দেশে ২০১৮ সালের পর থেকে ১৭টি মোবাইল ফোন উৎপাদন কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চাহিদার ৯৯ শতাংশ মোবাইল ফোনই দেশীয়ভাবে উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ৩৫-৪০ শতাংশই অবৈধভাবে আসা বিদেশি ফোনের দখলে। তাই দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পকে রক্ষায় অবিলম্বে অবৈধ ফোনের বিক্রয় বন্ধ করতে হবে। দেশের স্বার্থে গ্রে মার্কেট হিসেবে পরিচিত অবৈধ মোবাইল ফোনের বেচাকেনাকে বন্ধ করতে হবে। এই গ্রে মার্কেটে ভ্যাট ট্যাক্সহীন ভাবে মোবাইল ফোন বিক্রি হওয়ায় যেমন হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে, তেমনি সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে।
মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) নেতাদের দাবি, মোবাইল ফোনের অবৈধ বাজারের কারণে তাদের ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি জাকারিয়া শহীদ বলেন, দেশে অবৈধ মোবাইল ফোনের বাজার এখনো রমরমা। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশীয় উৎপাদকরা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বেন।
ফেব্রুয়ারি ও মার্চে উৎপাদন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঈদের মৌসুমে মোবাইল ফোনের চাহিদা বাড়ে। এজন্য মার্চ-এপ্রিলে উৎপাদন বেড়েছে। পরপর দুটি ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসব রয়েছে। অর্থাৎ, বছরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনও বাড়বে।
মোবাইল বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশনের সময় দেশে অবৈধ পথে মোবাইল ফোন আসার পরিমাণ কমে গিয়েছিল। হ্যান্ডসেটের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আবারও বাড়তে শুরু করে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ফোনের বিক্রি কম থাকে। মার্চ থেকে বাজার স্বাভাবিকভাবেই ভালো হতে শুরু করে। দুই ঈদের বিক্রিতে ব্যবসায়ীরা সাধারণত ক্ষতি পুষিয়ে নেন। কিন্তু গ্রে মার্কেট বড় হওয়াতে চ্যানেল পণ্যের বিক্রি কমবে বলে তাদের আশঙ্কা।
এখনও মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে, তবে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে। যেকোনও (বৈধ ও অবৈধ) ফোন চালু করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা সেটসহ আইএমইআই ডাটাবেজে (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ফোন ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নিবন্ধিত হয়ে যাচ্ছে।
দেশের মার্কেটগুলোতে বৈধ পথে আসা (চ্যানেল প্রোডাক্ট) এবং অবৈধ পথে আসা (নন চ্যানেল বা গ্রে প্রোডাক্ট) দুইই পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ায় অনেক ক্রেতাই নন চ্যানেল পণ্য কিনতে আগ্রহী হন। অনেক সময় এসব ফোনে সমস্যা হয়, আবার হয়ও না। নন চ্যানেল পণ্য যারা বিক্রি করেন তারাও মাঝে মাঝে ওয়ারেন্টি দেন। বিক্রেতারা বলেন, চ্যানেল পণ্যে অনেক সুযোগ-সুবিধা পান ক্রেতারা। নন চ্যানেল পণ্য পান কম দামে। এ কারণে দিনে দিনে আবার নন চ্যানেল পণ্য কেনার হার বাড়ছে। বাজারটা বড় হতে হতে এখন ৩৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এতে কমছে এ খাতের রাজস্ব। কারণ নন চ্যানেলে আসা পণ্যে সরকার কোনও রাজস্ব পায় না।
জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৭টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন উৎপাদন করছে। দেশে যে পরিমাণ চাহিদা, তার প্রায় ৯০ শতাংশই এ উৎপাদনকারীরা মেটাতে পারেন বলে দাবি তাদের। ২০১৭ সালে উৎপাদনের অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে শুরুতে ভালো অবস্থা থাকলেও এখন উৎপাদন কমতির দিকে। এ নিয়ে হতাশ উৎপাদকরা। দেশের চাহিদার ৯৯ শতাংশই উৎপাদনের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মোবাইল ফোনের বাজারের বিশাল অংশ আজ অবৈধভাবে আমদানি করা ফোনের দখলে। এসব ফোনের মধ্যে অনেকগুলো আবার নকল ফোন। যে কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ভোক্তারা। এসব ফোনের অনেকগুলোতেই আবার নকল আইএমই ব্যবহার করা হয়। যা অপরাধীরা ব্যবহার করায় এসব মোবাইল ফোন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।