নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাদের পছন্দ এবং কাজের জন্য যাদের নতুন ডিভাইস দরকার হয় তাদের উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত টেক-ব্র্যান্ডগুলো নতুনত্ব নিয়ে আসছে। চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তার পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-চালিত যে পরিষেবাগুলো এসেছে তার মধ্যে মাইক্রোসফটের কোপাইলট একটি। ল্যাপটপ নির্মাতারা এখন এই কোপাইলট ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করছে কোপাইলট প্লাস পিসি।এই পিসিগুলোতে কোপাইলট চ্যাটজিপিটির মতো একটি চ্যাটবট হিসেবে কাজ করে যেখানে এআইয়ের সর্বোচ্চ সুবিধা পায় ব্যবহারকারীরা।
মাইক্রোসফট কোপাইলট মূলত একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সুবিধার চ্যাটবট যেটি মাইক্রোসফট ৩৬৫ অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে এম্বেড করা থাকে। এআইয়ের সাহায্যে কাজকে সহজ করাই কোপাইলটের উদ্দেশ্য। লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) এবং মাইক্রোসফট গ্রাফের ডেটা ব্যবহার করে কোপাইলট কাজ করে। লেখার সারসংক্ষেপ, প্রেসেন্টেশন তৈরি বা লেখাকে ছবিতে রূপান্তর করার মত কাজগুলো অনায়াসে করতে সক্ষম কোপাইলট।
অনেকে কোপাইলট ফিচারটির নাম শুনে থাকলেও এর ব্যবহার সম্পর্কে বিশদ জানেন না।। ওয়েব পেজ, মোবাইল অ্যাপে বা উইন্ডোজে বিল্ট-ইন টুলগুলোতে কোপাইলটের প্রাথমিক ভার্সনটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। প্রশ্নের উত্তর খোঁজা, কনটেন্ট তৈরি করা এবং ছবি বানানোর মতো কাজ এই ভার্সনে করা যায়।
যারা আরও বড় পরিসরে এআইয়ের সুবিধা নিতে চায়, তাদের জন্য রয়েছে প্রিমিয়াম ভার্সন– কো-পাইলট প্রো। তবে এটি ব্যবহারের জন্য মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি দেয়া লাগে। এতে ওপেনএআইয়ের জিপিটি ৪ মডেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রবেশের পাশাপাশি নিজস্ব চ্যাটবট তৈরিরও সুযোগ মিলবে। এছাড়া, মাইক্রোসফট ৩৬৫ অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে।
সর্বশেষ ভার্সন, কোপাইলট প্লাস পিসি। এই পারসোনাল কম্পিউটার বা পিসিতে কোপাইলট ব্যবহার করা যায় বিশেষভাবে। এই পিসিগুলো ক্লাউড পরিষেবা ছাড়াই সরাসরি এআইয়ের কাজ করতে সক্ষম।
এআইয়ের ব্যবহারের আরও সুবিধাজনক করতে এবং সেরা পারফরম্যান্স দিতে ল্যাপটপ ব্র্যান্ডগুলো বর্তমানে নানান ফিচার তাদের ডিভাইসে যুক্ত করছে। ল্যাপটপ ব্র্যান্ড আসুস এর মধ্যে অন্যতম। ল্যাপটপ ইউজারদের চাহিদার পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্র্যান্ডটির ল্যাপটপগুলোতেও দেখা যায় নতুনত্ব। আসুস বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, বাংলাদেশেও ব্র্যান্ডটি কোপাইলট প্লাস পিসি শীঘ্রই নিয়ে আসছে। ভিভোবুক, জেনবুক, প্রোআর্ট এবং টাফ– আসুসের এই সিরিজগুলোতে কোপাইলট প্লাস পিসি হিসেবে নতুন কিছু ল্যাপটপ বাজারে আসবে। উল্লেখ্য কোপাইলট প্লাস পিসিতে কোপাইলট ফিচারটি সহজে চালু করার জন্য এর কি-বোর্ডে একটি আলাদা বাটন থাকে। এছাড়া, আসুসের এই ল্যাপটপগুলোতে স্টোরিকিউব এবং মিউসট্রির মতো এআই অ্যাপ্লিকেশনও থাকবে।
যারা ক্রিয়েটিভ কাজ করে থাকে তাদের জন্য এই কোপাইলট প্লাস পিসিগুলো সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিবে। যেমন, একজন শিল্পী বা কনটেন্ট ক্রিয়েটরের নির্দিষ্ট কোন ছবি প্রয়োজন হলে এবং কোপাইলটকে তা বর্ণনা করলে কোপাইলট সেই নির্দেশনা অনুযায়ী একাধিক ছবি তৈরি করে দেখাবে। ফটো এবং ক্লিপচ্যাম্পের মতো অ্যাপ্লিকেশনেও জেন্টেশন বা ভিডিও তৈরির জন্য কোপাইলট ব্যবহার করা যায়।
তবে, ক্রিয়েটিভ কাজ ছাড়াও বর্তমান সময়ের যেকোনো প্রফেশনালদের জন্য কোপাইলট প্লাস পিসি নির্দ্বিধায় উপযোগী। আউটলুক, টিমস, পাওয়ারপয়েন্ট, এক্সেল আর ওয়ার্ড-এর মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে কোপাইলটের ব্যবহার কাজের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে। এক্সেলের জটিল তথ্য বিশ্লেষণ বা প্রতিবেদন তৈরির মতো বহু কাজে কোপাইলট সহায়ক। আবার প্রতিদিনের গতানুগতিক কাজগুলোর ক্ষেত্রেও কোপাইলট কার্যকরী। ইমেইলের উত্তর কেমন হতে পারে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরামর্শ দেওয়া থেকে শুরু করে ফাইল অর্গানাইজ, কাজের শিডিউল তৈরি, ক্যালেন্ডার ম্যানেজমেন্টের কাজ করে দিতে পারে কোপাইলট। যাতায়াতের ক্ষেত্রেও কোপাইলট হতে পারে আপনার সঙ্গী। কেবল মানচিত্রের স্ক্রিনশটগুলো দেখে দিক নির্দেশনা দিতে পারে কোপাইলট।
শুরুর দিকে ওপেনএআইয়ের ব্যবহার অনেকটা মজার বিষয় থাকলেও এখন এআই ব্যবহারের ব্যাপকতা বাড়ছে। কাজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এআই কেন্দ্রিক পরিষেবা এবং চ্যাটবটগুলোর জনপ্রিয়তা এখন শীর্ষে। পেশাদার এবং দৈনন্দিন কাজে এআই আরও কতভাবে আমাদের সুবিধা দিতে পারে তা আরও স্পষ্ট হচ্ছে কোপাইলট প্লাস পিসি এবং কোপাইলটের মতো অন্যান্য পরিষেবাগুলোর মাধ্যমে।