পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বনাঞ্চল আমাজন। এর গহীনে বাস করা আদিবাসীদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। তবে এই ধারায় পরিবর্তন এনেছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আমাজনের গহীনে থাকা মারুবোস নামের একটি আদিবাসী গোষ্ঠীকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়। আমেরিকান উদ্যোক্তা অ্যালিসন রেনিউ মারুবোস আদিবাসীদের ইন্টারনেটের অ্যান্টেনাগুলো দিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইনামা মারুবো বলেন, ‘যখন ইন্টারনেট আসে তখন আমরা খুশি ছিলাম। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। তরুণেরা ইন্টারনেট পেয়ে অলস হয়ে পড়ছে। তারা শ্বেতাঙ্গদের মতো আচরণ করছে। তবে দয়া করে আমাদের কাছ থেকে ইন্টারনেট সরিয়ে নেবেন না।’
মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি জানায়, মারুবোস গোষ্ঠীর লোকজন এখন তাদের সংস্কৃতিতে ইন্টারনেটের প্রভাব নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছে। কারণ তরুণেরা এই ইন্টারনেটের কারণে স্ক্রিনে আটকে গেছে। তারা বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করছে, পর্নোগ্রাফি ও গুজবে আসক্ত হচ্ছে।
মারুবোস আদিবাসী নেতা আলফ্রেডো মারুবো ইন্টারনেটের ঘোরবিরোধী। পর্নোগ্রাফি থাকায় এই ইন্টারনেটের প্রতি অনীহা আছে তাঁর। আদিবাসী এই নেতা বলেন, ‘তরুণেরা ইন্টারনেটে প্রকাশ্যে চুমু খেতে দেখছে। আমি উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, তারা হয়তো এটি চেষ্টা করতে চাইবে।’
এরইমধ্যে কিছু মারুবোস তরুণদের মধ্যে উগ্র যৌন আচরণ দেখা গেছে বলে জানান আলফ্রেডো। তবে ইন্টারনেট আসায় মারুবোস আদিবাসী শিশুরা পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। এ নিয়ে কিছু বাবা-মা খুশি। তবে তারা ইন্টারনেটের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এই ইন্টারনেট যে মারুবোস আদিবাসীদের মধ্যে শুধু নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তা নয়। এর কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এই আদিবাসী গোষ্ঠীর এক সদস্য জানান, আগে কর্তৃপক্ষকে কোনো বার্তা পাঠাতে হলে রেডিওর মাধ্যমে পাঠাতে হতো। এতে অনেক সময় ব্যয় হতো। এখন তাৎক্ষণিক বার্তা পাঠানো যায়। এতে কাউকে বিষাক্ত সাপে কাটলে বা জরুরি অবস্থা হলে দ্রুত খবর পাঠানো যায়।
এই গোষ্ঠীর আরেক সদস্য বলেন, ইন্টারনেট জনগণকে নতুন স্বায়ত্তশাসন দিতে পারে। এটির সাহায্যে, তারা আরও ভালো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে, নিজেদেরকে জানাতে পারে এবং তাদের নিজস্ব গল্প বলতে পারে।