গত কয়েক দশকে প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ ও ইন্টারনেটের বিস্তার মানুষের বিনোদন গ্রহণ ও অভিজ্ঞতার উপায়কে পরিবর্তন করেছে। ঐতিহ্যবাহী মিডিয়া থেকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে আসায় কনটেন্ট নির্মাতা ও ভোক্তাদের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে বাড়ছে অনলাইনভিত্তিক বিনোদন বাজারের আকার। এসব অনলাইন বিনোদনের মধ্যে রয়েছে স্ট্রিমিং পরিষেবা, ভিডিও গেম ও অন্যান্য ডিজিটাল কনটেন্ট।
বৈশ্বিক বাজার গবেষণা ও পরামর্শক সংস্থা প্রেসিডেন্স রিসার্চের গত অক্টোবরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী অনলাইন বিনোদন বাজারমূল্য দাঁড়াবে ১০ হাজার ১৮২ কোটি ডলার। বাজারটি ২০৩৪ সালের মধ্যে ৩৩ হাজার ৮৯৬ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-৩৪ সাল পর্যন্ত বাজারের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
প্রেসিডেন্স রিসার্চ বলছে, ২০২৩ সালে এ বাজারে সবচেয়ে বেশি হিস্যা ছিল উত্তর আমেরিকার (৪৬ শতাংশ)। চলতি বছর অঞ্চলটির অনলাইন বিনোদন খাতের বাজারমূল্য দাঁড়াবে ৪ হাজার ৬৮৪ কোটি ডলার। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাজারটি বার্ষিক ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ হারে বাড়বে।
উত্তর আমেরিকা প্রযুক্তি ও বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলের দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো নতুন প্রযুক্তি দ্রুত গ্রহণ করে, যা শিল্পে মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিডিয়া ও বিনোদন শিল্প হলিউড তাদের প্রযোজনায় সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। অন্যদিকে এ অঞ্চলে নেটফ্লিক্স, ডিজনি প্লাস, ইউটিউব ও অন্যান্য বড় প্লাটফর্মের সদর দপ্তর রয়েছে। দ্রুততম ইন্টারনেট, অনলাইন গেমিং ও অন্যান্য ডাটাভিত্তিক প্লাটফর্মের বিপুলসংখ্যক গ্রাহক এ বাজারের প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহত্তম মিডিয়া ও বিনোদন শিল্প রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বব্যাপী যার মূল্য ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার।
এছাড়া প্রেসিডেন্সের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বছরগুলোয় ইউরোপেও এ বাজারে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি প্রত্যাশা করছে সংস্থাটি। দ্রুত ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা ও প্রধান মিডিয়া এবং বিনোদন সংস্থাগুলোর উপস্থিতি হবে এ প্রবৃদ্ধির মূল কারণ।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে অনলাইন বিনোদন বাজারের বৃহত্তম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ভিডিও বিভাগ। পূর্বাভাসের সময়কালে (২০২৪-৩৪) অডিও বিভাগের বাজার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছে প্রেসিডেন্স। অন্যদিকে গত বছর স্মার্টফোন ছিল বিশ্বব্যাপী অনলাইন বিনোদনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিভাইস। তবে স্মার্ট টিভি, প্রজেক্টর ও মনিটর সেগমেন্ট ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া গত বছর এ বাজারের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস ছিল বিজ্ঞাপন। এদিকে সামনের বছরগুলোয় সাবস্ক্রিপশন মডেল দ্রুত বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংস্থাটির বিশ্লেষকরা।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘গত কয়েক দশকে কম্পিউটার স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের মতো প্রযুক্তি আর ডিভাইসগুলো মিডিয়া অভিজ্ঞতার উপায় পরিবর্তন করেছে। অনলাইন বিনোদন জনপ্রিয় হচ্ছে, কারণ এতে প্রবেশ করা সহজ।৷ পডকাস্ট, ভিডিও ও অডিওর মতো অনলাইন কনটেন্টের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা বাজারের বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।’
এদিকে বিনোদন জগৎ পরিবর্তনে তিনটি প্রযুক্তির বড় ভূমিকার কথা জানিয়েছে প্রেসিডেন্স রিসার্চ। এগুলো হলো অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর), ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) ও মিক্সড রিয়ালিটি (এমআর)। এসব প্রযুক্তি ভবিষ্যতে এ বাজারের প্রবৃদ্ধিকে আরো ত্বরান্বিত করবে।