ডিজিটাল জগৎ যত দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে, অনলাইনে মানুষের সংযুক্তি ততই বাড়ছে। প্রযুক্তির গতি বাড়ার সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও ইন্টারনেটের প্রভাব আরো গভীর হচ্ছে। গত ছয় বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এর ব্যবহারের হার। ২০২৪ সালের অক্টোবরের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫৫২ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ডাটা বিশ্লেষণ অনলাইন প্লাটফর্ম স্ট্যাটিস্টার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
স্ট্যাটিস্টার তথ্যানুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশই ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম। বিপরীতে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল ৩৮৫ কোটি। ছয় বছরে ১৬৭ কোটি নতুন করে ইন্টারনেটে যোগ হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহাকারী দেশের তালিকায় ভারত শীর্ষস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ১২৪ কোটি মানুষ এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ডিমান্ডসেইজ বলছে, একজন মানুষ গড়ে দিনের প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা অনলাইনে ব্যয় করে। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটে সময় কাটানোর পরিমাণ কভিড মহামারী চলাকালে সবচেয়ে বেশি ছিল। ঘরবন্দি থাকার ফলে অনলাইন কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে। এ সময় ভিডিও কনফারেন্সিং, অনলাইন শিক্ষা, ই-কমার্সসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের সক্রিয়তা ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে গত কয়েকটি প্রান্তিকে এ প্রবণতা কমে গেছে অনেকটা।
ইন্টারনেট ব্যবহারের গতি বাড়ার পেছনে কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। তার মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তির অগ্রগতি ও স্মার্টফোনসহ ইন্টারনেট পরিষেবার সহজলভ্যতা। বর্তমান যুগে ইন্টারনেট অনেক কাজ সহজ ও দ্রুত করতে সহায়ক, যেমন শিক্ষা, কাজ, কেনাকাটা, বিনোদন ইত্যাদি। ডিজিটাল বিনোদনের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে অনলাইন স্ট্রিমিং পরিষেবা যেমন নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। ফলে মানুষ টেলিভিশনের বিকল্প হিসেবে এসব প্লাটফর্ম ব্যবহার করছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্সের মতো সোশ্যাল মিডিয়া যোগাযোগের মূল মাধ্যম হয়ে ওঠায় মানুষের অনলাইন উপস্থিতি আরো বেড়েছে। তবে এসব কিছুর ঊর্ধ্বে রয়েছে স্মার্টফোন ও কম্পিউটার হাতের নাগালে চলে আসা। ইন্টারনেট ব্যবহারের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো স্মার্টফোন।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিভিন্ন কোম্পানির, বিশেষ করে চীনা ব্র্যান্ডগুলো সাশ্রয়ী ডিভাইস বাজারে আনায় স্মার্টফোনের বিক্রি ও ব্যবহার বেড়েছে। ইন্টারনেট ছাড়া একটি স্মার্টফোন প্রায় ‘অচল’। ডিমান্ডসেইজের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি ব্যবহারকারী মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট চালায়। গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন অ্যাসোসিয়েশন ইন্টেলিজেন্সের (জিএসএমএ) সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, বর্তমানে পৃথিবীর ৪৬০ কোটি মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৭ শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার ৩৭ শতাংশ। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোয় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তবে বর্তমানে মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের কোনো কাভারেজ নেই, এমন অঞ্চলে বসবাস করে বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের গত ডিসেম্বরের তথ্যানুযায়ী, গত ২০ বছরে বিশ্বে জনসংখ্যার তুলনায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক দ্রুত হারে বেড়েছে। প্রতি বছর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে, যেখানে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
স্ট্যাটিস্টা বলছে, উন্নত নেটওয়ার্ক অবকাঠামো ও সাশ্রয়ী মূল্যে স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কারণে প্রতি বছর অন্তত ২৩ কোটি ৬০ লাখ ব্যবহারকারী অনলাইনে যুক্ত হয়।