‘গো ব্রডব্যান্ড’ সেবা চালু করে দুই বছরে গ্রামীণফোনের আয় করা ৩০ কোটি টাকার পুরো অর্থ জরিমানা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তিনটি চিঠিই বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
ওই সব চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গ্রামীণফোনের করা রিট আবেদনে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে রোববার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ এ রায় দেয়।
গ্রামীণফোনকে দেয়া তিনটি চিঠি বাতিল করলেও বিটিআরসি আইনের ৬৩ ও ৬৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী নতুন করে তাদের চিঠি দিতে বলা হয়েছে। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার চার মাসের মধ্যে এ চিঠি দিতে হবে বিটিআরটিসিকে।
এছাড়া আইন ও চুক্তির শর্ত ভেঙে অপটিক্যাল ফাইবারের (তার) মাধ্যমে গ্রাহকদের ‘গো ব্রডব্যান্ড’ ইন্টারনেট সেবা দেয়ায় রাষ্ট্রের কী ক্ষতি হয়েছে, তা মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে নিরূপণ করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী। আর বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।
রায়ের পর বিটিআরসির আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, গো ব্রডব্যান্ড নামে গ্রামীণফোন গ্রাহকদের ট্রান্সমিশন সংযোগ দিয়েছে। এটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার নীতিমালার ৪ দশমিক ৭ এবং ৪ দশমিক ৮ নম্বর শর্তানুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। মোবাইল ফোন অপারেটররা অপটিক্যাল ব্যাকবোন ট্রান্সমিশন স্থাপন করতে পারে না। এর অনুমোদন রয়েছে শুধু অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবাদানকারী নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠানগুলোর। ফলে এ সার্ভিসটি চালু রাখা আইনসিদ্ধ নয় বলে রায় দিয়েছে আদালত।
আর টু জি ও থ্রি জি লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী, মোবাইল অপারেটরগুলো কেবল মোবাইল ডিভাইস এবং মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে।
রেজা-ই-রাকিব বলেন, এই সেবা চালু রাখার মাধ্যমে রাষ্ট্রের কী ক্ষতি হয়েছে, তা অডিটর জেনারেলের মাধ্যমে নিরূপণের জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গ্রামীণফোন ‘গো ব্রডব্যান্ড’ সেবার নামে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংককে সরাসরি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে অভিযোগ করে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসির কাছে লিখিত অভিযোগ করে। এরপর ওই বছরের মার্চ মাসের শেষ দিকে গ্রামীণফোনকে কারণ দর্শাও নোটিস দেয় বিটিআরসি। টেলিযোগাযোগ আইন ভঙ্গ করে কেন সোনালী ব্যাংককে ‘গো ব্রডব্যান্ড’ সেবা দেয়া হয়েছে, চিঠিতে তা জানতে চাওয়া হয়।
কিন্তু সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে গ্রামীণফোনকে জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। এরপর ৩০ কোটি টাকা জরিমানা করে তা পরিশোধ করতে ওই বছরের ৬ ও ২৯ নভেম্বর এবং ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি তিনটি চিঠি দেয় বিটিআরসি।
এই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালে রিট আবেদন করে গ্রামীণফোন। ওই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ওই তিনটি চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে হাইকোর্ট রুল জারি করে। সেই রুল নিষ্পত্তি করে রোববার রায় হল।