২০২৪ সালে প্রযুক্তিবিশ্বে একটি আলোচিত বিষয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। বিভিন্ন খাতের কোম্পানি সম্প্রতি এ উদীয়মান প্রযুক্তিতে ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ করছে। জেনসেন হুয়াংয়ের নেতৃত্বাধীন এনভিডিয়া কোম্পানি বর্তমানে এআই প্রযুক্তির দ্রুত প্রবৃদ্ধির মধ্যে একটি কেন্দ্রীয় বা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কোম্পানিটি বাজার মূলধনের দিক থেকে এখন অ্যাপলকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষে উঠে এসেছে। এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি। আর এ সফলতার পেছনে ভূমিকা রেখেছে এআই প্রযুক্তির বাড়তি চাহিদা।
গত মঙ্গলবার এনভিডিয়ার বাজার মূলধন ৩ দশমিক ৪৩ ট্রিলিয়ন (৩ লাখ ৪৩ হাজার কোটি) ডলারে উন্নীত হয়। অন্যদিকে অ্যাপলের বাজারমূল্য ৩ দশমিক ৩৮ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৩৮ হাজার কোটি ডলার। প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টদের মতে, এটি এনভিডিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এর আগে জুনেও এনভিডিয়া একবার অল্প সময়ের জন্য অ্যাপলকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছিল। আবার গত অক্টোবরের শেষের দিকে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অনেকটা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বাজার মূলধনসম্পন্ন কোম্পানির স্বীকৃতি পায় এনভিডিয়া। তবে এ অর্জন ছিল সাময়িক। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায়, দুটি বড় প্রযুক্তি কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতাও কতটা তীব্র।
সংবাদমাধ্যম আইএএনএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির সিইও জেনসেন হুয়াং বলেছেন, এনভিডিয়ার দ্রুত প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে তাদের হপার চিপগুলোর জোরালো চাহিদা ও আসন্ন ব্ল্যাকওয়েল প্রজন্মের চিপের প্রতি আগ্রহ। এসব চিপ বিশ্বজুড়ে এআই গবেষণা ও ডাটাভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনগুলোয় ব্যবহৃত হয়। এগুলো এনভিডিয়াকে ডাটা সেন্টার আধুনিকীকরণ ও কম্পিউটিং শক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করছে। উল্লেখ্য হপার হলো এনভিডিয়ার এআইকেন্দ্রিক চিপ সিরিজের কোডনেম। আর ব্ল্যাকওয়েল কোম্পানির জিপিইউ আর্কিটেকচারের পরবর্তী প্রজন্ম। এটি উচ্চ কার্যক্ষমতার কম্পিউটিং ও এআই প্রসেসিংয়ের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
কোম্পানিটি সম্প্রতি রেকর্ড আয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জানিয়ে সিইও জেনসেন হুয়াং বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী ডাটা সেন্টারগুলো তাদের পুরো কম্পিউটিং সিস্টেম আধুনিকীকরণের জন্য দ্রুতগতির কম্পিউটিং ও জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করছে। বৈশ্বিক এ পরিবর্তন এনভিডিয়ার প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে।’ চলতি বছর দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) এনভিডিয়া আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এছাড়া গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ১২২ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ডলার আয় করবে বলে প্রত্যাশা করছে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, উন্নত কম্পিউটার চিপ তৈরি করায় এনভিডিয়া এআই শিল্পে একটি নেতৃস্থানীয় কোম্পানি হয়ে উঠেছে। এসব চিপ জটিল এআইভিত্তিক কাজ পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (চ্যাটজিপিটি) প্রশিক্ষণ ও ডাটা সেন্টারে উন্নত ডাটা প্রক্রিয়াকরণ। এছাড়া এনভিডিয়ার জিপিইউ (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) বিশেষভাবে একাধিক কাজ একসঙ্গে সম্পন্ন করতে সক্ষম।
তারা বলছেন, অন্যান্য কোম্পানিও কম্পিউটার চিপ তৈরি করছে, তবে এনভিডিয়া এআই হার্ডওয়্যার উদ্ভাবনে মনোযোগ দেয়ার কারণে এটি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে। অনেক বিনিয়োগকারীদের মতে, এআই বিশ্বে যে প্রতিযোগিতা চলছে, তা থেকে সবচেয়ে লাভবান এনভিডিয়া।
এর আগে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে এনভিডিয়ার বাজার মূলধন ২ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। আর ২ লাখ কোটি থেকে ৩ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হতে সময় লেগেছে তিন মাসের বেশি কিছু সময়।