ডিভাইসপ্রেমীদের কাছে আইফোন একটি জনপ্রিয় নাম। বিশেষ করে চীনের খরুচে ভোক্তাদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের এ ডিভাইসটি। অথচ এই চীনের বাজারে গত বছর সবচেয়ে বাজে সময় অতিক্রম করেছে অ্যাপল।
চীনা মুদ্রা ইউয়ানের বিপরীতে শক্তিশালী ডলার, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ, এসব কারণেই গত বছর চীনে আইফোন বিক্রি ভালো যায়নি। তবে গত এপ্রিলের তথ্য-উপাত্ত বলছে, এ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অ্যাপল।
ইউয়ানের বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হয়ে ওঠায় প্রান্তিক মুনাফা ধরে রাখতে গত বছর চীনে আইফোনের দাম বাড়াতে বাধ্য হয় অ্যাপল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, তুলনামূলক সাশ্রয়ী আইফোন এক্সআর ফোনের মূল্য হুয়াওয়ে মেট ২০ প্রোর চেয়েও বেড়ে যায়। গত বছরের এ ধাক্কা সামলাতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনা বাজারে হ্যান্ডসেটের পাইকারি দাম কমিয়ে দেয় অ্যাপল।
আইফোনের ওপর চীন বাড়তি কোনো শুল্কারোপ না করলেও বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে চীনা অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বিক্রয় পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে হুয়াওয়ের সিএফও মেং ওয়াংঝুকে কানাডা সরকার আটক করলে চীনে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। তাত্ক্ষণিক প্রভাব পড়ে অ্যাপলের ওপর। সে সময় স্থানীয় কোম্পানির তৈরি স্মার্টফোন ক্রয়ে ভর্তুকি দেয়া শুরু করে চীনা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো; পাশাপাশি আইফোন কিনলে কর্মীকে জরিমানা করার ঘটনাও ঘটেছে।
এসব কিছুর প্রভাবেই ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চীনে ৩০ শতাংশ কম আইফোন সরবরাহ করে অ্যাপল। ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকে চীনে মোট ৯৩ লাখ আইফোন সরবরাহ করেছিল কোম্পানিটি, যা চলতি বছরের একই সময় এসে ৬৫ লাখে ঠেকেছে। ফলাফল হিসেবে চীনে কোম্পানিটির বাজার অংশীদারিত্ব ১০ দশমিক ২ থেকে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নেমেছে।
তবে কোম্পানির জন্য আশার কথা হচ্ছে, সে পরিস্থিতি থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করেছে অ্যাপল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইউবিএসের বিশ্লেষক টিম আরকুরি বলেছেন, চীনে আইফোন বিক্রি হ্রাসের প্রবণতা কিছুটা কমেছে। এপ্রিলে এখানে আইফোন বিক্রি কমেছে ৩ শতাংশ। মার্চে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬১ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
এদিকে গত বছর চীনে আইফোনের পাইকারি দাম হ্রাসের পাশাপাশি গত মাসে খুচরা বাজারে ডিভাইসের দাম ৬ শতাংশ কমানো হয়েছে। অবশ্য চীন সরকার ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১৬ থেকে কমিয়ে ১৩ শতাংশ করার কারণেই খুচরা বাজারে আইফোনের দাম কমেছে।
সবকিছু মিলিয়ে চীনে স্মার্টফোনের সরবরাহ আবার বাড়ছে। গত ১০ মাসের মধ্যে নয় মাসই আইফোনের সরবরাহ কমলেও গত এপ্রিলে ৬ শতাংশ বেড়েছে।