চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ার বলিরহাটের মুদি দোকানদার মুহাম্মদ ইসমাইল। গত মার্চে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে মোবাইল অপারেটর রবির একটি সিম নিয়েছিলেন। বুধবার বিকেলে আরেকটি সিম কিনতে গিয়ে জানতে পারেন, তার নামে আরও ৩০টি সিম নিবন্ধিত আছে!
এ ঘটনায় গ্রাহকের গোপন তথ্য ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে মোবাইল অপারেটরের সিম নিবন্ধনের অভিযোগে একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এমন জালিয়াতি হচ্ছে।
গ্রেফতার চারজন হলেন- ফেরদৌস সরোয়ার রবিন (১৮), মিনহাজুল ইসলাম (২৩), মিশু আহমেদ (৩০) ও জাবেদ ইকবাল (৩০)। এদের মধ্যে ফেরদৌস মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবির লোকাল এজেন্ট।
তাদের কাছ থেকে দেড়শ সক্রিয় সিম, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট গ্রহণের একটি ক্যাবল ও তিনটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, গ্রেফতার ফেরদৌস মোবাইল অপারেটর রবির পরিবেশক এ কে খান টেলিকম লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি। বাকলিয়ার বলিরহাট এলাকার মুদি দোকানদার মুহাম্মদ ইসমাইল গত মার্চে তার কাছ থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে একটি সিম নিয়েছিলেন। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে রবিন আরও কয়েকবার ইসমাইলের হাতের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ফেরদৌসের কাছ থেকে আরেকটি সিম কিনতে গিয়ে ইসমাইল জানতে পারেন, তার নামে আরও ৩০টি সিম নিবন্ধিত আছে। ইসমাইল বিষয়টি পুলিশকে জানালে ফেরদৌসকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে, ফেরদৌস ইসমাইলের মতো আরও সাত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সিম রেজিস্ট্রেশন করেছে বলে স্বীকার করেন, বলেন ওসি নেজাম উদ্দিন।
তিনি জানান, রবিনের দেয়া তথ্যে বুধবার রাতে কালামিয়া বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিনহাজুল ইসলাম ও মিশু আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে রেয়াজউদ্দিন বাজার থেকে জাবেদ ইকবাল নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে রবি মোবাইল অপারেটরের সিম রেজিস্ট্রেশন করে বাজারে সক্রিয় সিম বিক্রি করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধচক্র। তারা গ্রাহকের আঙুলের ছাপ ও তথ্য সংরক্ষণ করে। তারপর সেগুলো দিয়ে সিম নিবন্ধন করে। প্রকৃত গ্রাহক জানতেও পারেন না, তার নামে সিম নিবন্ধিত হয়েছে। সেই সিম প্রতারকচক্রের সদস্যরা চড়া দামে বিক্রি করে। এসব সিম হাত ঘুরে রোহিঙ্গাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে কি না, সেটাও আমরা তদন্ত করে দেখছি। আমাদের ধারণা, পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এই জালিয়াতি হচ্ছে।