শুরুতেই দ্রুত প্রসার এবং গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার কারণে ফাইভজি প্রযুক্তি ধারণার চেয়েও বেশি গতিতে বিস্তৃতি লাভ করবে। বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলো পরবর্তী প্রজন্মের এ প্রযুক্তির ব্যাপারে যে হারে আগ্রহী হয়ে উঠছে, তাতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অর্ধেক বিশ্ববাসীর কাছে ফাইভজির নেটওয়ার্ক পৌঁছবে। গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এমন চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছে টেলিকম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এরিকসন।
এরিকসনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান ফোরজি এলটিই মোবাইল নেটওয়ার্ক বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২২ সালে এ প্রযুক্তির গ্রাহক সর্বোচ্চে (৫৩০ কোটি) পৌঁছবে। এর পর থেকেই ফোরজির গ্রাহক পতন শুরু হবে।
এর বিপরীতে ফাইভজির গ্রাহক অবিশ্বাস্য গতিতে বাড়বে বলে ধারণা করছে এ সুইডিশ কোম্পানি। কোম্পানির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বের ৪৫ শতাংশ জনসংখ্যা ফাইভজি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সুবিধা পেতে সক্ষম হবে।
এ প্রতিবেদনে ফাইভজি নেটওয়ার্কের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রক্ষেপণ সংশোধন করে গত নভেম্বরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ১৯০ কোটি মানুষ ফাইভজি প্রযুক্তির সক্রিয় ব্যবহারকারী হবে।
প্রতিবেদনে নির্বাহী সম্পাদক প্যাট্রিক সারোয়াল বলছেন, ফাইভজি বিস্তারের বর্তমান গতি আমাদের ধারণারও বাইরে।
ফাইভজি প্রযুক্তি চালু নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে চলমান প্রতিযোগিতা গত কয়েক মাসের মধ্যে খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য বাণিজ্যিক সুবিধা নেয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোও ফাইভজি অবকাঠামো স্থাপনের তোড়জোড় শুরু করেছে। কারণ উচ্চগতির এ ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সেবা স্বচালিত গাড়ি, চিকিৎসা ও স্মার্টসিটি গড়ে তোলার মতো বৈপ্লবিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি শহরে সীমিত পরিসরে ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, দক্ষিণ কোরিয়াও শিগগিরই ফাইভজি যুগে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এরিকসন বলছে, ফাইভজি প্রযুক্তির বিকাশ ও বিস্তৃতিতে চিপ ও স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফলে এই গতির সঙ্গে তাদেরও তাল মেলাতে হচ্ছে। যদিও ফাইভজির দৌড় মূলত শুরু হবে ২০২০ সালের পর।
তবে এর মধ্যে বিপত্তি হয়ে আবির্ভূত হয়েছে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ। বিশ্বের শীর্ষ টেলিকম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মিত্রদেশগুলোকেও ফাইভজি অবকাঠামো নির্মাণে হুয়াওয়েকে বয়কট করতে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট এরিকসনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফিনিশ টেলিকম কোম্পানি নকিয়া এ পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।
যদিও টেলিকম সরঞ্জামের প্রধান সরবরাহকারী কোম্পানিকে বয়কট করার কারণে বিশ্বব্যাপী ফাইভজি বিস্তারের গতি কমবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি অত্যাধুনিক এ প্রযুক্তিকে ব্যয়বহুলও করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
হুয়াওয়েকে গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, হুয়াওয়ে চীন সরকারের ঘনিষ্ঠ। এ কোম্পানির টেলিকম সরঞ্জামের সহায়তায় অন্য দেশের ওপর গোয়েন্দাগিরি করা হতে পারে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র এ দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ তুলে ধরেনি। হুয়াওয়ে বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
টেলিকম সরঞ্জামের পাশাপাশি স্মার্টফোন বাজারেও আধিপত্য করছে হুয়াওয়ে। সরবরাহের দিক থেকে বর্তমানে দ্বিতীয় শীর্ষ কোম্পানি এটি। কোম্পানিটি বিভিন্ন সরঞ্জাম ও সফটওয়্যারের জন্য আর্ম, মাইক্রোসফট, গুগলের মতো বৃহৎ মার্কিন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। অ্যাপলসহ এসব কোম্পানি চীন থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আয় করে। ফলে হুয়াওয়ে নিষিদ্ধ করার কারণে এ কোম্পানিগুলোও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে।