জাপানে নিজেদের প্রথম কারখানা স্থাপন করেছে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি)। প্রতিষ্ঠানটির চলমান বৈশ্বিক সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে সম্প্রতি কারখানাটি চালু করা হয়।
টিএসএমসির বর্তমান চেয়ারম্যান মার্ক লিউ কারখানা স্থাপনে সহায়তার জন্য ইলেকট্রনিক জায়ান্ট সনি এবং অটো-পার্টস নির্মাতা ডেনসোসহ জাপান সরকার, স্থানীয় কমিউনিটি এবং ব্যবসায়িক অংশীদারদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাদের বিরামহীন সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মরিস চ্যাংও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
টিএসএমসি এমন একটি সময়ে জাপানে তাদের সেমিকন্ডাক্টর প্লান্টটি চালু করল যখন টোকিও নিজেও তার চিপ উৎপাদন শিল্প পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
চলতি বছরের শেষদিকে জাপান অ্যাডভান্সড সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের (জেএএসএম) কার্যক্রম শুরুর কথা রয়েছে। অন্যদিকে টিএসএমসিও জাপানে তাদের দ্বিতীয় প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানায়।
আগামী তিন বছরের মধ্যে এটির উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দুই প্লান্টের পেছনে ব্যয় হবে মোট ২ হাজার কোটি ডলার। উভয় কারখানার জন্যই দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের কুমামোটো অঞ্চলকে বেছে নিয়েছে টিএসএমসি।
তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগের জন্য জাপানকে বেছে নেয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। সেমিকন্ডাক্টর কারখানা উদ্বোধনকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। তাইওয়ানের সঙ্গে জাপানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
জাপানে বিনিয়োগের জন্য এরই মধ্যে টিএসএমসিকে ৩০০ কোটি ডলারের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ফুমিও কিশিদার নেতৃত্বাধীন সরকার। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় আরেকটি প্যাকেজের আওতায় ৭০০ কোটি ডলার অর্থায়নের কথা বলা হয়।
সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন খাতে টিএসএমসির বিনিয়োগ অবশ্য শুধু তাইওয়ান ও জাপানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের দ্বিতীয় কারখানা তৈরি করছে। প্রথমবারের মতো ইউরোপেও প্লান্ট তৈরির ঘোষণা দিয়েছে তারা।
চার দশক আগে বিশ্বব্যাপী চিপ উৎপাদন খাতে জাপানের শক্তিশালী অবস্থান ছিল। এ খাতে বিশ্বের মোট উৎপাদনের অর্ধেকই নিয়ন্ত্রণ করত তোশিবা ও এনইসি নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নির্মাতাদের পাশাপাশি টিএসএমসির সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয় তাদের। এতে আগের অবস্থান থেকে ছিটকে পড়তে হয় তাদের। কমে যায় উৎপাদন। এর মধ্যেই কভিডের ধাক্কায় আরো ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাদের।
টিএসএমসি বলছে, জাপানে তাদের দুই কারখানায় উৎপাদন পুরোদমে শুরু হলে দেশটির হাই-টেক খাতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।