দেশে গত এক বছরে প্রায় পৌনে দুই কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী বেড়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০০ জন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ১০০ জনে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে এক কোটি ৭৪ লাখ ৬ হাজার ৮০০ জন।
একই সঙ্গে ব্যবহারকারী বেড়েছে মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম এবং লিংকডইনের মতো পেশাজীবীদের যোগাযোগমাধ্যমেও। তবে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের উপস্থিতি বেশি। এমনকি লিংকডইনেও তরুণ-যুবকদের অংশগ্রহণ বেশি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপনার প্ল্যাটফর্ম নেপোলিয়নক্যাটের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পোল্যান্ডভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিমাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করে থাকে।
নেপোলিয়নক্যাটের তথ্য বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ফেসবকু ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ১০০ জন। যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশেরও বেশি। এরমধ্যে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ব্যবহারকারী ৩ কোটি ১৪ লাখেরও বেশি। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ২০ শতাংশ। আর ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৯ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।
এদিকে, ফেসবুক বেশি ব্যবহার করছেন পুরুষরা। শতাংশের হিসাবে প্রতি ১০০ জন ব্যবহারকারীর মধ্যে ৬৫ জনই পুরুষ। বাকি ৩৫ জন নারী। তবে গত বছরের চেয়ে এবার নারীদের ফেসবুক ব্যবহারের হার বেড়েছে। গত বছর প্রতি ১০০ জন ব্যবহারকারীর মধ্যে ৩২ জন ছিলেন নারী। আর বাকি ৬৮ জনই ছিলেন পুরুষ। সেই হিসাবে পুরুষ ফেসবুক ব্যবহারকারীর হার কিছুটা কমেছে।
গত এক বছরে দেশে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী বেড়েছে ২১ লাখ ৯ হাজার ৩০০ জন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ৪৭ লাখ চার হাজার ১০০ জন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী ছিলেন। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৬৮ লাখ ১৩ হাজার ৪০০।
ইনস্টাগ্রামেও নারীদের চেয়ে পুরুষ ব্যবহারকারী বেশি। বর্তমানে দেশে প্রতি ১০০ জন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর মধ্যে ৬৬ জনই পুরুষ। বাকি ৩১ জন নারী। বয়সভিত্তিক হিসাবে বাংলাদেশের ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের প্রায় ৫৯ শতাংশই ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ, যা সংখ্যার হিসাবে ৪০ লাখের বেশি। ইনস্টাগ্রামের বাকি ৪১ শতাংশ বাংলাদেশি ব্যবহারকারীর মধ্যে ৩০ শতাংশ ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। অর্থাৎ, তরুণ-যুবকদের দখলে ৮৯ শতাংশ ইনস্টাগ্রাম আইডি।
বর্তমানে ফেসবুকের মেসেঞ্জার ব্যবহারকারী ৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৫ হাজার ৮০০ জন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৬ হাজার ৯০০ জন। হিসাব অনুযায়ী মেসেঞ্জার ব্যবহারকারী বেড়েছে এক কোটি ৩০ লাখ ৯৮ হাজার ৯০০ জন।
মেসেঞ্জার ব্যবহারেও এগিয়ে পুরুষরা। দেশে মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৪ শতাংশ নারী। ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের মতো মেসেঞ্জারও বেশি ব্যবহার করছেন ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা। মোট ব্যবহারকারীর ৮০ শতাংশই তরুণ-যুবক।
পেশাজীবীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম লিংকডইনের ব্যবহারও বেড়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে লিংকডইন ব্যবহার করতেন ১৮ লাখ ৫ হাজার মানুষ। বর্তমানে অর্থাৎ, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ৮০ লাখ ১৮ হাজার, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
সাইবার নিরাপত্তা, ইন্টারনেট, সামাজিকমাধ্যমে ব্যবস্থাপনাসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন সুমন আহমেদ। তিনি ফেসবুক ব্যবহারকারী বাড়ার এ হারকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না। তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমে বলেন, ‘এখন সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমমুখী। নিজের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, সংগঠন, সংস্থা সব কাজে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনে এটাকে কাজে লাগানো নিঃসন্দেহে ভালো দিক বলে আমি মনে করি।’
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলাপ করা যেতে পারে। আপনি বলছেন ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ব্যবহারকারী বেশি। তাদের বয়স আদৌও ১৮ হয়েছে কি না, সেটাও প্রশ্ন থেকে যায়। অনেকে তথ্য গোপন করে সামাজিকমাধ্যম ব্যবহার করছেন। তারা এ প্ল্যাটফর্মে ঘৃণা ছড়ানোর কাজটা যে করছেন না, তা কীভাবে আমরা নিশ্চিত হবো। অনেকে নিজেকে লুকিয়ে অন্যের পরিচয়ে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করছেন। তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এ জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করা উচিত।’
ফেসবুকে এখনো পুরুষের চেয়ে নারীদের উপস্থিতি অনেক কম। তবে এক বছরের ব্যবধানে নারী ব্যবহারকারী ২ থেকে ৩ শতাংশ বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউওয়াই ল্যাবের চেয়ারপারসন ফারহানা এ রহমান বলেন, ‘করোনার মধ্য থেকেই নারীদের সামাজিকমাধ্যম ব্যবহার বেড়েছে। অনেকে ই-কমার্সে ঝুঁকছেন। উদ্যোক্তাদের তাদের পণ্যের প্রচার-প্রসারে সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ছে। হয়তো সেজন্যই নারীদের উপস্থিতি বাড়ছে।’