বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বাজারের আকার চলতি বছর ২ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের বাড়তি চাহিদা এ প্রবৃদ্ধির প্রধান চালক হবে। এ সময় ডিভাইস বিক্রি হবে ১২৬ কোটি ইউনিট। বাজার গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্মার্টফোনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতনের বছর ছিল ২০২০ সাল। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে ডিভাইস বিক্রি ৩৮ শতাংশ কমে যায় বলে জানায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকস। চীনে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে এ ধস নামে। এরপর একাধিক উত্থান-পতনের পর ২০২২-২৩ সালে টানা নিম্নমুখী ছিল বাজারটি।
আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা সংস্থা কাউন্টার পয়েন্ট জানায়, দুই বছর ধারাবাহিক পতনের পর ২০২৪ সালে আবারো বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বাজারের আয় বাড়ে ৬ শতাংশের বেশি। একই সঙ্গে স্মার্টফোনের গ্লোবাল অ্যাভারেজ সেলিং প্রাইস বা গড় বিক্রয়মূল্য (এএসপি) রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে ৩৫৬ ডলারে দাঁড়ায়। আগের নেতিবাচক প্রবণতা ভেঙে দিয়ে স্মার্টফোনের বাজারে আবারো গতি ফিরে পায়।
আইডিসির বিশ্বব্যাপী কোয়ার্টারলি মোবাইল ফোন ট্র্যাকারের পূর্বাভাস যদি সত্য হয়, তাহলে ২০২৫ সাল হবে স্মার্টফোন বাজার বৃদ্ধির দ্বিতীয় ধারাবাহিক বছর। গত বছর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, উদীয়মান বাজারগুলোয় মুদ্রাসংক্রান্ত উদ্বেগ, চলমান মূল্যস্ফীতি ও কম চাহিদা সত্ত্বেও ডিভাইসের বিক্রি ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
গত বছরের স্মার্টফোন বাজারের গতিবিধি নিয়ে কাউন্টারপয়েন্টের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক শিল্পী জৈন বলেন, ‘২০২৪ সালে স্মার্টফোন বাজারের জন্য বেশকিছু ইতিবাচক দিক ছিল। স্মার্টফোনের গড় বিক্রয়মূল্য ও বিক্রির সংখ্যা উভয়ই বেড়েছে এ সময়। আয় বৃদ্ধির হার বিক্রির তুলনায় বেশি ছিল। এর পেছনে মূল কারণ হলো প্রস্তুতকারকদের প্রিমিয়াম সেগমেন্টে মনোনিবেশ ও ভোক্তাদের উচ্চমানের ডিভাইসের প্রতি আগ্রহ তৈরি।’
আইডিসির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস মোবাইল ফোন শিল্পের স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
আইডিসির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক নাবিলা পোপাল জানান, চলতি বছর অ্যান্ড্রয়েডের প্রবৃদ্ধি আইওএসের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি হবে। চীনা সরকারের নতুন ভর্তুকির কারণে দেশে অ্যান্ড্রয়েডের বিক্রি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়বে। সামগ্রিকভাবে এসব ডিভাইসের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছরগুলোয় প্রিমিয়াম সেগমেন্ট, সাশ্রয়ী ফাইভজি ডিভাইস ও জেনারেটিভ এআই (জেনএআই) প্রযুক্তির প্রসার বাজারে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। এ বাজার প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্ট অ্যাপল ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।
গত বছর আয় বাড়ার দিক থেকে শীর্ষ পাঁচ স্মার্টফোন কোম্পানির তালিকায় অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের সঙ্গে ছিল চীনের শাওমি, ভিভো ও অপো।
আইডিসির প্রত্যাশা, টানা দুই বছরের পতন ঠেলে ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে স্মার্টফোনের এ প্রবৃদ্ধি চলতি বছরও চলমান থাকবে। তবে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় সামনের দিনে প্রবৃদ্ধির গতি কমবে। কারণ এখন ব্যবহারকারীরা ডিভাইস আপডেট করছে কম। যারা নতুন ফোন কেনার অপেক্ষায় ছিল, তাদের অধিকাংশের চাহিদা এরই মধ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে। তাই সামনে বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে, কিন্তু প্রবৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় কম হবে।