বাংলাদেশে আগামী ১৭ জুন ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। মুসলমানদের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে গেল কয়েক বছর ধরেই ইন্টারনেটের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিজিটাল প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।
এবারও তেমন একটি প্রতারণার বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। দেশের জনগণকে ২৫-৩০ হাজার টাকা ঈদ বোনাস দেওয়ার ভুয়া প্রতিশ্রুতির পোস্ট ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট।
এ প্রতারণার ফাঁদকে বিশ্বস্ত করে তুলতে কখনো প্রধানমন্ত্রীর ছবি, কখনোবা গণমাধ্যমের লোগোকে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা দেখে যে কেউ ভেবে নেবেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই হয়তো এ বোনাস দেওয়ার ঘোষণা করেছেন কিংবা এই ঘোষণা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিজ্ঞাপনগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিকাশের ওয়েবসাইটের অনুকরণে তৈরি কিছু নকল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করানো হচ্ছে, যেখানে ঈদ উপলক্ষ্যে বড় অঙ্কের বোনাস প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা।
গত ৫ ও ৬ জুন মেটার অ্যাড লাইব্রেরি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এ সময়ে ১২ হাজারেরও বেশি এমন বিজ্ঞাপন এ ধরনের প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়েছে। ‘বোনাস পেতে এখানে ক্লিক করুন’ কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে এই বিপুলসংখ্যক বিজ্ঞাপন খুঁজে বের করেছে রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। নারীদের নামে তৈরি বিভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে এ বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার করা হচ্ছে। রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট এমন ২০টি পেজের তালিকা তৈরি করেছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অধিকাংশ পেজের অ্যাডমিনের অবস্থান ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ায় দেখানো হচ্ছে। অল্পসংখ্যক পেজের অ্যাডমিনের অবস্থান বাংলাদেশে এবং কেবল একটি পেজের অ্যাডমিনের অবস্থান ভারতে দেখানো হচ্ছে।
প্রতারণাকে বিশ্বাসযোগ্য করতে নানা কৌশল
রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতারকরা তিন ধরনের ডিজিটাল ব্যানার ব্যবহার করে এ বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার করছে। প্রতিটি ব্যানারে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি ব্যানারে প্রধানমন্ত্রীর ছবির পাশাপাশি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লোগো যুক্ত করা হয়েছে। অন্য একটি ব্যানারে বিকাশে ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন হওয়া মেসেজের স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হয়েছে।
গত বছরের ১ নভেম্বর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ন্যাশনাল কার্ড স্কিম ‘টাকা পে’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উক্ত অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং ‘আজ থেকে চালু হচ্ছে ‘টাকা পে’ কার্ড’ শিরোনাম ব্যবহার করে এ ইউটিউব ভিডিওটির থাম্বনেইল তৈরি করা হয়। প্রতারকরা এই থাম্বনেইল বিকৃত করে ‘দেশের সবাইকে দিচ্ছি ২৫ হাজার টাকা ঈদ উপহার’ শীর্ষক নতুন শিরোনাম যুক্ত করে ফেসবুকে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন চালাচ্ছে।
এ বিষয় জানতে পেরে টিভি চ্যানেলটি দর্শকদের উদ্দেশ্যে একটি সতর্কতামূলক পোস্ট দিয়ে নিশ্চিত করে যে, এ ছবিটি তাদের তৈরি নয়। একইভাবে, প্রতারকরা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইনডিপেনডেন্ট টিভির ইউটিউব চ্যানেলের থাম্বনেইলের ডিজাইন নকল করেও এমন বিজ্ঞাপন চালাচ্ছে।
বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রতারকরা বিজ্ঞাপনগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটের লিংক যুক্ত করে দিচ্ছে। এক বিজ্ঞাপনে দেশের অন্যতম মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের লিংক প্রিভিউ হিসেবে দেখা যায়। তবে লিংকে প্রবেশ করলে নিয়ে যাওয়া হয় বিকাশের ওয়েবসাইটের অনুকরণে তৈরি নকল ওয়েবসাইটে।
রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, এ কৌশলগুলো মানুষের বিশ্বাস অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বেনামি কোনো ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত বিজ্ঞাপনকে খুব সহজে গ্রহণ করবে না। তাই প্রতারকরা বিজ্ঞাপনগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর ছবি, গণমাধ্যমের লোগো এবং এমএফএস সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের লিংক ব্যবহার করছে।