীম গঠন করতে শুরু করেছেন। তো আমি স্যারকে বললাম যে স্যার আমিও লিখতে চাই। আমিও ওই টীমের ১০ জনের মধ্যে একজন হতে চাই।
তো স্যার বলল, “আপু তাহলে শুরু করেন।” তো স্যারের সাথে যখন আমি কথা বলি। স্যার আমার সাথে সেদিন ২২ সেকেন্ড কথা বলেছিল আমার মনে আছে। এটা আমাকে খুবই হতাশ করেছিল। তো আমি স্যারকে আবার নক দিলাম। কারণ আমি স্যারকে সে সময়ে আমি যেটা চাইছিলাম সেটা বলতে পারিনি। তাই আমি স্যারকে মেসেঞ্জারে নক দেই। আমি স্যারকে বলি যে স্যার আমি ভাল কিছু করতে চাই। আমি অনু সরকার আপুর মতো হতে চাই। তো স্যার আমাকে তখন বললেন, “আচ্ছা আপু, আপনি যদি অনু সরকার আপুর মতোন হতে চান। তাহলে আপনি আমাদের ওয়ার্কশপে যুক্ত হন।” (অনু সরকার সার্চ ইংলিশ গ্রুপের খুবই সফল একজন ছাত্রী এবং গ্রুপে খুবই পরিচিত।)
তো আমি পরদিন স্যারের থেকে জেনে নিলাম কখন ওয়ার্কশপ হবে এবং আমি কিভাবে যুক্ত হতে পারব। স্যার বললেন, “আগে এক দিন করেন। যদি আপনার ভাল লাগে তাহলে পরের দিন করেন। কোন সমস্যা নেই।” তো আমি সার্চ ইংলিশ ওয়ার্কশপে যোগ দিলাম। তো প্রথমদিন ওয়ার্কশপে আমি সবার কথা শুনি। এটা আমাকে খুবই আকৃষ্ট করে এবং মনের মধ্যে একটা ইচ্ছা তৈরি করে। একটা শক্তি পাই যে হ্যা, আমি যদি এখানে নিয়মিত থাকি যদি চেষ্টা করি তাহলে হয়তো আমার ক্যারিয়ারে আমি ভাল কিছু করতে পারব। এটা আমার মনের মধ্যে একটা বিশ্বাস তৈরি করে কারণ আমি অনু সরকার আপুর কথা শুনি। জান্নাত কাদের চৌধুরি আপুর কথা শুনি। আরো অনেক আপু আছে তাদের কথাগুলো শুনি। এটা আমার মনের মধ্যে একটা বিশ্বাস তৈরি করে দেয়।
এভাবে চারদিন আমি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করি। প্রথম তিনদিন ওয়ার্কশপে আমি কিছুই করিনি। শুধু ওদের কথোপকথন সবকিছু আমি শুনেছি। চতুর্থ দিনের মাথায় আমি ইংরেজিতে কনভার্সেশন করি। স্যার আমাকে তার আগে জিজ্ঞাসা করেছিল, “আপনি কি আজকে ইংরেজিতে কথা বলতে চান?” তো আমি বললাম “ওকে স্যার।” তো সাহস করে আমি কথা বলার জন্যে আমি মাইক্রোফোনটা নেই। আমি সেই ওয়ার্কশপে এক ঘন্টার মতো কথা বলেছিলাম। ওটা ছিল আমার জীবনের প্রথম ইংরেজিতে কথা বলা। কথা বলতে গিয়ে আমি অস্বস্তি অনুভব করতে থাকি।
তখন আমি বাংলায় বলি যে আমি অনেক অস্বস্তি অনুভব করছি। তখন স্যার আমাকে সাহস দিয়ে বলেন, “আপু কোন সমস্যা নেই আপনি অনেক ভাল করছেন। কারণ অনু সরকার আপু প্রথম যেদিন ওয়ার্কশপে কথা বলেন সেদিন তিনিও আপনার মতো একটুও কথা বলতে পারেনি। সেই তুলনায় আপনি অনেক ভাল করছেন।“ এ কথা শোনার পর আমি অনেক উৎসাহ পাই। আর তখন আমার পার্টনার হিসেবে ছিল ফারজানা তামান্না আপু। উনি পুরো ব্যাপারটা খুব সুন্দর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। আমি যা বলেছিলাম সেটা উনি বুঝতে পেরেছিলেন এবং উনি আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন। তো ধীরে ধীরে এভাবে আমার জার্নিটা শুরু হয়।
