একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন নাহিদা (ছদ্মনাম)। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাই তারেক (ছদ্মনাম)-এর সঙ্গে দুই বছরের সম্পর্ক। হঠাৎ একদিন নাহিদা এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসেন। তার কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সামনে তারেক নাহিদার গায়ে হাত তুলেছিলেন। এ ক্ষেত্রে নাহিদার অপরাধ ছিল তিনি তারেকের কথা না শুনে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান।
এই বাইরেও কারণে-অকারণে তাদের মধ্যে মতের অমিল দেখা গেছে। বিনা কারণে কথা কাটাকাটিও হতো। এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে নাহিদা এই প্রেমের সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসেন। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ হয় না।
তারেক বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিতে থাকেন। বিশেষ করে, ফোনে থাকা কিছু ছবি প্রকাশের ভয় দেখান তারেক। এতে নাহিদা অপ্রত্যাশিত কিছু ঝামেলার মুখোমুখি হন। এমনকি পারিবারিকভাবে তার বিয়ে ঠিক হলেও তারেকের আইন বহির্ভূত কাজের জন্য বিয়ে ভেঙে যায় নাহিদার। প্রত্যক্ষভাবে ইন্টারনেটে একান্ত ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হন নাহিদা।
এমনই ঘটনা সমাজে প্রায় ঘটছে। নাহিদার মতন একজন শুধু এই ধরনের ঘটনার রেশ বয়ে বেড়াচ্ছেন, তা নয়। আরও অনেক নারী সময়ে-অসময়ে এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তাই বর্তমানে সাইবার অপরাধ একটি ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে পরিণত হয়েছে। আর নারীরাই এর শিকার হচ্ছেন বেশি।
এ যুগে তথ্য–প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারে দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি প্রযুক্তির অপব্যবহারেও সমাজ অনেক দূর পিছিয়ে পড়ছে। বর্তমানে ফোন কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন সহজলভ্য প্যাকেজের কারণে ইন্টারনেট এখন সবার হাতের নাগালে। স্মার্টফোন মানুষের হাতে হাতে। এই স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার, গুগল, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো, টেলিগ্রাম ইত্যাদির ব্যবহার অনেক সহজ। এতে নারী সমাজ বেশি সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী তান্ইয়া নাহার বলেন, ‘দেশে বিদ্যমান সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে অন্য কোন ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া যদি তার ছবি তোলে, প্রকাশ করে বা প্রেরণ করে, তাহলে এমন কাজ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর কোনো ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ করলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
সমাজের বিভিন্ন অপরাধের মতো সাইবার ক্রাইমও এক ধরনের অপরাধ। এই অপরাধে দোষীদের শাস্তি পাওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে এআই ফটোশপ দিয়েও যে কোনো ছবিকে আপত্তিকর ছবিতে পরিণত করা যায়। এতে নারীরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বেশি। এ ক্ষেত্রে সর্তকতার প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ব্যক্তিজীবনেও বন্ধু নির্বাচনে সর্তক হওয়া খুব প্রয়োজন।
আইনজীবী তান্ইয়া নাহার পরামর্শ দেন, এ ধরনের অপরাধের শিকার ভুক্তভোগী নারীরা প্রাথমিকভাবে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগের ক্ষেত্রে ফোনালাপের রেকর্ড, মেসেজের স্ক্রিনশট, বিভিন্ন আলামতের স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও বা ভিডিও ফাইল সংগ্রহে রাখা দরকার। এতে অভিযোগ করা অনেক সহজ হবে।
দত্তক নেওয়া কন্যা সন্তান কি বাবার সম্পত্তির ভাগ পায়?দত্তক নেওয়া কন্যা সন্তান কি বাবার সম্পত্তির ভাগ পায়?
এ ছাড়া ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অফিসে গিয়েও সরাসরি কথা বলার সুযোগ আছে। এর বাইরে উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টারে গিয়েও কথা বলার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি আইন–আদালতে যাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন লোকচক্ষুর ভয়ে ভীত না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।