স্মার্টফোন বাজারজাত বা বিক্রিতে প্রথমবারের মতো স্যামসাংকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে অ্যাপল। ২০২৩ সালে এ সাফল্য অর্জন করেছে কুপারটিনোর প্রযুক্তি জায়ান্টটি।
ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনের (আইডিসি) ওয়ার্ল্ডওয়াইড কোয়ার্টারলি মোবাইল ফোন ট্র্যাকার প্রতিবেদনের বরাতে গিজচায়না প্রকাশিত খবরে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সার্বিকভাবে বৈশ্বিক স্মার্টফোন খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। বছরওয়ারি হিসেবে ২০২৩ সালে বিক্রি ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমে ১১৭ কোটি ইউনিটে নেমে এসেছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শিগগিরই এ অবস্থার উন্নতি হবে।
অন্যদিকে আইডিসি প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রাথমিক তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালে অ্যাপল সারা বিশ্বে ২৩ কোটি ৪৬ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে পুরো বাজারের ২০ শতাংশ হিস্যা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে কোম্পানিটি। অন্যদিকে একই সময়ে ২২ কোটি ৬৬ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রির মাধ্যমে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ হিস্যা স্যামসাংয়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল। একই ধরনের তথ্য প্রকাশ করেছে প্রযুক্তি বাজার বিশ্লেষক কোম্পানি ক্যানালিস। কোম্পানিটির তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সাল থেকেই শীর্ষে রয়েছে স্যামসাং। তার আগে শীর্ষে ছিল ফিনিশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ‘নকিয়া’। এমনকি অ্যাপল তখন শীর্ষ পাঁচেও স্থান পায়নি।
গত বছরের শীর্ষ পাঁচে জায়গা পাওয়া বাকি স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলো হলো শাওমি, অপো ও চীনা ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানি ট্রান্সশন। আর তাদের বৈশ্বিক স্মার্টফোন শিপমেন্ট যথাক্রমে ১৪ কোটি ৫৯ লাখ, ১০ কোটি ৩১ লাখ ও ৯ কোটি ৪৯ লাখ ইউনিট। স্মার্টফোন শিল্পে জোরালো প্রতিযোগিতা ও ক্রমাগত বিধিনিষেধের মধ্যে পরিবর্তনটি উল্লেখযোগ্য বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্যামসাংয়ের রেকর্ড ভাঙার পেছনে অ্যাপল নিশ্চিতভাবেই বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা। তবে সামগ্রিক অ্যান্ড্রয়েড ফোন খাতেও বৈচিত্র্য বাড়ছে। বিশেষ করে একসময় বাজারের শীর্ষে থাকা হুয়াওয়ে নতুনভাবে প্রবেশ করছে এবং চীনে নিজেদের পরিচিতি বাড়াচ্ছে। এছাড়া কম দামে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক ডিভাইস বাজারে আনছে ওয়ানপ্লাস, অনার, গুগল ও অন্যান্য ব্র্যান্ড। পাশাপাশি এগুলোয় ফোল্ডেবল সুবিধার পাশাপাশি এআই সক্ষমতা যোগ করার বিষয়টিও বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে কাজ করছে। এক বিবৃতিতে তা উল্লেখ করেছেন আইডিসির ওয়ার্ল্ডওয়াইড মবিলিটি অ্যান্ড কনজিউমার ডিভাইস ট্র্যাকার্স বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ান রেথ।
তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে স্মার্টফোনের বাজার বেশ কৌতূহলোদ্দীপক সময়ের দিকে যাচ্ছে।’ ২০২৩ সালে সামগ্রিকভাবে স্মার্টফোন শিপমেন্টের বাজার কমেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। তবে চতুর্থ প্রান্তিকে বেড়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে চীনের স্মার্টফোন বাজারে অবস্থান তৈরিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অ্যাপলকে। ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে দেশটিতে আইফোন বিক্রি আগের বছরের চেয়ে ১১ শতাংশ কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
চীনের বাজারে বিক্রি বাড়াতে আইফোন ১৫ সিরিজের স্মার্টফোনে ডিসকাউন্টের ঘোষণাও দিয়েছে অ্যাপল, যা কোম্পানির ইতিহাসে একটি বিরল দৃষ্টান্ত। তবে প্রতিকূল এ বাজারে টিকে থাকার লড়াইয়ে মার্কিন টেক জায়ান্ট কোম্পানিটি ইতিবাচক ফল পেতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।