আমি গত বছরের ১০ মে সার্চ ইংলিশের ওয়ার্কশপে যুক্ত হই। আর এই মে মাসের ১০ তারিখে আমার ১ বছর হবে। আর ওয়ার্কশপে যুক্ত হবার পরে আমার প্রথমদিকে অনেক কষ্ট করতে হয়। কারণ প্রথমদিকে আমার স্বামী জানত না যে আমি ফেসবুকে কি করি। সবসময়ে ফেসবুকে থাকাটা একটা দৃষ্টিকটু ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল তার কাছে। যখন সে প্রশ্ন করল যে তুমি এতক্ষণ ফেসবুকে কি কর? তো আমি ওকে বলে বোঝাতে পারি নি। তো প্রথমদিকে আমাদের একটু ঝামেলা হয় । খুব কঠিন একটা পরিস্থিতি ছিল সে সময়ে। কারণ সে সময়ে আমার ছেলেটা অনেক ছোট। প্রথম দিকে আমার পরিবার এবং আমার স্বামীকে বোঝাই। তো পরবর্তীতে সে বুঝতে পারে যে আমি কি করছি এবং কি করতে চাই। আমি তাকে সবকিছু খুলে বলি। তারপর থেকে আমার পথচলাটা শুরু হয়।
স্যার আমাকে সার্চ ইংলিশের রিডিং সিলেবাসগুলো পড়তে বলে। স্যার আমাকে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত যতগুলো English For Today বই আছে তার প্রতিটা দশবার করে পড়তে বলেন। তো আমি সাধারণত আমার মায়ের সাথে থাকি কিন্তু পরিবারের সব কাজই আমাকে করতে হয়। রান্নাবান্না, ঘর পরিস্কার, আমার ছোট বাচ্চাটা নিয়ে সব কাজ আমাকে করতে হতো। দেখা যেত যে আমি খুবই কম সময় পেতাম। আমি এভাবে কাজ করতাম। আমার ছোট বাচ্চাটা যখন কান্না করত তখন তখন এক হাতে ওকে নিয়ে থাকতাম আর এক হাতে আমি বই নিয়ে পড়তাম।
আমি এক হাতে রান্না করতাম আর এক হাতে পড়তাম। যতটুকু সময় আমি পড়তে পারতাম না ততটুকু সময় আমি বিবিসিতে ইংরেজি খবর শুনতাম। কারণ স্যার বলেছিলেন যে আপু আপনি সারাদিন বাসায় বি বি সি নিউজ ছেড়ে রাখবেন আর সেটা সব সময়ে শুনবেন। তো আমি এভাবে আমার কাজ চালিয়ে নিচ্ছিলাম।
বাবু যদি কান্না করত তখন আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তখন এক হাতে আমি ওকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম আর এক হাতে বই নিয়ে পড়তাম। এভাবে আমার যাত্রাটা শুরু হয়। আমি প্রতিটা বই দশবার পড়ে শেষ করি।
তারপর আমি সার্চ ইংলিশ ওয়েবসাইটের রিডিং সেকশনের ক্যাটেগরি ০, ক্যাটেগরি ১, রিডিং ম্যাটেরিয়ালগুলো দশবার করে পড়ে শেষ করি। এগুলো আমার কাছে অতটা কঠিন মনে হয় নি। আমি মোটামুটি প্রায় সবকিছুই ভালভাবে বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু ক্যাটেগরি ২ টা ছিল অনেক কঠিন। তো প্রথমবার স্যার যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করে। তখন আমি স্যারকে বলি। “স্যার এটা আমার কাছে একটু কঠিন লাগছে।” তখন স্যার বলছে “ঠিক আছে আপু সমস্যা নেই।” দেখা যেত যে, আমি সারাদিন সেভাবে পড়তে পারতাম না কারণ বিদ্যুৎ থাকত না। তখন সারাক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে পড়াটা সমস্যা হয়ে যেত।
এই জন্যে আমি সব ক্যাটেগরির রিডিং ম্যাটেরিয়াল গুলো প্রিন্ট করে নিয়ে আসি পড়ার জন্যে। এতে করে আমার অনেক সুবিধা হয় পড়তে। আর আমি বেশকিছু ইংরেজি ভিডিও, বিবিসি নিউজ, ইংরেজিতে কথা বলার ভিডিও ডাউনলোড করে একটা মেমোরিতে রাখি। যখন আমি কাজ করতাম পড়তে পারতাম না। সে সময়ে আমি ফোনে ওইসব জিনিসগুলো শুনতাম। দেখা যেত আমি কাপড় কাচতে গিয়েছি। সে সময়ে আমি ফোনটা রেখে কানে হেড ফোন দিয়ে কাজ করতাম।
স্যার যখন আমাকে বি বি সি নিউজ শোনার কথা বলে। আমি তখন লক্ষ্য করি যে দশদিন পর থেকে আমি বিবিসি নিউজের ওরা কি বলছে সেটা আমি বুঝতে পারছি। ওরা কোন বিষয়টা নিয়ে কথা বলছে। কি কি বলছে। এটা আমি তখন বুঝতে পারছি।
