বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে #BMW (বিএমডব্লিউ) ট্যাগটি ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। এই ট্যাগ ব্যবহার করে ফেসবুকে পোস্ট, ছবি ও ভিডিও আপলোড করলে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে যাচ্ছে। এটি জার্মানির বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিএমডব্লিউর প্রচারণার কৌশল মনে হলেও ট্যাগটি সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।
#BMW (বিএমডব্লিউ) ট্যাগটি কেন ভাইরাল হয়েছে, এর পেছনে কারণ কী?
যখন কোনো কীওয়ার্ড, বিষয়, বার্তা বা নামের আগে এই #পাউন্ড প্রতীকটি ব্যবহার করা হয় তখন একে হ্যাশট্যাগ বলা হয়। এটি প্রাসঙ্গিক কোনো তথ্যে ট্যাগ দিতে, শ্রেণিভুক্ত করতে এবং গ্রুপে বিভক্ত করতে ব্যবহার করা হয়। যদি আপনি কোনো হ্যাশট্যাগে ক্লিক করেন তাহলে সেই হ্যাশট্যাগের সাথে সম্পর্কিত ইন্টারনেটে সার্বজনীন যত তথ্য আছে তা সব প্রদর্শন করবে। আপনি যদি কোনো হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন তবে আপনার পোস্টটি সেই হ্যাশট্যাগ অনুসন্ধানকারী লোকদের ফিডে প্রদর্শিত হবে। যদি কোনো একটি হ্যাশট্যাগটি লোকজন প্রচুর ব্যবহার করতে থাকে তখন এটি একটি ট্রেন্ডিং বিষয়ে পরিণত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা পোস্টগুলোকে জনপ্রিয় ও সহজে খুঁজে পাওয়ার একটি ট্যাকনিক্যাল ফিচার।
#বিএমডব্লিউ হ্যাশট্যাগের প্রাথমিক ব্যবহার ছিল জার্মানির বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিএমডব্লিউয়ের বিজ্ঞাপন। যা দিয়ে গাড়িপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনা সৃষ্টি করা। তবে বর্তমানে #বিএমডব্লিউ হ্যাশট্যাগটি ভিন্ন কারণে ভাইরাল হয়েছে। এখন এটি ব্যবহার করে নেটিজেনরা নানা ধরনের বিনোদনমূলক বা মজার পোস্ট করছেন। যেসব পোস্টের গাড়ির সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই।
ট্যাগটি ভাইরাল হওয়ার অন্যতম কারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং জনপ্রিয় ট্রেন্ডের অংশ হয়ে গেছে। শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা বা অধিক লাইক ও শেয়ার পাওয়ার জন্য স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এটি ব্যবহার করছেন। তবে এমনটিও হতে পারে এটি কোন সেলিব্রিটি বা বিখ্যাত ব্যক্তি একবার ব্যবহার করেছে। কারণ, এ ধরণের ট্যাগ তারা একবার ব্যবহার করলে একটি প্ল্যাটফর্মেই ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রাকৃতিগতভাবে মানুষ অন্য মানুষকে অনুসরণ করে। ফলে কেউ কোন একটি বিষযয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা পেলে, তখন অনেকেই সেই ট্রেন্ডের সাথে যুক্ত হতে চান। বিশেষত তরুণ সমাজে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। #বিএমডব্লিউ ট্যাগটির ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা ঘটছে। অনেকেই এটিকে ফান হিসেবে নিচ্ছে, আবার অনেকেই কৌতূহলবশত ট্যাগটি ব্যবহার করছেন। এছাড়া ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বিষয়ের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো দ্রুত মনোযোগ আকর্ষণ করা। জনপ্রিয় ট্যাগ ব্যবহার করলে পোস্টগুলো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায় এবং বেশি লাইক, শেয়ার, কমেন্ট পাওয়া যায়।
ফেসবুকে ”10 unknown facts about bmw” কেন ট্রেন্ড করছে, মার্কেটিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে তার কিছু কারণের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের বক্তব্যে প্রধান যে বিষয়গুলো উঠে আসছে সেগুলোতে নজর দেওয়া যাক।
