এনআইডি সেবা উন্নত করতে বর্হিবিশ্বের মতো স্বতন্ত্র ডেটা অথরিটি করতে চায় সরকার। এটা সরকারের বিশেষ বিবেচনায় আছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
আজ রাজধানীর আগারগাঁও আইসিটি ভবনের সভাকক্ষে এনআইডি ওনারশিপ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বলেন, বিশ্বের ৯৩টি দেশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ডেটাবেস ব্যবস্থাপনা করে। জ্যামাইকা, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর মতো ক্ষুদ্র দ্বীপ ছাড়া বলতে গেলে পৃথিবীর কোন দেশেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নাগরিক তথ্যশালা বা এনআইডি ডেটাবেজ রাখা হয় না। যেহেতু নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা সব তথ্য ভোটাধিকার বাস্তবায়নের কাজে লাগে না, তাই নাগরিকদের তথ্যশালা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ড নয়। তবে ন্যাশনাল ডেটা অথোরিটি গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আপাতত যার যার কাছে যে তথ্য আছে তা তাদের কাছেই থাকবে। এখন মন্ত্রণালয় সমূহের মধ্যে তথ্যের আন্ত:ক্রিয়াশীলতা নিশ্চিত করা হবে। পরবর্তীতে ন্যাশনাল ডেটা অথরিটি অধীনে নেওয়া হবে। এতে কেউ চাকরি হারাবে না বরং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠাম হিসেবে সবাইকে কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে হবে, সেক্ষেত্রে সরকার দক্ষ আইসিটি রিসোর্স বাড়ানো, আন্তর্জাতিক মানের সাইবার সুরক্ষা ট্রেনিং এর পরিকল্পনা করছে। ডাটা অথরিটি ডিজিটাল ইকোনমিক অপরচুনিটি আনব্লক করবে, ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে ভবিষ্যৎ মুখী করবে এবং এটা গভর্নেন্সে শৃঙ্খলা আনবে বলে প্রযুক্তি হাতে কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণ বলে সরকার আশা করে।
ডেটা অথরিটি কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা জাতীয় সম্পদ হবে। ডেটা অথরিটির বিষয়টি আইসিটির মাস্টার প্ল্যান এ আমরা রেখেছি। ন্যাশনাল ডেটা অথরিটিতে যে মন্ত্রণালয়ের সেবা দেয়ার জন্য যতটুকু ডেটা দরকার তারা ততটুকু পাবে, কিন্তু কোন মন্ত্রণালয় সব ডেটার মালিকানা নিতে পারবে না। সে হিসাবে ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য যে যে তথ্যসমূহ দরকার তার ওপর নির্বাচন কমিশনের সকল নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এখানে তথ্যের সংখ্যার চাইতে কোয়ালিটির উপর জোর দেওয়া দরকার। বর্তমানে নির্বাচনের কমিশনের কাছে অনেকগুলো ডেটা ফিল্ড আছে, কিন্তু তার তথ্যের মান এবং নিরাপত্তা উভয়টিই প্রশ্নযুক্ত। বিশেষভাবর, ভোটাধিকার বাস্তবায়নের জন্য যে এড্রেস ভেরিফিকেশন দরকার সেটা অনুপস্থিত।
ফয়েজ আহমদ বলেন, আমরা এমন একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চাই যাতে আমাদের মন্ত্রণালয়গুলো পরস্পরের সাথে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা সহ ডেটা শেয়ার করবে এবং ডিজিটাল ইকোনমির জন্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে সেবা দিবে তার জন্য তারা প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পাবে। আমরা ২০০৭ সালে ন্যাশনাল ডেটা স্টোরেজ শুরু করলেও আমাদের দেশের জনগণকে নিরাপত্তা সমেত সনাক্তকরণ সেবা কিংবা ডেটা গভর্নেন্সের অথেন্টিকেশন লেয়ার তা এখনও তৈরি করতে পারিনি।
বিশেষ সহকারী বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন বা পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন এ্যাক্ট হয়েছে কিন্তু আমরা এখনো তা করতে পারিনি। পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন এ্যাক্ট এর যে রেগুলেটরি অথরিটির হবে সেটা কার অধীনে হবে তা নিয়ে মন্ত্রণালয় গুলোর মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। এমতাবস্থায় নাগরিক তথ্য কোন নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকবে না জানিয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, নাগরিকদের হয়রানি থেকে মুক্তি, তথ্যচুরি এবং ডার্ক ওয়েবে তথ্যের অবৈধ ব্যবসা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে মানুষের সব তথ্যের একটি স্বাধীন ডাটা অথরিটি করা দরকার। সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য নেবে। নাগরিক তথ্য একটি একটি সংস্থার অধীনে রেখে কার্যকর ডেটা ইন্টারওপারেবিলিটি সম্ভব নয়। এটা বৈশ্বিক মানের সাথে যায় না।
তিনি বলেন, আন্ত মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারলে মন্ত্রণালয় গুলোর মধ্যে একটি ডিজিটাল লিটারেসি তৈরি হবে। যার মাধ্যমে আমরা আধুনিকতম প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারব। সিটিজেন ডেটা ওয়ালেট কনসেপ্টে আমরা তখনই যাব যখন আমরা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ডেটা এক্সচেঞ্জ প্রশ্নে বোঝাপড়া এবং ডেটা অথরিটির স্ট্রাকচার তৈরি করতে পারব।
ডেটা অথরিটি ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করবে এটি একটি রেগুলেটরি অথরিটি হবে বা সাংবিধানিক অথরিটি হবে। ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার বাস (বিএনডিএ) অর্থাৎ জাতীয় তথ্য মহাসড়ক এর নীতিমালা মেনে মন্ত্রণালয় গুলো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন পলিসি বাস্তবায়ন করবে। আইসিটির অধীনে ডেটা অথরিটি থাকবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, এর আগে আমরা দেখেছি পাঁচ কোটি জনগণের বহুবিধ মৌলিক তথ্য ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক কিছু মানদন্ড আছে আমরা সেই পথে এগোচ্ছি। আমরা একটি ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেমের কথা বলছি যেখানে কোন একটি মন্ত্রণালয় সকল ডেটার অধিকারী হবে না। একটি মন্ত্রণালয় সকল ডেটা মালিকানা পেয়ে গেলে সেখানে ভার্নারেবলিটি তৈরি হয় এবং ফ্লোতে বাধার সৃষ্টি হয়।
আমরা রূপান্তরের পথরেখা তৈরি করেছি সেখানে বিদ্যমান সাইলো গুলোর মধ্যে আন্ত সংযোগ তৈরি করা হবে। কারণ এর সাথে বাস্তবায়ন খরচ, বিদেশি ঋণ এবং প্রযুক্তির হস্তান্তর জড়িত। যেহেতু অনেকগুলো টাকা খরচ হয়ে গেছে তাই আমরা এই সিস্টেমগুলোকে ইন্টারকানেক্ট করব। তারপর আমরা ডেটা প্রটেকশন এ্যাক্ট এর জন্য বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ডের ন্যাশনাল ডেটা অথরিটি তৈরি করব। এরপর সিটিজেন ডেটা ওয়ালেটের দিকে যাব, যেখানে ব্যক্তি তার যেটার উপরে সব ধরনের অধিকার রাখবেন। ইউরোপ ডেটা হাইওয়ের কাজ শুরু করেছে ১৯৯৯-২০০১ এর সেদিক থেকে আমরা ২৪-২৫ বছর পিছিয়ে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।