এটা আমার জন্যে সবচেয়ে আনন্দের একটা ব্যাপার ছিল। খুবই আনন্দের একটা দিন। কারণ সবাই বলত যে হ্যা তারেক বি বি সি নিউজ বোঝে শোনে। কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম না। তো এরকম করে আমি পুরো ক্যাটেগরি শেষ করি। ক্যাটেগরিটা শেষ করার পরে আমি ইংরেজি স্নাতক প্রথম বর্ষের বইপত্র পড়া শুরু করি। বইগুলো অনেক কঠিন ছিল পড়া। কিন্তু আমি পড়তে পারি।
ওটা শেষ করার পরে স্যার আমাকে আবার দ্বিতীয়বারের মতো সব কিছু দশবার করে পড়তে বলে। আমি সেটাও করি। দ্বিতীয়বার আমি যখন সাইলাস মার্নারটা পড়তে যাই। সাইলাস মার্নার বইটা খুবই কঠিন। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন আমি পড়তে যাই। তখন আমার কাছে খুবই সহজ ছিল। মানে আমি মোটামুটি সবকিছুই বুঝতে পারছিলাম।
আসলে ওই বইয়ের মধ্যে কি গল্প আর কি বলছে আর কি বোঝাচ্ছে। এমন কি সে সময়ে ওয়ার্কশপে আমাদের ফাহরিন হান্নান আপু বাইরের আর্টিকেলগুলো অনুবাদ করত। কিন্তু আমি পড়ে বুঝতাম না। অনুবাদ করলে ওটা বুঝতাম। কিন্তু সাইলাস মার্নার ওভাবে পড়ার পর থেকে তারপর থেকে আমি বাইরের আর্টিকেলগুলো পড়তে পারে বুঝতে পারি, অনুবাদ করতে পারি।
আলহামদুলিল্লাহ এখন আল্লাহর ইচ্ছায় স্যারের গাইডেন্স ফলো করার কারণে ইংরেজি নিয়ে আমার মনে যে ভয়টা ছিল সেটা এখন একেবারেই নেই। সার্চ ইংলিশে আমার এক বছর পুরো হয় নি। এই মাসের দশ তারিখে আমার এক বছর হবে।
আমি এখন সবার সামনে কথা বলতে পারি। আমি এই ভয়, লজ্জা, যে আমার ভুল হবে মানুষ হাসবে এটা আর আমার মধ্যে নেই। আর আমার পড়াশুনা শেষ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। যেমন দিনের বেলা অনেক সময়ে আমি পড়তে পারিনি। তখন আমি রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আলো বন্ধ করে বারান্দায় গিয়ে আমার পড়া শেষ করতাম। এভাবে আমি চেষ্টা করেছি আমার অবস্থার উন্নতি করার ।
আমি সার্চ ইংলিশ গ্রুপে দশ হাজার ভিডিও আপলোড করেছি। আমাদের গ্রুপে আহাদ ভাইয়ের পরে প্রথমেই সার্চ ইংলিশে আমি ভিডিও পোস্ট করি। তো সে দিনটাও ছিল আমার জন্যে অনেক আনন্দের একটা দিন কারণ ওই দিনের আগমুহুর্ত পর্যন্ত আমি ইংরেজিতে কখনো ভিডিও পোসট করিনি। আমি ১০০ বারের বেশি চেষ্টা করে ওই ভিডিওটা করেছি। তারপরেও হয় নি। তারপরে আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকবার রিহার্সাল করেছি। আমি আগে একটা স্ক্রিপ্ট লেখে নিয়েছি।
আর এখন আমি ১০ হাজার ভিডিও আপলোড করেছি গ্রুপে। আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন বাইরের আর্টিকেল পড়ে বুঝতে পারি। ইংরেজিতে যে কোন ভিডিও করতে পারি। ইংরেজি সংবাদপত্র পড়তে পারি। অনুবাদ করতে পারি। নির্ভয়ে নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারি। এমনকি আমার মধ্যে এতটুকু আত্মবিশ্বাস আছে যে বাইরের যে কোন লোকের সাথে আমি কোন ভয়ভীতি, অস্বস্তি ছাড়াই কথা বলতে পারব ইনশাল্লাহ। আর এই সবকিছু সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র স্যারের জন্যে। আমি আল্লাহর পরে স্যারের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ যে স্যার আমাকে এই সুযোগটা দিয়েছেন।
সুত্রঃ https://www.facebook.com/groups/digitalskillsbd/permalink/448483809029743