প্রতিষ্ঠানে চারটি বৈষম্য ও অনিয়মের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে মানববন্ধন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল অপারেটর টেলিটকের কর্মীরা। সোমাবার রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স ভবনের সামনে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
টেলিটক এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে টেলিটকের কর্মীদের সঙ্গে প্রশাসনের ৪টি বৈষম্যের কথা তুলে ধারা হয়। এগুলো হলে- রাজনৈতিক দলীয়করণ বন্ধ করা ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; পদোন্নতি নীতিমালা সংশোধনপূর্বক দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিতদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা; বেতন, সিপিএফ, গ্রাচুইটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা ও ডেপুটেশন / লিয়েন বাতিল করা।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা এই বৈষম্যগুলোর ব্যাখাও তুলে ধরেন।
১) রাজনৈতিক দলীয়করণ বন্ধ করা ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণঃ টেলিটক বাংলাদেশ লিঃ-এর চাকুরী বিধিমালার অনুচ্ছেদ ৪.৮ এবং ৪.৯-এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহল “বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ“ নাম ধারণ করে অবৈধ সুবিধা ভোগ, ক্ষমতার অবৈধ ব্যবহার করে চাকুরীতে পদন্নোতি ও প্রজেক্টসমূহ দলীয়করণপূর্বক আর্থিক সুবিধা গ্রহণসহ লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছে। ফলশ্রুতিতে, সাধারণ কর্মীগণ প্রতিনিয়ত বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টেলিটক হতে “বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের উপদেষ্টা পরিষদ ও নির্বাহী কমিটি”-এর সকল সদস্যের বিরুদ্ধে স্ব স্ব চাকুরী বিধিমালা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
২) পদোন্নতি নীতিমালা সংশোধনপূর্বক দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিতদের পদোন্নতির ব্যবস্থাঃ টেলিটক বাংলাদেশ লিঃ গঠিত হওয়ার পর প্রায় ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও অদ্যাবধি একটি পূর্ণাংগ পদোন্নতি নীতিমালা গঠন করতে পারেনি এমনকি ডিজিএম হতে এডিশনাল জিএম এবং এডিশনাল জিএম হতে জিএম পদোন্নতি অবরুদ্ধ করে রাখায় পদোন্নতি হতে বঞ্চিত ও বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়েছে। ডিজিএম হতে এডিশনাল জিএম এবং এডিশনাল জিএম হতে জিএম পদে পদোন্নতিসহ সকল স্তরে পদোন্নতির নীতিমালা সংশোধনপূর্বক প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩) বেতন, সিপিএফ, গ্রাচুইটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করাঃ সকল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বা সরকারি কোম্পানির ন্যায় সকল বিষয়ে সকল সুযোগ-সুবিধাদি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যেমন ঘোষিত পে স্কেল সমন্বয় (বকেয়া/অবশিষ্ট ৫০% বাস্তবায়ন), প্রাপ্য সিপিএফ (১০%), ১০+ বৎসরের বেশী অব্যাহতভাবে চাকুরীরত প্রত্যেক পূর্ণ বৎসরের জন্য ২ (দুই) মাসের সর্বশেষ গৃহিত মূল বেতনের হারে গ্রাচুইটি, অভোগকৃত অর্জিত ছুটি শতভাগ নগদায়নের সুবিধা প্রদান, চিকিৎসা বীমা অন্তর্ভুক্ত করে গ্রুপ ইনস্যুরেন্স (যৌথ বীমা) চালুকরণ, প্রতি ৩ (তিন) বৎসর ধারাবাহিক চাকুরীর জন্য একবার ১৫ (পনের) দিনের শ্রান্তি বিনোদন ছুটি (শ্রান্তি বিনোদন ভাতাসহ) প্রদানসহ চাকুরীর বয়সসীমা ৬২ বছর করা ইতাদি ।
৪) ডেপুটেশন / লিয়েন বাতিল করাঃ টেলিটক বাংলাদেশ লিঃ-এ ডিজিএম হতে এডিশনাল জিএম এবং এডিশনাল জিএম হতে জিএম পদোন্নতি অবরুদ্ধপূর্বক পদোন্নতি হতে বঞ্চিত করে বিটিটিবি/বিটিসিএল/ টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর (DOT) হতে মোবাইল টেলিকমুনিকেশনের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও কোনো সার্কুলার কিংবা নিয়োগ পরীক্ষা ব্যতিত ইচ্ছে মাফিক ডেপুটেশন/লিয়েন-এ নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং উহাদের সকল সুযোগ-সুবিধাদি প্রদান করা হয়। ফলে, একদিকে যেমন অধিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও উক্ত পদের সাধারণ কর্মচারীগণ প্রায় ১৫ বছর একই পদে চাকুরী করতে বাধ্য হচ্ছে, ডিজিএম-এর নিচের পদগুলোতেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং পেশাগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে, অপরদিকে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে পেশাগত দক্ষ, অভিজ্ঞ ব্যক্তি নিয়োগ না করায় কোম্পানির অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। তাই, অবিলম্বে ডেপুটেশন/লিয়েন বাতিল করে বঞ্চিতদের অগ্রাধিকারপূর্বক সঠিক জায়গায় সঠিক এবং যোগ্য প্রার্থীকে পদায়ন করতে হবে।
উপর্যুক্ত বৈষম্য এবং অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীবৃন্দ, সর্বোপরি রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করাই হল TEWA/টেওয়া ()-এর মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে টেওয়া আজ ১৯/০৮/২০২৪ খ্রিঃ সকাল ১১ ঘটিকায় টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স ভবন (গুলশান-১)-এর সামনে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।