প্রযুক্তি-বিশ্বে কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিটকয়েনের উদ্ভাবকের পরিচয় নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। কারণও আছে, আমরা অনেকেই জানি, বিটকয়েনের উদ্ভাবকের নাম সাতোশি নাকামোতো। কিন্তু এটি মূলত বিটকয়েনের উদ্ভাবকের ছদ্মনাম। বিটকয়েনের উদ্ভাবকের আসল পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
আর তাই বিটকয়েন বাজারে আসার দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করেই অস্ট্রেলিয়ার কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও ব্যবসায়ী ক্রেগ স্টিভেন রাইট নিজেকে বিটকয়েনের উদ্ভাবক হিসেবে দাবি করেন। সাতোশি নাকামোতো নিজেরই ছদ্মনাম বলেও জানান তিনি। এর পর থেকেই বিটকয়েনের উদ্ভাবকের আসল পরিচয় নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত।
ক্রেগ স্টিভেন রাইটের বিরুদ্ধে মামলা করে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করা সংস্থা ক্রিপ্টো ওপেন পেটেন্ট অ্যালায়েন্স (সিওপিএ)। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলার রায় হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। রায়ে বিটকয়েনের উদ্ভাবক হিসেবে ক্রেগ স্টিভেন রাইটের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন বিচারক।
২০১৬ সাল থেকে ক্রেগ রাইট নিজেকে বিটকয়েনের উদ্ভাবক হিসেবে দাবি করে আসছিলেন। ক্রিপ্টো ওপেন পেটেন্ট অ্যালায়েন্স তাঁর নথি জালিয়াতির প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করে।
সেখানে বলা হয়েছে, সাতোশি নাকামোতো নামে ২০০৮ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। সেই নিবন্ধের ওপর ভিত্তি করেই পরে বিকেন্দ্রীকৃত ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি চালু হয়। এরপর অনেকেই নিজেকে সাতোশি নাকামোতো বলে দাবি করেছেন। ক্রেগ স্টিভেন রাইট ক্রিপ্টোকারেন্সি-দুনিয়াতে বেশ আলোচিত ব্যক্তি।
বিটকয়েন নিয়ে কাজ করা এনচেইন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন তিনি। নিজেকে প্রকাশ্যে সাতোশি নাকামোতো হিসেবে ঘোষণা দিয়ে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন ক্রেগ স্টিভেন রাইট।
২০১৪ সালে নিউজউইক সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দোরিয়ান নাকামোতো নামের এক ব্যক্তিই আসলে সাতোশি নাকামোতো। তিনিই বিটকয়েনের উদ্ভাবক। তবে দোরিয়ান নিজে বিটকয়েনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এখানেই শেষ নয়, ২০০৮ সালে নিক সাজাবো নামের এক ব্যক্তি স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ও বিট গোল্ড প্রযুক্তির ধারণা প্রকাশ করেন। তাঁর লেখার সঙ্গে বিটকয়েনের প্রাথমিক ধারণা দিতে প্রকাশিত নিবন্ধের ভাষাগত বেশ মিল থাকায় প্রযুক্তি-বিশ্বে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, তিনিই সাতোশি নাকামোতো।
সাতোশি নাকামোতোর আসল পরিচয় জানা না গেলেও প্রযুক্তি-দুনিয়ায় বেশ আলোচিত নামটি। আর তাই পরিচয় জানা না গেলেও ২০২১ সালে হাঙ্গেরিতে বিটকয়েনের উদ্ভাবকের কল্পিত একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি বিটকয়েন নামের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা উন্মুক্ত করা হয়।