চীনে কার্যক্রম, নারী কর্মীদের প্রতি আচরণ ও করসহ নানা ধরনের বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল। এসব বিতর্ক সৃষ্টির পর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ নিয়েছেন সাবেক প্রধান এরিক শিমিড। সম্প্রতি বিবিসির একটি অনুষ্ঠানে গুগলের বিভিন্ন কার্যক্রমের পক্ষে কথা বলেন তিনি।
৬৪ বছর বয়সী শিমিড এখন গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি আলফাবেট ইনকরপোরেশনের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য। তিনি মনে করেন, চীনে সুযোগ অন্বেষণ করা টেক জায়ান্টটির অধিকার। যদিও চীনে গুগলের কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা কড়া সমালোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে শিমিড বলেন, ‘এ বিশ্ব পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত একটি স্থান। আন্তঃসংযোগ থেকে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড বলেন, চীনে গুগলের কার্যক্রমে পরোক্ষভাবে দেশটির সেনাবাহিনী সুবিধালাভ করেছে। ফলে আমাদের পক্ষে প্রতিযোগিতা সুবিধা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—আমেরিকা একটি পেন্সিল তৈরি করল আর এটি ব্যবহার করছে চীনারা।’ তবে শিমিড এ উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
চীনে গুগলের ইতিহাসকে এক কথায় টালমাটাল বলা যায়। দেশটি এ কোম্পানির ওপর নজরদারি করছে এবং সাইবার হামলার আশঙ্কায় ২০১০ সালে এখান থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয় গুগল। এর পরিবর্তে হংকংয়ে এর কার্যক্রম চালু করা হয়। এ পদক্ষেপের পক্ষে ছিলেন না গুগলের সাবেক প্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, তাদের চীনে থেকে গেলেই ভালো হতো এবং তারা চীনকে আরো উদার হওয়ার পরিবর্তনে সহায়তা করতে পারত।’
অতিসম্প্রতি চীনে আবার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে গুগল। বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য কাজে এখানে কোম্পানিটির ৭০০ কর্মী কাজ করছেন। ২০১৭ সালে সাংহাইয়ে গুগল এআই চায়না সেন্টার স্থাপন করা হয়।
গত বছর ইন্টারসেপ্ট ও নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ড্রাগনফ্লাই নামের একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে গুগল, যা বেইজিংয়ের বিভিন্ন শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ইস্যু তখন ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। এছাড়া গুগলের ১ হাজার ৪০০ জন কর্মী এ প্রকল্পের বিরোধিতা করে চিঠি দেয়। পরবর্তীতে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা আর এ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে না।
গুগলের প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে ২০০১-১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন শিমিড। এরপর নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় গুগলের নীতিবাক্য ‘শয়তান হয়ে যেয়ো না’, ‘সঠিক কাজটি করো’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু গত ১২ মাসে এ গুগলই কর্মী অসন্তোষের সম্মুখীন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে লিঙ্গসমতার দাবিতে গত বছরের নভেম্বরে গুগলের সব কর্মী একযোগে কর্মবিরতিতে যান। এ প্রসঙ্গে শিমিড বলেন, কর্মীরা আন্দোলন করছেন, কারণ তাদের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছতা একটি সদগুণ। আমরা যদি কর্মীদের কোণঠাসা করে রাখতাম, তাহলে তা কোনো না কোনোভাবে প্রকাশ হতোই। বরং আমরা তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছি।’
গুগলের পক্ষ থেকে সবসময়ই সব দেশে কর আইন মেনে চলার দাবি করা হয়। অথচ অন্যান্য টেক জায়ান্টের মতো গুগলকেও করসংক্রান্ত তদন্তের সম্মুখীন হতে হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের প্রকাশ করা নথিতে দেখা গেছে, বারমুডার শেল কোম্পানিতে ২ হাজার ২৭০ কোটি ডলার স্থানান্তর করেছে গুগল।
এখানেও গুগলের পক্ষ নিয়েছেন শিমিড। তিনি বলেন, ‘আমরা কর আইন মেনে চলি এবং সেই আইন অনুযায়ীই আমরা এমন পদক্ষেপ নিয়েছি।’