স্মার্টফোনের যুগে প্রবেশ করলেও ফিচার ফোনের চাহিদা এখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে যেখানে স্মার্টফোন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সেখানে সহজ ব্যবহার, নিরাপত্তা, দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকআপ ও কম খরচের জন্য অনেক ব্যবহারকারী এখনো ফিচার ফোনকেই বেছে নিচ্ছে। বিশেষ করে প্রবীণ ব্যক্তি ও গ্রামীণ জনপদের মানুষ, যেখানে ইন্টারনেট সুবিধা এখনো সহজলভ্য হয়নি তাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ডিভাইসটি। জার্মানভিত্তিক অনলাইন প্লাটফর্ম স্ট্যাটিস্টার মতে, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী ফিচার ফোনের বাজারে বিক্রি ছাড়াবে ১ হাজার কোটি ডলার।
স্ট্যাটিস্টা বলছে, নির্ভরযোগ্য বিকল্প ডিভাইস খোঁজার ক্ষেত্রে ফিচার ফোন বা ‘ডাম্ব ফোনের’ ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। টেলিযোগাযোগ খাতে এখনো কিছু কোম্পানি নিয়মিত ফিচার ফোন বাজারে আনছে। তবে সংস্থাটির মতে, এখনো অনেকেই ফিচার ফোন ব্যবহার করলেও সময়ের সঙ্গে এর চাহিদা কমবে। ফলে ধীরে ধীরে এসব ডিভাইসের বাজার সংকুচিত হবে। ২০২৫-২৯ সালের মধ্যে ফিচার ফোন খাতে সমন্বিত বার্ষিক আয় (সিএজিআর) গড়ে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ হারে কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
ফিচার ফোন মূলত সাধারণ মোবাইল ফোন, যেগুলো কল করা ও মেসেজ পাঠানোর মতো মৌলিক কাজেই ব্যবহার হয়। এসব ফোনে স্মার্টফোনের মতো আধুনিক সুবিধা না থাকলেও এগুলো সহজ ও সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে পরিচিত। প্রবীণ ব্যবহারকারী বা যারা শুধু দরকারি কাজের জন্য মোবাইল ব্যবহার করতে চান, তাদের মধ্যে ফিচার ফোনের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। সাধারণত এসব ফোন ছোট পর্দা, কম শক্তিশালী প্রসেসর ও সীমিত মেমোরি থাকে। এছাড়া ফিচার ফোনে অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস নয়, বরং নিজস্ব সহজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার হয়।
আধুনিক স্মার্টফোনের তুলনায় ফিচার ফোনের গঠন বেশ আলাদা। এসব ফোন সাধারণত প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয় এবং অনেক সময়ই এর ব্যাক কভার ও ব্যাটারি খোলা যায়, যা আজকের স্মার্টফোনে প্রায় অনুপস্থিত। ফিচার ফোনের আকারও তুলনামূলকভাবে ছোট, যা হাতে ধরা বা বহন করা অনেক সহজ করে তোলে। আইফোন ১৬ বা গ্যালাক্সি এস২৫-এর মতো বড় স্মার্টফোনের পাশে এগুলো অনেকটাই হালকা ও ক্ষুদ্র মনে হয়।
স্ট্যাটিস্টার তথ্যানুযায়ী, ফিচার ফোন বাজারের পরিসংখ্যানে মোট আয়, মাথাপিছু গড় আয়, বিক্রি হওয়া ইউনিট সংখ্যা, মাথাপিছু গড় বিক্রির পরিমাণ ও গড় দামের তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। এসব তথ্য অনলাইন ও অফলাইন উভয় ধরনের বিক্রয় চ্যানেলের ভিত্তিতে তৈরি হয় এবং এতে সাধারণ ক্রেতাদের কেনাকাটার হিসাব ধরা হয়।
২০২৫ সালের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, ফিচার ফোনের বাজারে শীর্ষস্থানে আছে নকিয়া, জেডটিই ও আলকাটেলের মতো প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিগুলো উদ্ভাবনী পণ্য, ব্র্যান্ড ও বিস্তৃত নেটওয়ার্কের জন্য পরিচিত।
ফিচার ফোনের প্রসঙ্গে প্রথমেই যে নামটি সামনে আসে, তা হলো ‘নকিয়া’। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় ফিনল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানিটি বৈশ্বিক মোবাইল ফোন বাজারের ৪০ শতাংশের বেশি দখলে রেখেছিল। ৩৩১০ মডেল ও এন-সিরিজের মতো আইকনিক ফোন তৈরি করেছিল নকিয়া। এসব ডিভাইস কিছুদিনের মধ্যেই স্থায়িত্ব, ব্যবহারকারীর জন্য সহজ ডিজাইন ও আধুনিক বৈশিষ্ট্যের জন্য খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নকিয়ার নিজস্ব সিমবিয়ান অপারেটিং সিস্টেম ছিল বেশ প্রভাবশালী। কোম্পানির ফিচার ফোনগুলো উন্নত ও উদীয়মান বাজারে ব্যাপক হারে বিক্রি হতো।