এবার হাওর -বাওর এলাকায় সাশ্রই মূল্যে কথা বলার জন্য সরকারি মোবাইল কোম্পানী টেলিটক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘ হাওর এন্ড আইল্যান্ড” । এই প্রকল্পের অধীনে ২শ বিটিএস বসানো হবে । এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ।
এই প্রকল্পের কাজের জন্য ওপেন টেন্ডার আহবান করা হয়েছে । এ মাসের ২৫ তারিখ টেন্ডার ফেলার শেষ দিন থাকলেও তা বাড়িয়ে ৯ অক্টোবর করা হয়েছে। চীনা কোম্পানী হুয়াওয়ে এবং জেটটিই এই দরপত্রে অংশগ্রহন করার জন্য যোগাযোগ করছে। অবশ্য টেলিটকের শুরু থেকে হুয়াওয়ে কাজ করছে । জেটটিই নতুন করে কাজের সুযোগ খুজছে । ,
পাশাপাশি ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন’ নামে আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে টেলিটক । এই প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৮২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ৯ হাজার ৪১০ সেট টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম কেনা, তিন হাজার বিটিএস সাইট নির্মাণ, ট্রান্সমিশন হাবের জন্য ১০০ সাইট প্রস্তুত, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেনা, কাস্টমার কেয়ার ও আসবাবপত্র কেনা। সরকার ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী, আগামী ২০২১-২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ফাইভজি প্রযুক্তিনির্ভর মোবাইল সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ।
পরিকল্পনা বিভাগের অক্টোবর-২০১৬ জারিকৃত পরিপত্রের অনুচ্ছেদ-৪ অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে প্রাক্কলিত ব্যয় সম্পন্ন সব বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের আগে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করার শর্ত রয়েছে। টেলিটকের প্রস্তাবিত প্রকল্পের মোট ব্যয় তিন হাজার ২৮২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হলেও কোনো ফিজিবিলিট স্ট্যাডি সম্পন্ন করা হয়নি। প্রকল্পটির কার্যপরিধি দেশব্যাপী হওয়ায় এবং টেলিযোগাযোগ খাতের অন্যান্য বেসরকারি মোবাইল অপারেটর থাকায় এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বেসরকারি অপারেটরদের মার্কেট শেয়ার ৯০ শতাংশের বেশি।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প শক্তি উইং বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও পরিকল্পনা বিভাগের পরিপত্রের অনুচ্ছেদ-৯ ও ১০ এর শর্তানুযায়ী অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করেনি। কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি তিন হাজার ২৮২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। চায়না এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় দুই হাজার ৮০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গত ২০১৫ সালের জুনে একটি প্রকল্প সমাপ্ত করা হয়। ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে টেলিটকের সেবার মান ও সক্ষমতা কী পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তার বিবরণ সংযুক্ত হয়নি।
সরকারি বিধান থাকলেও টেলিটকের সোয়া তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পেই প্রতি মাসে প্রশাসনিক ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা। আর প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি ব্যয় হবে মাসে ১৬ লাখ টাকা। আর প্রতিটি মোটরযানের দাম ধরা হয়েছে ৬০ লাখ ২২ হাজার টাকার বেশি। তবে এই প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যয় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি রয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত। আর এই বঞ্চিতদের হার গ্রাম পর্যায়ে বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ক্রয়ক্ষমতা অনেকাংশে কম। বেসরকারি মালিকানাধীন অন্যান্য মোবাইল অপারেটররা এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যবসায়িক ও মুনাফার বিবেচনায় নেটওয়ার্ক বিস্তারের মাধ্যমে মোবাইল ব্রডব্র্যান্ড সেবা প্রদান করতে অনেকেই অনিচ্ছুক। ফলে গ্রামপর্যায়ে গ্রাহকেরা শহরের মতো অত্যাধুনিক মোবাইল ব্রডব্র্যান্ড সেবা থেকে বঞ্চিত। আর এ কারণে জনসাধারণের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগের অসম বণ্টন সৃষ্টির মাধ্যমে ডিজিটাল বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। তাই গ্রামে সবার মাঝে প্রাথমিকভাবে ফোরজি ও পরে ফাইভ-জি পৌঁছে দিতেই এই প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হচ্ছে ৯ হাজার ৪১০ সেট টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম কেনা, তিন হাজার বিটিএস সাইট নির্মাণ, ট্রান্সমিশন হাবের জন্য ১০০ সাইট প্রস্তুতকরণ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেনা, কাস্টমার কেয়ার ৩০ সাইট ও আসবাবপত্র কেনা।
সূত্র মতে, বর্তমানে টেলিটকের ভয়েস ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের কাভারেজ অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় সীমিত। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে কভারেজ খুবই কম। টেলিটকের মোট টাওয়ার বা সাইট সংখ্যা সাড়ে চার হাজারটি। এর মধ্যে টু-জি বিটিএস যন্ত্রপাতি হলো সাড়ে চার হাজারটি, থ্রি-জি বিটিএস তিন হাজার ৬২টি এবং ফোর-জি বিটিএস এক হাজার ১০০টি। এই টাওয়ার ও টেলিকম যন্ত্রপাতির সংখ্যা অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় নিতান্তই কম।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্পটি ৩৬ মাস বা তিন অর্থবছরে বাস্তবায়ন করা হবে। এই ৩৬ মাসে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য জিওবি খাত থেকে মোট ৩৮৬ কোটি আট লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ফলে প্রতি মাসে শুধু প্রশাসনিক খাতে ব্যয় হবে ১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এই ব্যয়ের যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। অন্য দিকে পেট্রল, অয়েলসহ জ্বালানি খাতে ৩৬ মাসে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
