দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে নিজেদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্প্রতি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে লন্ডন ও দুবাই-ভিত্তিক আর্থিক প্রযুক্তি (ফিনটেক) প্রতিষ্ঠান এলিভেট পে। এলিভেট পে’র ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ফ্রিল্যান্সার, রিমোট ওয়ার্কার এবং যারা বিদেশি ক্লায়েন্টদের জন্য কাজ করেন, তাদের কাজের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। পাশাপাশি, বর্তমানে দেশে বর্তমানে অসংখ্য মানুষ রয়েছেন, যারা ঘরে বসেই দক্ষ কর্মী হিসেবে পেশাদারভাবে কাজ করছেন। তবে, আন্তর্জাতিক মুদ্রায় পেমেন্ট, বিশেষ করে মার্কিন ডলারে পেমেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন জটিলতা ও হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। তাদের জন্য পেমেন্ট গ্রহণের প্রক্রিয়া সহজ করে তুলতে সমাধান নিয়ে এসেছে এলিভেট পে। এলিভেট পে’র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের নিয়োগদাতা এবং ফ্রিল্যান্স কাজের প্ল্যাটফর্ম যেমন আপওয়ার্ক, ফাইভার, পেপ্যাল, ডিল ও টপট্যাল থেকে সহজেই মার্কিন ডলারে পরিশোধিত পেমেন্টের অর্থ সংগ্রহ করা যাবে।
যখন গ্রাহকরা এলিভেট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাদের পেমেন্ট গ্রহণ করবেন, সে অর্থ জমা থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের মেইনে অবস্থিত ১৭২ বছরের ঐতিহ্যবাহী ব্যাঙ্গর সেভিংস ব্যাংকে। ব্যাংকটি এলিভেট গ্রাহকদের অর্থ জমা সংক্রান্ত সেবা প্রদান করে। এফডিআইসি’র সদস্য হওয়ার ফলে ব্যাঙ্গর সেভিংস ব্যাংকে গ্রাহকদের জমাকৃত অর্থ আড়াই লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত এফডিআইসি বিমা সুবিধার আওতাভুক্ত থাকে। উল্লেখ্য, শুধুমাত্র এলিভেট ব্যবহারকারীরাই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ফিলিপাইন থেকে এফডিআইসি-বিমাকৃত ইউএস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
অনলাইন পেশাজীবী ও ফ্রিল্যান্সারদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা প্রদানে প্রাধান্য দেয়ার মাধ্যমে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেদের আলাদা করে এলিভেট পে। এলিভেট অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীরা সাশ্রয়ী কনভার্সন ফি’র সুবিধা নিয়ে সাশ্রয়ী খরচে তাদের কষ্টার্জিত ডলার নিজেদের বাংলাদেশি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে পারবেন। এছাড়াও, এলিভেট গ্রাহকদের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় কনভার্সন রেট এবং নেই কোনো সাবস্ক্রিপশন ফি।
এলিভেট পে’র প্রধান নির্বাহী খালিদ কিনান বলেন, “বিশ্বের উদীয়মান বাজারগুলোর জন্য বৈদেশিক আয়ের মূল উৎস হতে যাচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট ওয়ার্ক। আপওয়ার্ক, ফাইভার ও ডিল’র মতো প্ল্যাটফর্মগুলো দক্ষ পেশাদারদের জন্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার এবং মার্কিন ডলারে উপার্জনের সুযোগ তৈরি করেছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সাশ্রয়ী খরচে এবং দ্রুত ও সহজ উপায়ে ফ্রিল্যান্সার এবং রিমোট ওয়ার্কাররা যেন তাদের পেমেন্ট লাভ করেন, তা নিশ্চিত করা। আমরা চাই, তারা যেন তাদের কষ্টার্জিত অর্থের যত বেশি সম্ভব নিজেদের কাছে রাখতে পারেন।”
এলিভেট পে’র প্রতিষ্ঠাতা খালিদ কিনান, ইউসেফ ওদজিদান এবং ফারিস কিনানের সান্তান্দার, এইচএসবিসি ও এসইবি’র মতো খ্যাতনামা ব্যাংকসহ ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে সম্মিলিতভাবে ৩০ বছরেরও বেশি কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এলিভেট পে প্রতিষ্ঠা ও এগিয়ে নেয়ার পেছনে প্রতিষ্ঠাতাদের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ওয়াই কম্বিনেটর, গুডওয়াটার, গ্লোবাল ফাউন্ডারস ক্যাপিটাল ও ভিএসকিউ সহ বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ইক্যুইটি এবং ঋণের মাধ্যমে মোট ১ কোটি মার্কিন ডলার পেয়েছে এলিভেট পে। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেড় লাখের বেশি গ্রাহকের আস্থা অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
দক্ষিণ এশিয়ার বাজারকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে এলিভেট পে, যার সুফল ভোগ করবে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো—ফ্রিল্যান্সারদের অর্থ উপার্জন প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়ে ওঠার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। পাশাপাশি, শক্তিশালী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশের বর্তমান ডলার সংকট মোকাবিলায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।