দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দশটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনের সভাপতি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
এ বিষয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৬ সালের মার্চ মাসে যাত্রা শুরুর পর থেকে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের আপামর জনসাধারণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। বাংলাদেশের শতভাগ নাগরিকের হৃদয়ে অনুভূতির জায়গায় টেলিটক থাকলেও ব্যবহারে নেই। কারণ টেলিটকের অপর্যাপ্ত রিটেলার, সার্ভিস সেন্টার অপ্রতুল, রিটেলারদের কাছে ডাটা বা প্যাকেজ তথ্য না থাকা, বাজারে সিম ও রিচার্জ করতে না পারা এবং মানসম্মত নেটওয়ার্ক না থাকা। একসঙ্গে পর্যাপ্ত প্রচারণা না থাকাতে গ্রাহকদের টেলিটকের সেবার মান নিয়ে আস্থা নেই।
গ্রাহক কম থাকার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, তুলনামূলক কম কল ও ডাটা রেট থাকার পরও বিটিআরসির মাসিক গ্রাহক সংখ্যার পরিসংখ্যান অনুসারে টেলিটকের মাত্র ৬৫ লাখ গ্রাহক রয়েছে। যা অন্যান্য প্রাইভেট অপারেটরের তুলনায় খুবই কম। এতো কম গ্রাহক নিয়ে টেলিটক ব্যবসায়িকভাবে টেকসই অবস্থানে যেতে পারবে না। দেশে টেলিটকের টাওয়ার সংখ্যা ৬ হাজার। অথচ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের সরকারি মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটরদের টাওয়ার সংখ্যা ১৫ হাজারেও বেশি। সীমিত ফোর জি কভারেজ, মাঠপর্যায়ে সেলস কার্যক্রমের উদাসীনতা, গণমাধ্যম ও সোশাল মাধ্যমে মার্কেটিং কার্যক্রম অনুপস্থিত, দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামো ও স্বচ্ছতার অভাব, বিগত রাজনৈতিক সরকারের টেলিটক নিয়ে নেতিবাচক মনোভাবের কারণে টেলিটকের দেশের মানুষের চাহিদা পূরণে সফল হতে পারেনি।
এ অবস্থায় বৈষম্যহীন স্বাধীন বাংলাদেশে টেলিটকের সেবার মান বাড়ানো ও গ্রাহকদের কম খরচে মোবাইল সেবা প্রদান করার জন্য অপারেটরটির আমূল সংস্কার করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে তারা অন্তর্ভতীকালীন সরকারের কাছে ১০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো হলো:
১. টেলিযোগাযোগ সেক্টর সংশ্লিষ্ট কারিগরি ও ব্যবসায়িক বিবেচনায় দক্ষ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে টেলিটকের বোর্ডের সংস্কার করে কোম্পানিটি পরিচালনায় সরকারের প্রত্যক্ষ গতি আনতে হবে।
২. সংস্কার কার্যক্রম হিসেবে টেলিটকের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ টেলিটক’ করার প্রস্তাবনা করছি, যার মাধ্যমে আমরা মনে করি, টেলিটকের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দায়িত্ব পালনে অধিকতর অনুপ্রেরণা পাবে।
৩. টেলিটকের ধীরগতিতে চলা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পগুলো দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করে কভারেজ বিস্তার নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে দেশের স্বার্থ ও টেলিটকের ব্যবসায়িক বিবেচনায় বিনিয়োগ প্রস্তাব গ্রহণ করে টেলিটকের নেটওয়ার্ক অন্যান্য অপারেটরের মতো দেশের সকল জায়গায় নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় কম খরচে সহজ ভয়েস ও ডাটা প্যাকেজ অফার করতে হবে। প্যাকেজ অফারে নতুনত্ব আনতে হবে। বাংলাদেশ টেলিটকের ডাটা এবং ভয়েস কলের কোনও মেয়াদ থাকবে না। তাছাড়া টেলিটকের মার্কেটিং নেই বললেই চলে। গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মার্কেটিং কার্যক্রম গ্রহণ করে ব্যবসায়িক পরিধি বাড়াতে হবে। মার্কেটিং ও সেলস বিভাগগুলোকে সুনির্দিষ্ট টার্গেট দিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে।
৫. সোশ্যাল নেটওয়ার্কে গ্রাহকদের অভিব্যক্তি থেকে জানা যায় যে, টেলিটকের সাইটগুলোর একটি বড় অংশে ব্যাটারি ব্যাকআপ না থাকায় বিদ্যুৎ না থাকলে টাওয়ার বন্ধ হয়ে থাকে। এ সমস্যা নিরসনে দ্রুত সময়ে ত্রুটিপূর্ণ ব্যাটারি পরিবর্তন করে সাইটগুলো সর্বাবস্থায় সচল রাখতে হবে যাতে গ্রাহকরা সেবা গ্রহণে সমস্যার সম্মুখীন না হয়।
৬. মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকল জনবলের সঠিকভাবে কাজের পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে টেলিটকের প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কার করা প্রয়োজন। কাজের গতি ও স্বচ্ছতা, দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবস্থাপনায় সংস্কার করতে হবে। প্রাইভেট অপারেটরদের ন্যায় পরিচালনার জন্য কোম্পানির পলিসিগুলো সংস্কার করতে হবে।
৭. গ্রাহকরা যাতে দেশের সকল এলাকায় টেলিটকের সিম ও রিচার্জ ক্রয় করতে পারে সে জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও, সরকারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টেলিটকের সিম ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৮. বিগত সরকারের টেলিটক বিক্রয়ের সকল পাঁয়তারা বন্ধ করে টেলিটকে জনসাধারণের কোম্পানিতে রূপান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও, এই বিক্রয় প্রক্রিয়ায় কে বা কারা ব্যক্তিগত লাভ অর্জন করতো তাদের নাম উন্মোচন করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৯. টেলিটকের ফাইভ-জি প্রকল্পের দুর্নীতি অনিয়ম দ্রুত তদন্তের আহ্বান।
১০. বিটিসিএলের কর্মকর্তাদের টেলিটকে নিয়োগ না দেওয়া।