দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ স্মার্টফোন। বর্তমানে বিশ্বে ৭২০ কোটির বেশি ব্যবহার হচ্ছে ডিভাইসটি। তবে আধুনিক প্রযুক্তি, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কারণে উন্নত দেশগুলোয় স্মার্টফোনের ব্যবহার বেশি লক্ষণীয়। এসব দেশে গড়ে ৭৫ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে। খবর কুলেস্টগ্যাজেটস।
গবেষণা তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী সেলফোনের ৯০ শতাংশই স্মার্টফোন। বেশির ভাগ মানুষ এখন অন্তত একটি এ ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করে। ২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে ৭২০ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহার হচ্ছে। আগামী বছরগুলোয় এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আধুনিক স্মার্টফোন যুগের শুরু হয় ২০০৭ সালে অ্যাপলের আইফোন উন্মোচনের মাধ্যমে। অ্যাপল একক ডিভাইসে উন্নত কম্পিউটিং শক্তি ও ইন্টারনেট সংযোগের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে মোবাইল ফোনকে স্মার্ট ডিভাইসে রূপান্তর করেছিল। এরপর স্মার্টফোন শিল্প ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। অ্যাপল ছাড়াও অন্যান্য প্রস্তুতকারক বাজারে প্রবেশ শুরু করে এবং নানা মডেলের স্মার্টফোন উপস্থাপন করে। অ্যান্ড্রয়েড ও বাজেট-ফ্রেন্ডলি ডিভাইস এ বাজারের প্রবৃদ্ধিকে আরো ত্বরান্বিত করে। বর্তমানে বৈশ্বিক স্মার্টফোনের বাজারে শীর্ষ দুই কোম্পানি জায়ান্ট অ্যাপল ও স্যামসাং। এছাড়া এ প্রতিযোগিতায় আছে চীনের হুয়াওয়ে, শাওমিসহ আরো অনেক কোম্পানি।
২০২৪ সালের শুরুতে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি স্মার্টফোন বিক্রি করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি কোম্পানি স্যামসাং। এ তালিকায় এরপর আছে কুপারটিনোভিত্তিক টেক জায়ান্ট অ্যাপল। কোম্পানির তথ্যানুযায়ী, স্মার্টফোনের বাজারে অ্যাপলের বিক্রি অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি হয় প্রতি বছর শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর)।
গত এক দশকে স্মার্টফোন বাজার দ্রুত বেড়েছে। এটি এখন একটি বিশাল শিল্প হিসেবে পরিচিত। ২০২৩ সালের শেষে বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের কাছে অন্তত একটি স্মার্টফোন ছিল, তবে অনেকেরই একাধিক ডিভাইস থাকার কারণে স্মার্টফোন সাবস্ক্রিপশন ৭০০ কোটি ছাড়িয়ে যায়।
গত বছর স্মার্টফোনের বাজারে আলোচনায় ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), জেনএআই (জেনারেটিভ এআই) ও ফোল্ডেবল, বিশেষ করে ট্রাই-ফোল্ড ডিভাইস। ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে এবং সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত চাহিদা মেটাতে নতুন উদ্ভাবনকে প্রাধান্য দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) তথ্যানুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে এ বাজারের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময় স্মার্টফোনের ব্যবহার ও ব্যবহৃত স্মার্টফোনের বাজারও দ্রুত বাড়বে। আইডিসির ওয়ার্ল্ডওয়াইড কোয়ার্টারলি মোবাইল ফোন ট্র্যাকারের জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক নাবিলা পোপালের মতে, জেনএআই বেশ জনপ্রিয় ও অনেক কোম্পানির জন্য অগ্রাধিকারের বিষয় হলেও এটি এখনো স্মার্টফোনের চাহিদায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেনি। প্রযুক্তিটি এ বছর স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।
স্মার্টফোনের ব্যবহার এত দ্রুত বাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা। এছাড়া এসব ডিভাইস ছবি তোলা, বিনোদন ও গেমিং সুবিধা দেয়াসহ অনেক ক্ষেত্রে পকেট-কম্পিউটারের ভূমিকাও পালন করে। কাজ, শিক্ষার মাধ্যম ও দৈনন্দিন কার্যক্রমে স্মার্টফোন একটি অপরিহার্য ডিভাইস হয়ে উঠেছে। আবার চীনা ব্র্যান্ডের মতো সাশ্রয়ী মূল্যের স্মার্টফোন বাজারে আসার কারণে অনেকেই এখন স্মার্টফোন কিনতে পারছেন, ফলে এর ব্যবহারকারীও বাড়ছে।