আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা নিশ্চিত করতে ফেসবুককে কয়েকটি বিভাগে বিভক্ত করার দাবি উঠেছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বার্ষিক সভায় মার্ক জাকারবার্গের চেয়ারম্যান পদে থাকা না-থাকা নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছে। এটি ছাড়াও কোম্পানির সংস্কার নিয়ে সভায় আরো সাতটি প্রস্তাব আনেন শেয়ারহোল্ডাররা। কিন্তু সবগুলো প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ একই সঙ্গে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং বোর্ড চেয়ারম্যান। এত বড় কোম্পানির দুই শীর্ষ পদ দীর্ঘদিন ধরে আঁকড়ে আছেন তিনি। এবার তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যেতে বলছেন অনেকেই। এতে জাকারবার্গ কোম্পানির সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে আরো বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন বলে মনে করেন এই দাবির পক্ষের শেয়ারহোল্ডাররা।
ফেসবুকের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেয়া এবং কোম্পানি তিনটি বিভাগে বিভক্ত করার পক্ষে যারা এতদিন সুপারিশ করে আসছেন পরিচালনা পর্ষদের এ ভোটাভুটির খবরে তারা খুশি হলেও সংগত কারণেই বৃহস্পতিবারের সভায় সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
অবশ্য ফেসবুকের পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান গাঠনিক অবস্থার কারণে এমনটি হওয়ারই কথা ছিল। শেয়ারহোল্ডাররা বিষয়টি ওয়াকিবহাল থাকার পরও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে আটটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে বেশ সরব ছিল ট্রিলিয়াম অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট। ফেসবুকের ৭০ লাখ ডলার মূল্যমানের শেয়ারের মালিক এ কোম্পানি। পাশাপাশি ফেসবুকের বিপুল পরিমাণ শেয়ার নিয়ন্ত্রণ করে এমন বেশক’টি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করে এই সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে জাকারবার্গকে সরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল কোম্পানিটি।
প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ট্রিলিয়ামের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাস ক্রন রিকোডকে বলেন, তারা (ফেসবুক কর্তৃপক্ষ) এখন প্রশাসনিক ব্যর্থতায় পর্যবসিত। তারা প্রশাসনিক কাঠামোটিকে ঠিক করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে এটি একটি সফল কোম্পানি হিসেবে টিকে থাকবে।
ট্রিলিয়ামের এ প্রস্তাবে সমর্থন ছিল ইলিনয়েস, রোড আইল্যান্ড, পেনসিলভানিয়া, ম্যাসাচুসেটস ও ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের ট্রেজারার এবং নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার (প্রধান হিসাবরক্ষক) স্কট স্ট্রিংগারেরও।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব ছিল নর্থস্টার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের। ফেসবুকে শেয়ারহোল্ডার ব্যবস্থারই আমূল পরিবর্তন চেয়েছিল কোম্পানিটি। প্রস্তাবে প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডারের জন্য সমান ভোটাধিকার এবং জাকারবার্গের ক্ষমতা কমানোর কথা বলা হয়েছিল। কোম্পানিটির সিইও জুলি গুড্রিজ এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো এ প্রস্তাব দেন। যদিও তিনি জানতেন এবারো তা প্রত্যাখ্যাত হবে!
এ ব্যাপারে জুলি গুড্রিজ ব্লুমবার্গকে বলেন, যতদিন প্রত্যাখ্যাত হবে ততদিন এ প্রস্তাব দিতেই থাকব। অথবা কোম্পানিতে যতদিন না কোনো পরিবর্তন আসছে এবং আমাদের প্রয়োজন মিটছে এটি চলতে থাকবে। যদিও এটি পরিষ্কার যে তারা তা করবে না!
একটি সূত্র জানায়, পর্ষদ সভায় এক শেয়ারহোল্ডার জাকারবার্গকে উদ্দেশ করে বলেন, চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেয়া অথবা কোম্পানিতে একক নিয়ন্ত্রণ কমাতে তিনি রাজি আছেন কিনা। এ সময় তিনি সোস্যাল মিডিয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন রাষ্ট্রের পদক্ষেপ ও নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং এ ব্যাপারে ফেসবুকের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে কথা বলেন। এরপর তিনি জাকারবার্গের কাছ থেকে হ্যাঁ অথবা না উত্তর শুনতে চান। কিন্তু সভার মডারেটর তাকে মনে করিয়ে দেন, নিয়ম অনুযায়ী একজন একটি প্রশ্ন করার সুযোগ পান। আর জাকারবার্গও এ প্রশ্নে সাড়া দেননি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা নির্দিষ্ট করপোরেট বিষয়ে ভোট দেয়ার পাশাপাশি আরো কিছু অধিকার পান। বিশেষ করে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নির্বাচন, একীভূতকরণ প্রস্তাব বা অধিগ্রহণ অথবা নির্বাহীদের বেতন কাঠামোর ব্যাপারে শেয়ারহোল্ডাররা ভোট দেয়ার অধিকার রাখেন।
সাধারণত একটি শেয়ারের বিপরীতে একটি ভোট—এমন হিসাবই থাকে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। এই ব্যতিক্রম ফেসবুকে খুবই স্পষ্ট। এখানে ‘এ’ ও ‘বি’ শ্রেণীর শেয়ার আছে। সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা এ শ্রেণীর, যারা শেয়ারপ্রতি একটি ভোট দিতে পারেন। আর জাকারবার্গ ও তার ঘনিষ্ঠরা বি শ্রেণীর। এই শ্রেণীর শেয়ারপ্রতি ১০টি ভোট। গত বছর সিএসবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাকারবার্গ ও তার ঘনিষ্ঠরা কোম্পানির ৭০ শতাংশ ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন। যেখানে জাকারবার্গ একাই নিয়ন্ত্রণ করেন ৬০ শতাংশ। ফলে ফেসবুক ইনকরপোরেশনের যেকোনো বিষয়ে জাকারবার্গের সিদ্ধান্তই শেষ কথা।