দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে অনলাইন গ্যাম্বলিং বা জুয়ার লাগাম টেনে ধরার দাবি জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদরা। একই সঙ্গে তারা আগামী দুই বছর বিদেশি সফটওয়্যার আমদানি বন্ধ ও প্রত্যেকের জন্য সুলভমূল্যে ইন্টারনেট নিশ্চিত করে অগ্রসরমান প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘নতুন করে যাত্রা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টরা। আলোচনার আয়োজন করে ‘টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি পলিসি অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম (টিপঅ্যাপ)’।
গোলটেবিল আলোচনায় বৈষম্যহীন উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন সংগঠনটির দুই সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর ও ফিদা হক।
ফাহিম মাশরুর তার উপস্থাপনায় সবার জন্য স্মার্টফোন, সিটিজেন সেবায় শর্ট কোডে কল ফ্রি ও অ্যাপ সুবিধার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সাইবার সুরক্ষায় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর কতটুকু সক্ষমতা আছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এক্ষেত্রে আমাদের কাজ করতে হবে। ফ্রিল্যান্সাররা ৪ শতাংশ ইনসেনটিভ পাওয়ার কথা থাকলেও তারা তা পাচ্ছেন না।
ফাহিম মাশরুর বলেন, বর্তমানে ইয়াবার চেয়েও অনলাইন গ্যাম্বলিং (অনলাইন জুয়া, বাজি ধরা) গ্রামে-গঞ্জে কালো থাবা বসাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় শঙ্কার বিষয়। এ অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ে আর্থিক যত দুর্নীতি-পাচার, তা হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে বড় বড় কোম্পানিও জড়িত। জড়িত আছে বেশ কিছু মিডিয়াও। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি ঠেকাতে পুলিশিং নয়, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।’
দুই বছরের জন্য বিদেশ থেকে সব ধরনের সফটওয়্যারে আমদানি বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে ফিদা হক বলেন, বিদেশি উন্নয়ন ও দাতা সংস্থাগুলো যেন নিজেদের পছন্দের সফটওয়্যার কোম্পানিকে কাজ না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারি দরপত্রে বড় অঙ্কের প্রকল্প ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করানো উচিত। এতে প্রকল্পে দুর্নীতি কমবে। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের সময় পিএনপি সার্টিফিকেশনও নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া জাতীয় এআই ও ব্লকচেইন কৌশল প্রণয়ন করা দরকার।
সফটওয়্যারের পাশাপাশি হার্ডওয়্যার; বিশেষ করে পিসিবি নকশা, অ্যাপ মনিটাইজেশন সহজীকরণের গুরুত্বারোপ করেন ফিদা হক। তিনি বলেন, আমাদের দেশে অ্যাপ থেকে সহজে কেনাকাটা করা যায় না। এর মূল কারণ বাংলাদেশে এখনো গুগল-পে নেই। আইওটি ডিভাইসসহ এ সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম আমদানিতে শূন্য শুল্ক সুবিধা এবং দেশ থেকেই সরকারি কাজের জন্য ৪০ শতাংশ হার্ডওয়্যার ক্রয় করতে হবে। একই সঙ্গে ডাটার মালিকানা ব্যক্তিকেই দিতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপনা পেশ করেন টালিখাতার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শাহাদাত খান। উপস্থাপনায় তিনি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যবসায় পরিধি বাড়ানো পথের বাধা দূর করার বিষয় তুলে ধরেনে।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, বিটিআরসির কমিশনার মাহমুদ হোসেন ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভুঁইয়া প্রমুখ।