শেয়ারযোগ্য বিষয়বস্তুর আবেদন: ‘দশটি অজানা তথ্য’- এই ফরম্যাটটি শেয়ারযোগ্য বিষয়বস্তুর একটি ভালো উদাহরণ। এই উপায়ে সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে যেকোনো কনটেন্ট ছড়িয়ে দেয়া বা গ্রহণ করা সহজ। বিএমডব্লিউ সম্পর্কে ১০টি তথ্যের যে তালিকা সেটিও সহজ ও আকর্ষণীয়। আজকের দ্রুতগতির ডিজিটাল বিশ্বের জন্য এই ধরনের ফরম্যাটকে আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ, বর্তমানে যেকোনো বিষয়ে মানুষের মনোযোগ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে, মার্কেটিং দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এই ধরনের কনটেন্টে মানুষকে এনগেজ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম প্রায়ই উচ্চ ইন্টারঅ্যাকশন রেট (লাইক, শেয়ার এবং মন্তব্য) সহ পোস্টগুলোর পক্ষে যায়। বিএমডব্লিউ-এর ক্ষেত্রে এই ট্রেন্ড তাদের কোনো সরাসরি খরচ ছাড়াই পরোক্ষভাবে মার্কেটিংয়ের কাজ করছে।
বিপণন টুল হিসেবে ‘কৌতূহল’কে ব্যবহার: এই ট্রেন্ডের সফলতার আরেকটি কারণ হলো- মানুষের স্বাভাবিক কৌতূহলকে ‘ট্যাপ’ করার ক্ষমতা। দর্শক সবসময়ই এমন কিছু জানতে আকৃষ্ট হয়, যা তাদের অজানা। বিশেষ করে বিএমডব্লিউ’র মতো একটি ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানতে অনেকেই আগ্রহী। মার্কেটারসরা জানেন, এই কৌতুহলই মানুষের সম্পৃক্ততা (এনগেজমেন্ট) বাড়ায়। ‘অজানা তথ্য’ প্রকাশ করে এমন পোস্টগুলো বিশেষভাবে কার্যকর। কারণ এসব পোস্ট (অজানা তথ্য) মানুষের জ্ঞানের ফাঁক-ফোঁকর তৈরি করে। যা পাঠক পূরণ করতে চায়। ‘ইনফরমেশন গ্যাপ থিওরি’ নামে পরিচিত এই তত্ত্বটি যেকোনো ব্রান্ডের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ ও মানুষের এনগেজমেন্ট বাড়ানোর জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
ব্র্যান্ড ইক্যুইটি এবং মার্কেট রিচ বাড়ানো: এই ট্রেন্ডের অর্থনৈতিক প্রভাব বহুমুখী। প্রথমত, ক্রমাগতভাবে ভোক্তাদেরকে নতুন বিষয়বস্তুর সাথে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে বিএমডব্লিউ তার ব্র্যান্ড ইক্যুইটিকে শক্তিশালী করে। শক্তিশালী ব্র্যান্ড ইক্যুইটি বিএমডব্লিউকে প্রিমিয়াম মূল্য নির্ধারণ করতে, গ্রাহকের আনুগত্য বজায় রাখতে এবং একটি বৈশ্বিক বাজারে অন্যের চেয়ে আলাদাভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে। এর পাশাপাশি এই প্রবণতা বিশ্ববাজারে বিএমডব্লিউয়ের উপস্থিতি তুলে ধরে। এছাড়া এই ট্রেন্ডটি বিএমডব্লিউর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোর্টফোলিও প্রদর্শন করে। যার মধ্যে শুধুমাত্র বিএমডব্লিউর প্রাথমিক মডেলগুলো নয়, মিনি এবং রোলস রয়েস ব্র্যান্ডগুলোও রয়েছে।
মার্কেটিং লাভের জন্য সামাজিক মাধ্যমে ট্রেন্ড সর্বাধিক করা: ‘বিএমডব্লিউ সম্পর্কে দশটি অজানা তথ্য’ ট্রেন্ড একটি উদাহরণ, যে কীভাবে মার্কেট পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমের ট্রেন্ডকে কাজে লাগানো যেতে পারে। যদিও এই ধরনের ট্রেন্ডগুলো প্রায়ই স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠে এবং তাতে ব্র্যান্ডগুলো সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। ট্রেন্ডের ফরম্যাটের সঙ্গে মাননসই পণ্য তৈরি করে তাদের পণ্য বিক্রি বাড়াতে পারে। এই কৌশলটি সাশ্রয়ী, কার্যকর এবং কোনো মার্কেটিং খরচ ছাড়াই ব্র্যান্ড মেসেজিংকে প্রসারিত করা হয়।-লিংকডইন