সরকারি প্রকল্পে ভুয়া চুক্তি, ঘুষ ও দালালি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) অধীনে পরিচালিত ইডিজিই (Enhancing Digital Government and Economy – EDGE) প্রকল্পকে ঘিরে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বব্যাংক অর্থায়িত এই প্রকল্পে নিযুক্ত কয়েকজন কনসালটেন্ট অর্থ ও প্রভাবের অপব্যবহার করে প্রকল্প পরিচালনায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছেন।
বিশ্বস্ত সূত্র ও ভুক্তভোগীদের বক্তব্য অনুযায়ী, মো. সালেহ আহমেদ (প্রজেক্ট ম্যানেজার-ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম) এবং মো. সামসুর রহমান (কম্পোনেন্ট টিম লিডার) প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে অর্থ আদায়ে সক্রিয় রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ওয়ার্ক অর্ডার, বিল অনুমোদন এমনকি কাজ শেষ হওয়ার পরেও পেমেন্ট ছাড় করতে তাদের কাছে ঘুষ দিতে হয়।
বিশেষ করে সালেহ আহমেদ নিজেকে প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ভেন্ডরকে চাপে রাখেন এবং “উপর মহলের নির্দেশ” বলে হুমকি দিয়ে থাকেন। এমনকি অভিযোগ রয়েছে, সে নিজেই অফিসের বাইরে ‘ছাত্র সংগঠনের পরিচয়ে’ ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজন নিয়ে এসে সরাসরি ডিল করেন।
এই অব্যবস্থাপনার পেছনে দীর্ঘদিন ধরে সহায়তা করে যাচ্ছেন আতিক মোর্শেদ, যিনি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক প্রাক্তন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সহকারী ছিলেন এবং পরবর্তীতে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসনিক পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পরেও আতিক মোর্শেদ সম্প্রতি আইসিটি ভবনে এসে এক প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, টেন্ডার তাঁর মনোনীত প্রতিষ্ঠানে দিতে হবে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রকল্পের কিছু টেন্ডার এবং কর্মকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি কিংবা উক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে মো. সালেহ আহমেদ এর কাছে একাধিকবার কল করলে পাওয়া যায়নি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য চেয়ে মেসেজ করলেও সিন করে কোন উত্তর দেননি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন দুর্নীতি অব্যাহত থাকলে বিশ্বব্যাংকের মতো উন্নয়ন অংশীদারদের আস্থা হারাতে পারে বাংলাদেশ, যা ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক সহায়তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।
আইসিটি ডিভিশনের অধীনস্থ বিশ্বব্যাংক অর্থায়িত “এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি (ইডিইজি)” প্রকল্পে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পটি দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উদ্ভাবনী কাজের জন্য হাতে নেওয়া হলেও, বাস্তবে এটি হয়ে উঠেছে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। বিশ্বব্যাংক এবং আইডিএ ইতোমধ্যেই প্রকল্প থেকে বরাদ্দকৃত আড়াই হাজার কোটি টাকার দুই-তৃতীয়াংশ ফেরত নিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রকল্পের মূল লক্ষ্য থেকে সরে গিয়ে এটি হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীনদের অর্থ লোপাটের হাতিয়ার।