আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে বড় সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারটর গ্রামীণফোন। এমনটিই জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান।
তবে এমন সঙ্কট সৃষ্টি হলে এই অপারেটরটির প্রায় ৭ কোটি সেবা গ্রহীতার ওপর কী ধরণের প্রভাব পড়তে পারে বা তাদের করণীয় কী তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ইয়াসির আজমান।
সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইয়াসির আজমান বলেন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এর বিধিনিষেধের কারণে গত বছরের দুলাই মাস থেকে কোম্পানিটি নতুন করে কোনো বিনিয়োগ করতে পারেনি। এই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা ছিল।
ফলে প্রতিষ্ঠানটি নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি বা অন্যান্য কাজ করতে পারছে না। বর্তমানে প্রতিদিন ৫০ লাখ সিমের চাহিদা থাকলেও বিটিআরসির নিষেধাজ্ঞায় তা সরবরাহ করতে পারছে না গ্রামীণফোন।
নিরীক্ষা রিপোর্টে বিটিআরসি গ্রামীণ ফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা পাওনা দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। সোমবার ওই মামলায় শুনানি হয়।
এদিকে দুই হাজার কোটি টাকা পাওনার মধ্যে বিটিআরসিকে ৫৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে প্রস্তুত গ্রামীণফোন। বাকি টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে আদালতের রায় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জিপি’র নতুন প্রধান নির্বাহী। তবে উচ্চ আদালতের আদেশ ছাড়া কোনভাবেই ৫৭৫ কোটি টাকা নেবে না বিটিআরসি। ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই পুরো টাকা না দিলে গ্রামীণফোনে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
গতবছরের ২৪ নভেম্বর বিটিআরসির দাবি করা ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার মধ্যে গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। তিন মাসের মধ্যে গ্রামীণফোনকে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর বিটিআরসির পাওনা দাবির একটি অংশ পরিশোধে রাজি হয় গ্রামীণফোন। তবে দুই হাজার কোটি টাকা নয়। ১২ কিস্তিতে মাত্র ৫৭৫ কোটি টাকা পরিশোধের সুযোগ চায় তারা। এই দাবি নিয়ে সম্প্রতি আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেছে দেশের শীর্ষ এই অপারেটর। বিষয়টি এখনো বিচারাধীন।
এরইমধ্যে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর বসুন্ধরায় জিপি হাউজে গ্রামীণফোনের প্রথম বাংলাদেশি সিইও হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বিটিআরসির পাওনা ইস্যুতে কথা বলেন ইয়াসির আজমান। উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলে গ্রামীণফোনের প্রস্তাব মেনে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ওনারা যদি আমাদের উপরে বলে পাঁচশো কোটি টাকা নেন এটা অসম্ভব। নেওয়ার সুযোগ নাই। আমাদের শুধু বাইশশো কোটি টাকা দেওয়ার সুযোগ আছে, আর সেটাও একবারে। আমাদের কিস্তি দেওয়ার কোন সুযোগ নাই। কোর্ট এখনো স্টে দিলো না, স্টে না দিলে আমাদের যে ক্ষমতা আছে আইনে আমরা তাই করবো।
এসময় পাওনা ইস্যুতে শীর্ষ এই অপারেটরের রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ পাঠানো উচিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান।