ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে অনলাইন জুয়ার আসরে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। বিটিআরসির অননুমোদিত মোবাইল অ্যাপে চলছে রমরমা এই জুয়ার বাণিজ্য। দেখে বোঝার উপায় নেই, হাতে থাকা মোবাইল ফোনেই অপরাধ জগতে নিমজ্জিত তরুণরা। অ্যানড্রয়েড মোবাইল দিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে চলছে অবৈধ এসব লেনদেন।
সূত্র বলছে, অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে প্রতি মাসে অন্তত শত কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এই জুয়ার আসর শহর থেকে গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবু এ নিয়ে প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে অভিভাবকদের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ ও শঙ্কা।
জানা গেছে, বিটিআরসির অননুমোদিত অ্যানড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে অনলাইন জুয়ার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এসব ক্ষতিকর অ্যাপ পরিচালনা করতে গিয়ে ভিপিএন সফটওয়্যারের ব্যবহার বেড়েছে। বিভিন্ন সময় প্রতারকচক্রটির কয়েকজন সদস্য গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বের হয়ে তারা আবারও চালিয়ে যাচ্ছে ভার্চুয়াল এ প্রতারণা। অনলাইন জুয়ায় মোটা টাকা খুইয়ে অনেক তরুণ নিঃস্ব হয়েছে।
আবার অনেকে দেনার দায়ে বাপ-দাদার সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে যাযাবর জীবনযাপন করছে।
অনলাইন জুয়া তদারকির জন্য রয়েছে স্থানীয় একাধিক এজেন্ট, যারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ার গ্রহকদের আইডি তৈরি করে দেওয়ার নামে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। একজন গ্রহক নিজের আইডি চালু করার পর অন্য আরেকজনকে আইডি চালু করাতে পারলে পায় বাড়তি বোনাস। এসব বোনাস ও রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে প্রতারকদের ফাঁদে পা দিচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বেকার যুবকসহ নানা বয়সের মানুষ। পেশাজীবী ও শ্রমজীবীরাও এ জুয়ায় মেতেছে।
সূত্র আরো জানায়, অ্যানড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে জুয়ার মাধ্যমে উপার্জিত টাকা এ দেশের অনুমোদিত কোনো ব্যাংকেই লেনদেন করা সম্ভব নয়। ফলে স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমেই এসব জুয়ার টাকা উত্তোলন করা হয়। এ কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষ বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের চাকলাপাড়া এলাকার এক অনলাইন জুয়াড়ি বলেন, ‘জুয়া মানেই ফাঁদ। জেনে বুঝেই লাভের আশায় আমি এ জুয়ার ফাঁদে পড়েছিলাম। এজেন্টরা আমাদের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে উধাও হয়ে পড়েন। এই প্রক্রিয়াটি বেআইনি হওয়ায় আমরা আইনি সহায়তা নিতে পারি না।’
জেলার সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের ছোবল থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে প্রশাসনকে আরো বেশি সোচ্চার হতে হবে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, ‘অনলাইন জুয়ার বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি ও চক্রের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় কাউকে আইনের আওতায় আনতে পারছি না। পুলিশ এরই মধ্যে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেছে। এ ধরনের অনলাইন জুয়ায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরা জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলে অভিযোগ করতে পারেন। তাঁদের সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে।’