২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৩১ কোটি ইউনিটে পৌঁছেছে। বাজার গবেষণা সংস্থা ক্যানালিসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ক্যানলিস বলছে, এটি ২০২১ সালের পর তৃতীয় প্রান্তিকের সবচেয়ে ভালো স্মার্টফোন বিক্রির প্রতিবেদন। গত কয়েক মাসে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের নতুন মডেল উন্মোচন এ প্রবৃদ্ধির মূল কারণ, যা গ্রাহককে ফোন আপগ্রেড করতে উৎসাহিত করেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে স্যামসাং ৫ কোটি ৭৫ লাখ স্মার্টফোন বিক্রির মাধ্যমে শীর্ষ অবস্থানে ছিল। এ প্রবৃদ্ধিতে কোম্পানির এন্ট্রি-লেভেলের ফোনগুলো বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় স্যামসাংয়ের মোট বিক্রির সংখ্যা কমলেও ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে কোম্পানিটি। স্যামসাং বিভিন্ন মডেলে গ্যালাক্সি এআই ফিচার চালু করা শুরু করেছে এবং নতুন গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড সিক্স ও গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ সিক্স ফোল্ডেবল ফোনগুলো গ্যালাক্সি এআইসহ বাজারে এনেছে, যা প্রিমিয়াম সেগমেন্টে তাদের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করেছে। স্মার্টফোন বিক্রিতে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় স্যামসাংয়ের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অ্যাপল। গত সেপ্টেম্বরে আইফোন ১৬ উন্মোচনের মাধ্যমে তৃতীয় প্রান্তিকে রেকর্ড ৫ কোটি ৪৫ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে টেক জায়ান্টটি। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, বেসিক ও প্রো মডেলের মধ্যে ফিচারের পার্থক্য কম থাকায় নতুন সিরিজটি ভালো সাড়া পেয়েছে। এদিকে স্মার্টফোন বিক্রির দিক থেকে শাওমির অবস্থান তৃতীয়। চলতি বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৪ কোটি ২৮ লাখ ইউনিট ডিভাইস বিক্রি করেছে। এ তালিকায় সর্বশেষে রয়েছে অপো ও ভিভো। এ সময় কোম্পানি দুটি স্মার্টফোন বিক্রি করেছে যথাক্রমে ২ কোটি ৮৬ লাখ ও ২ কোটি ৭২ লাখ ইউনিট। ক্যানালিসের মতে, উভয়ই প্রতিযোগিতামূলক এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ভালো পারফরম্যান্স করেছে।
চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে শাওমি ওপেন মার্কেটে তার শক্তিশালী উপস্থিতি ও ব্র্যান্ড স্টোর ব্যবহার করেছে। এর মাধ্যমে তারা মধ্য থেকে উচ্চ মূল্যের পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর সঙ্গে গ্রাহকদের প্রো সিরিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। একইভাবে মিড-রেঞ্জের বাজারে আরো বিকল্পের জন্য ভিভো ভি৪০ সিরিজের স্মার্টফোনে নতুন সংস্করণ যুক্ত করেছে।
ক্যানালিসের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক টোবি ঝু বলছেন, যদিও ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে গ্রাহক চাহিদা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হওয়ার কারণে স্মার্টফোন বিক্রিতে সফলতা এসেছে, তবু সাশ্রয়ী দামের স্মার্টফোন বাজারে এখনো শক্তিশালী প্রতিযোগিতা রয়েছে। উপাদানের বাড়তি খরচ দীর্ঘমেয়াদি লাভ ও খরচ কমানোর কৌশলগুলোর কার্যকারিতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এসব সমস্যা মোকাবেলার জন্য কোম্পানিগুলো উদীয়মান বাজারে মিড-রেঞ্জের বৃদ্ধির দিকে বেশি মনোনিবেশ করছে, কারণ এখানে বিক্রির সম্ভাবনা বেশি।
এদিকে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) চলতি মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশ বেড়ে ৩১ কোটি ৬১ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে। আইডিসির তথ্যানুযায়ী, এ নিয়ে টানা পাঁচ প্রান্তিকে স্মার্টফোন বিক্রির প্রতিবেদন ইতিবাচক রয়েছে এবং বছরের দ্বিতীয়ার্ধও শুরু হয়েছে একটি ভালো ফল দিয়ে। ওয়ার্ল্ডওয়াইড কোয়ার্টারলি মোবাইল ফোন ট্র্যাকার শীর্ষক প্রান্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।