বাংলাদেশে অভ্র প্রতিষ্ঠার আগে থেকে যে বাংলা সফটওয়ারটি কি-বোর্ডে ব্যবহার করা হতো সেটি হলো বিজয়। তবে এটি একটি বাণিজ্যিক সফটওয়ার। মূলত এই সফটওয়ার ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারকারীকে পয়সা গুনতে হয়।
বিজয় সফটওয়ারের সত্ত্বাধিকারী হলেন আনন্দ কম্পিউটার্সের প্রধান নির্বাহী মোস্তাফা জব্বার। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারে ২০১৮ সালে মন্ত্রীসভায় টেকনোক্রেট মন্ত্রী হিসেবে ছিলেন তিনি। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন মি. জব্বার। মোস্তাফা জব্বার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ১৯৮৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় কী বোর্ড ও সফটওয়ার প্রকাশিত হয়।
১৯৮৯ সালেই এই সফটওয়ারটির কপিরাইট করানো হয়েছিল বলে জানা যায়। অন্যদিকে অভ্র ব্যবহারে গ্রাহককে কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না। কেননা সেটি একেবারেই উন্মুক্ত, বিনামূল্যের। ২০১০ সালে প্রথম অভ্র কি-বোর্ড বা সফটওয়ারটি রোষানলে পড়ে। যখন মি. জব্বার ওই বছরের এপ্রিলে একটি সংবাদপত্রের এক নিবন্ধে অভ্রের দিকে ইঙ্গিত করে অভিযোগ করেন, হ্যাকাররা তার ‘বিজয়’ সফটওয়্যারটি চুরি করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
অভ্র কি-বোর্ডকে পাইরেটেড সফটওয়্যার হিসেবে ওই লেখায় অভিহিত করেন তিনি। মি. জব্বার সে সময় অভিযোগ করেছিলেন যে, জাতীয় তথ্য ভান্ডার তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে অভ্র কি-বোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে।
সে সময় গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন ব্লগে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলে। অনেকের লেখায় বলা হয়েছিল, নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বাণিজ্যিক বিজয় সফটওয়ারের পরিবর্তে বিনামূল্যের অভ্র ব্যবহার করার কারণে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে মি. জব্বার অভিযোগ করেছেন।
ক্রমাগত হুমকি, উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল এই বিনামূল্যের সফটওয়ার প্রতিষ্ঠানটিকে। এক পর্যায়ে বিনামূল্যের অভ্র সফটওয়ারের বিরুদ্ধে কপিরাইট অফিসে আইন ভঙ্গের অভিযোগ করেন মি. জব্বার।
তার অভিযোগ ছিল, অভ্র সফটওয়ারের সাথে ইউনি বিজয় নামে যে কি-বোর্ডের লে-আউট সরবরাহ করা হয়, এটি প্যাটেন্টকৃত বিজয় কি-বোর্ড লে আউটের নকল। এই অভিযোগের ভিত্তিতে কপিরাইট অফিস মেহদী হাসান খানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। ওই নোটিশের পর মি. খান সময় আবেদন করলে ২০১০ সালের ২৩ মে পর্যন্ত তাকে সময় দেয়া হয়। পরে ওই বছরের জুনে ঢাকার আগারগাঁও এ অবস্থিত বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অফিসে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়।
অভ্রের চার প্রতিষ্ঠাতার একজন তানবীন ইসলাম সিয়াম বলেন, “এরপরে আমরা কি-বোর্ডের ওই লে-আউট রিমুভ করে দিয়েছিলাম। এখানে একটা লে আউট ছিল যাতে বিজয় কি-বোর্ডের লে আউটের কিছু কিছু অংশ মেলে। যারা বিজয় থেকে ইউনিকোডে টাইপ করতে পারছে না, তাদের জন্য এটা ছিল। কিন্তু দুটো এক ছিল না।”
মি. সিয়াম বলছেন, অভিযোগকারী পক্ষের সাথে সমঝোতার পর পরবর্তী ভার্সনে ওই লে আউট রাখা হয়নি। তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজী হননি বিজয় সফটওয়ারের সত্ত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার।
সব অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বিজয় বাধ্যতামূলক
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এবং আমদানি করা সব ধরনের স্মার্ট ফোনে বিজয় বাংলা কি-বোর্ড সংযুক্ত করতে ২০২৩ সালে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিজয় কি-বোর্ডের মালিক এবং তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সে সময় বলেছিলেন, বিজয় বি-বোর্ড “বাংলা লেখার জাতীয় মান” হওয়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগ সব ধরনের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে বিজয় অ্যান্ড্রয়েড প্যাকেজ কিট বা এপিকে ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করে। এ ধরনের নানা প্রতিকুলতা সামলাতে হয়েছে অভ্র কি-বোর্ড বা সফটওয়ারটিকে। এখন তারা পেয়েছে একুশে পদক।