অর্থাৎ প্রতি মাসে এই প্রকল্পে শুধু জ্বালানি খাতেই খরচ করতে হবে ১৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২৭টি মোটরযান কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। মুদ্রণ ও মনিহারিতে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এখানে প্রতি মাসে ব্যয় হবে ২১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। মেরামতে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ছয় কোটি ৪৭ লাখ ২১ হাজার টাকা। এখানে মাসে ব্যয় হবে ১৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
এ দিকে টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামাদি কেনার জন্য দুই হাজার ৩০৫ কোটি আট লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুমোদিত কোনো শিডিউল অব রেইটস না থাকায় এসব যন্ত্রপাতির স্পেসিফিকেশন ও ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি কিভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, তা সুস্পষ্ট নয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেছেন, ‘প্রযুক্তি সর্বদা পরিবর্তনশীল। তাই কর্মজীবন ও পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে না পারলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব। বাংলাদেশ ফাইভ জি’র নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ফাইভ জি চালু করার কথা ছিল। কিন্তু আমরা আশা করছি এর আগেই দেশে ফাইভ জি চালু হবে’। মন্ত্রী জানান, আগামী বছর অথবা পরের বছর দেশ ফাইভ জি যুগে প্রবেশ করবে । সে কারণে এখন যে প্রযুক্তিগুলো রয়েছে আগামীতে তার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। আপনারা দেখতে পাবেন আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্থা টেলিটক এবং বিটিসিএল-তারাই প্রথম ফাইভ জি দিয়ে যাত্রা শুরু করবে।
আরও পড়ুন-নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক ও ফাইভ-জি সেবা দেয়ার উদ্যোগ টেলিটকের
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘আমরা ২২ হাজার পর্ন সাইট বন্ধ করেছি। দুই হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করেছি। প্রতিদিন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে যারা গুজব ছড়ায় তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছি। আমরা এইটকু বলতে চাই, যেভাবে আমরা প্রতিটি মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় আনতে চাই তেমনি করে আমরা ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে চাই। আমরা এই দায়িত্ব পালন করছি’।
মন্ত্রী বলেন, ‘সামনের দিনগুলো শুধু ইন্টারনেট ও ব্রাউজিং করার দিন নয়, আধুনিক প্রযুক্তির যুগ। আমরাই প্রথম দেশের নামের সঙ্গে ডিজিটাল শব্দ ব্যবহার শুরু করি। বিশ্বে বাংলাদেশই প্রথম, দেশকে ডিজিটাল ঘোষণা করেছে। এক বছর পর ব্রিটেন এবং ছয় বছর পর ভারত একই ঘোষণা দিয়েছে। আট বছর পর বিশ্বজুড়ে বলা হচ্ছে এখন ডিজিটাল বিপ্লবের সময়। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে শুধু গতানুগতিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষাগ্রহণ করলেই হবে না, অর্জিত জ্ঞানকে পেশাগত জীবনে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে’।
বর্তমানে টেলিটকের ভয়েস ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের কভারেজ অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় সীমিত। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে কভারেজ খুবই কম। টেলিটকের মোট টাওয়ার বা সাইট সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার। এর মধ্যে টু-জি বিটিএস যন্ত্রপাতি হলো সাড়ে চার হাজার, থ্রি-জি বিটিএস তিন হাজার ৬২টি এবং ফোর-জি বিটিএস এক হাজার ১০০টি। এই টাওয়ার ও টেলিকম যন্ত্রপাতির সংখ্যা অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় অত্যন্ত কম।‘
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ১০ কোটি জনগণ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ হার গ্রামে বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামে ব্যবহারকারীদের ক্রয়ক্ষমতা অনেকাংশে কম, ব্যক্তিমালিকানাধীন অন্যান্য মোবাইল অপারেটররা এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যবসায়িক ও মুনাফা বিবেচনায় নেটওয়ার্ক বিস্তারের মাধ্যমে মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা দিতে চায় না। ফলে গ্রামের মানুষেরা ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
আরও পড়ুন-যে কোনো মূল্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে: মোস্তাফা জব্বার
টেলিটক সূত্র জানায়, বর্তমানে শহরাঞ্চলে বিদ্যমান টেলিটকের ‘ফোরজি’ নেটওয়ার্ক ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যন্ত প্রসারিত করে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সুলভমূল্যে দ্রুতগতির ফোরজি ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সরকার ঘোষিত লক্ষ্য অনুসারে, ২০২১-২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটা গ্রামে ফাইভজি প্রযুক্তি নির্ভর মোবাইল সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
শহর-গ্রাম নির্বিশেষে দেশের সব মানুষ যেন আধুনিক প্রযুক্তি সেবার উপকারভোগী হয়, তা নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করছে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ।