চীনা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার ঘটনায় এবার বদলা নিতে শুরু করেছে চীন।
চীনের পক্ষ থেকে গত শুক্রবার এক ভীতিকর সতর্কবার্তা পেয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। অস্পষ্ট ওই বার্তায় চীনা কর্তৃপক্ষ বলেছে, অবিশ্বস্ত বিদেশি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির তালিকা করেছে তারা।
বৈশ্বিক ঝুঁকি মূল্যায়ন সংস্থা ইউরেশিয়া গ্রুপের কর্মকর্তা পল ট্রিয়েলো বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য কাঠামো তৈরির পদক্ষেপের শুরু এটি। এর মধ্যে অন্যান্য উপাদান যুক্ত হতে পারে। এর মধ্যে দুর্লভ খনিজ বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয় যুক্ত হতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মোবাইল ও গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীন থেকে দুর্লভ খনিজ সংগ্রহ করে।
বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে হুয়াওয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাড়ানোর বদলা হিসেবে চীনের পক্ষ থেকে দুর্লভ খনিজ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ আসতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন হুয়াওয়েকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করলে প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের ধাক্কা খায়। একে একে হুয়াওয়ের পাশ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় কয়েকটি মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান। পরে যুক্তরাষ্ট্র ওই নিষেধাজ্ঞা তিন মাসের জন্য শিথিল করলে প্রায় সব প্রতিষ্ঠান আবার হুয়াওয়ের পাশে ফেরার ঘোষণা দেয়। এর আগে ওয়াই-ফাই অ্যালায়েন্স, ব্লুটুথ এসআইজি ও এসডি অ্যাসোসিয়েশন হুয়াওয়ের পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল।
শুক্রবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হুয়াওয়ে তাদের কর্মীদের মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সব ধরনের কারিগরি বৈঠক নিষিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া হুয়াওয়ের চীনা সদর দপ্তরে কর্মরত যুক্তরাষ্ট্রের সব কর্মীকে ফেরত পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্বের শীর্ষ নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতি ও দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগসূত্র থাকার অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের। হুয়াওয়ের মাধ্যমে চীন গোয়েন্দাগিরি করতে পারে বলে তাঁদের সন্দেহ। তবে এই অভিযোগের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলে, প্রতিষ্ঠানটি মেধাস্বত্ব সম্পদ চুরি করছে। ইরানের বিরুদ্ধে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছে।
হুয়াওয়ের বর্তমান যন্ত্রপাতির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ৯০ দিনের জন্য শিথিল হলেও কোয়ালকম, ইনটেল, গুগল, মাইক্রোসফটকে প্রতিষ্ঠানটির (হুয়াওয়ে) নতুন স্মার্টফোনের জন্য কম্পিউটার চিপ বা সেবা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপের জবাবে শুক্রবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, চীনে অবিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তির তালিকা তৈরি করছেন তাঁরা। এখানে অবিশ্বস্ত বলতে বাজারের নিয়ম ভাঙা, চুক্তি ভাঙা, অবাণিজ্যিক কারণে চীনা প্রতিষ্ঠানের সেবা বন্ধ করা, অযৌক্তিক কারণে চীনা প্রতিষ্ঠানের অধিকার নষ্ট করার মতো বিষয় যুক্ত হবে।
যেসব প্রতিষ্ঠান, ব৵ক্তি ও সংস্থা ‘অবিশ্বস্ত’ তালিকায় ঢুকবে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বিশ্লেষক ট্রিয়েলো বলেন, চীন বদলা নেওয়ার কথা ভাবলেও তাদের হাতে সুযোগ কম। তারা যদি দুর্লভ খনিজ ব্যবসায় রাশ টানে, তবে তাদেরও ক্ষতি হবে। বিশ্বে দুর্লভ খনিজ রপ্তানিতে শীর্ষে চীন।