বহুল আলোচিত নগদ ডিজিটাল ব্যাংক বর্তমানে বিপর্যয়ের মুখোমুখি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের লাইসেন্স বাতিলের কথা বিবেচনা করছে। অভিযোগ উঠেছে, বিগত সরকারের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির হস্তক্ষেপের কারণে নগদকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ডাক বিভাগের অধীনে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা নগদ বিতর্কিতভাবে রূপান্তরিত হয়ে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে, সেই প্রক্রিয়াটিই তদন্তের আওতায় এসেছে।
এ বছরের জুনের শুরুতে নগদ দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে লাইসেন্স পায়। ঢাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী, নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুকের হাতে ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্সের কপি হস্তান্তর করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, তারা লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছে। তবে তা কার্যকর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অনুমোদন প্রয়োজন।
এদিকে, শিক্ষার্থী-জনগণের আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সৃষ্ট অস্থিরতার মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদত্যাগ করেছেন।
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী গভর্নর লাইসেন্স বাতিলের ঘোষণা দেবেন।’
তিনি বলেন, তারা লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে দুইজনের হস্তক্ষেপের প্রমাণ পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘একজন মন্ত্রী এবং অন্যজন মন্ত্রী না হলেও অত্যন্ত প্রভাবশালী।’
বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনে একটি মোবাইল আর্থিক সেবা হিসেবে যাত্রা শুরু করা নগদ ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্স পাওয়ার কয়েক মাস আগে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পেয়েছিল।
পরে, তারা ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করবে বলে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের পতনের পর পরই নগদ তদন্তের আওতায় আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মূল্যায়ন করে দেখেছি যে সরকারের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির হস্তক্ষেপ ছিল।’
ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক এবং আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোট ৫২টি আবেদন পেয়েছিল। গত জুনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি সার্কুলার জারি করে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার আহ্বান জানায়। এর মাধ্যমে ২১ জুন, ২০২৩ থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
‘আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত পদ্ধতি’ অনুসারে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য লাইসেন্সিং ও নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামো তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই কাঠামো ছিল পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক চালুর প্রথম ধাপ। এই ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের শাখায় না গিয়েই ডিজিটাল মাধ্যমে সকল ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং নীতিমালা ও লাইসেন্স প্রদানের আহ্বানে বাণিজ্যিক ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এবং স্টার্টআপ-সহ বিভিন্ন খাতের আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলির কাছ থেকে আবেদন জমা পড়ে।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি ডিজিটাল ব্যাংককে অনুমোদন দেয়: নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি এবং কোরি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুকের সাথে বারবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস অবলম্বনে