বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ফেসবুক নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান বিতর্কের সমাধানে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটিকে ভেঙে তিনটি পৃথক কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছিলেন সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস হিউজ। বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সহপ্রতিষ্ঠাতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ফেসবুকের বিরুদ্ধে বড় ধরনের একাধিক তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনার জন্য ফেসবুকে মার্ক জাকারবার্গের একক কর্তৃত্বকে দায়ী করা হয়। বিশেষ করে, রাজনৈতিক পরামর্শক এবং তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তথ্য কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী চাপের মুখে পড়ে ফেসবুক। এ ঘটনার পর কয়েকটি দেশের আইন প্রণেতাদের সামনে শুনানিতে অংশ নিতে হয়েছিল মার্ক জাকারবার্গকে।
বিশ্বব্যাপী ২৩০ কোটির বেশি মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে ফেসবুকের। জনপ্রিয় হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রামের পৃথকভাবে ১০০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মের পাশাপাশি ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাকি সেবাগুলোর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগকে একটি অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্ত শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন আইনপ্রণেতারা।
ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর চাপের মুখে রয়েছে ফেসবুক। এর প্লাটফর্মে ঘৃণ্য বক্তব্য ছড়ানো এবং ডাটা শেয়ারিং অনুশীলন নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে ফেসবুক। সোস্যাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠানটির নানা নেতিবাচক দিক নিয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতারা দীর্ঘদিন ধরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। ফেসবুকের মতো বিপুলসংখ্যক গ্রাহকযুক্ত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠনের মতামত দিয়েছেন তারা।
ক্রিস হিউজ ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গের সাবেক কলেজের সহপাঠী। তারা একই রুমে ঘুমাতেন। নিউইয়র্ক টাইমসে তিনি ফেসবুক বিষয়ে তার দীর্ঘ মতামত লিখেছেন। তিনি লেখেন, জাতি হিসেবে আমাদের একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। কাজেই মার্কিন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা কতটুকু ভালো মানসিকতা নিয়ে ব্যবসা করছেন, তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকের তথ্যের নিরাপত্তা। শুধু তা-ই নয়, ফেসবুকে মার্ক জাকারবার্গের ক্ষমতা ও একক আধিপত্যের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
২০১২ সালে ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণ করেছিল ফেসবুক। ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজিং প্লাটফর্মও কিনে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুকের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ তরুণ প্রজন্মের কাছে এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। প্রতিনিয়তই ফেসবুক নিয়ন্ত্রিত সেবাগুলোর ব্যবহারকারী বাড়ছে। ক্রিস হিউজ ফেসবুককে ভেঙে ফেলতে মূলত সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম থেকে ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপকে আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হলে ফেসবুক প্লাটফর্মের চাপ কমবে। গ্রাহক তথ্যের মতো ইস্যুগুলো ব্যবস্থাপনা আরো সহজ হবে। এতে তথ্য কেলেঙ্কারি এড়ানো সম্ভব হবে।
ক্রিস হিউজের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দিতে বলেছে।
বিবৃতিতে ফেসবুকের মুখপাত্র নিক ক্লেগ জানান, সফলতার সঙ্গে দায়িত্ববোধের বিষয়টি গ্রহণ করে ফেসবুক। সফল একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে টুকরো করে দায়িত্বশীলতা চাপিয়ে দিতে পারে না। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায় নেয়ার বিষয়টি অর্জন করতে হবে। ফেসবুকের সিইও হিসেবে মার্ক জাকারবার্গ এ কথাই বলেছেন।
২০০৪ সালে হার্ভার্ডের ডরমিটরিতে মার্ক জাকারবার্গ ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র ঘনিষ্ঠ তিন বন্ধু অ্যাডওয়ার্ডো সেভারিন, ডাস্টিন মস্কোভিজ ও ক্রিস হিউজ মিলে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৭ সালে ফেসবুক ছেড়ে দেন ক্রিস হিউজ। ফেসবুকে তিন বছর কাজ করার জন্য ৫০ লাখ ডলার পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
ক্রিস হিউজ বলেন, ১৫ বছর আগে হার্ভার্ডে থাকতে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এরপর এক দশকের বেশি সময় আমি এর সঙ্গে নেই। কিন্তু ফেসবুক ঘিরে আমার মধ্যে রাগ ও দায়িত্ববোধের অনুভূতি রয়েছে।