স্মার্টফোন থেকে শুরু করে স্মার্টওয়াচ, প্রায় সব ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য চিপ বা সেমিকন্ডাক্টরনির্ভর। ফলে বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা অনেক বেশি। তাছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রচলন বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন এর চাহিদা আরো বেড়ে যাচ্ছে। সেমিকন্ডাক্টর খাতে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বিশ্বব্যাপী বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার বিক্রি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ এবং চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) তুলনায় বিক্রি বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি। সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (এসআইএ) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, শুধু জুনে বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পণ্য, যা মে মাসের ৪ হাজার ৯১০ কোটি ডলারের চেয়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। প্রতি মাসের বিক্রির হিসাব একত্রিত করে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করে ওয়ার্ল্ড সেমিকন্ডাক্টর ট্রেড স্ট্যাটিস্টিকস (ডব্লিউএসটিএস) সংস্থা। মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর খাতের ৯৯ শতাংশ এবং মার্কিন নয় এমন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চিপ ফার্মের প্রতিনিধিত্ব করে এসআইএ।
এসআইএ প্রেসিডেন্ট ও সিইও জন নিউফার বলেন, ‘২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টরের বাজার শক্তিশালী অবস্থায় ছিল। ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এসে খাতটিতে বিক্রি বেড়েছে। জুনের আগের মাস অর্থাৎ মে মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে। এক্ষেত্রে ২০২৩ সালের জুনের তুলনায় বাজারে ৪২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।’
বছরওয়ারি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে চীনে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং এশিয়া প্যাসিফিক অথবা অন্যান্য দেশে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে। অন্যদিকে খাতটিতে বিক্রি কমেছে জাপানে ৫ শতাংশ ও ইউরোপের বাজারে ১১ দশমিক ২ শতাংশ।
মাসওয়ারি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ৬ দশমিক ৩ , জাপানে ১ দশমিক ৮ ও চীনে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে এবং ইউরোপের বাজারে ১ শতাংশ ও এশিয়া প্যাসিফিক অথবা অন্যান্য দেশে ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্যামসাংকে টপকে শীর্ষে উঠে এসেছে ইন্টেল। মেমোরি খাতের পাশাপাশি স্মার্টফোন ব্যবসায় লোকসানের কারণে শীর্ষস্থান হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্টটি।
এআইয়ের প্রভাবে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সেমিকন্ডাক্টর খাতের আয় ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে আশাবাদী বাজার বিশ্লেষকরা। এর মাধ্যমে গত বছর অ্যাডভান্স মাইক্রো ডিভাইসেসের (এএমডি) পর ভালো অবস্থানে ছিল এনভিডিয়া। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সামনের বছরগুলোয় দুটি কোম্পানি এআইয়ের সহায়তায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাড়াতে সক্ষম হবে।
এর আগে বছরের শুরুতে বিবিসি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কভিড-১৯ মহামারীর সময় চিপের সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক বিষয় নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বিশ্বের ৯০ শতাংশ উন্নত চিপই এখানে তৈরি হয়ে থাকে। ২০২১ সালেও চিপের প্রবল সংকট তৈরি হয়। সে সময় অল্পসংখ্যক সরবরাহকারীর ওপর বৈশ্বিক নির্ভরতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ওই সময় বাজার বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্ট জানান, চলতি বছর এ খাতের আয় পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। এতে বড় অবদান থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার।