সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ মেনে দ্বিতীয় কিস্তিতে বকেয়া অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউর (এজিআর) আরো ৮ হাজার ৪ কোটি রুপি পরিশোধ করেছে ভারতী এয়ারটেল। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে প্রথম কিস্তিতে মোট বকেয়া এজিআরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা ১০ হাজার কোটি রুপি দেশটির টেলিযোগাযোগ বিভাগকে (ডিওটি) পরিশোধ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে মোট ১৮ হাজার ৪ কোটি রুপি পরিশোধ করল প্রতিষ্ঠানটি। খবর ইটি টেলিকম।
২০০৫ সাল থেকে এজিআরের সংজ্ঞা নিয়ে ভারতের ব্যক্তিখাতের টেলিকম কোম্পানি এবং ডিওটির মধ্যে আইনি লড়াই চলে আসছে। গত বছর অক্টোবরের শেষ দিকে এজিআর নিয়ে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশন ও ভোডাফোন আইডিয়ার মতো টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন খারিজ করে দিয়ে ডিওটির সংজ্ঞাকে বৈধতা দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। একই সময় বকেয়া পরিশোধে সেলফোন অপারেটরগুলোকে গত জানুয়ারির ২৩ তারিখ সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এর কয়েক সপ্তাহ পর দেশটির সেলফোন অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে সর্েবাচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়। তবে এজিআর নিয়ে আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এর পরও অপারেটরগুলো বকেয়া এজিআর পরিশোধ না করায় দ্বিতীয় ধাপে আদালতের পক্ষ থেকে গত মাসের ২০ তারিখ রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আদালত দ্বিতীয় ধাপে সময় নির্ধারণ করে দেয়ার পরপরই ১০ হাজার কোটি রুপি পরিশোধ করেছিল ভারতী এয়ারটেল।
ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে রিলায়েন্স জিও ইনফোকম বাদে খারাপ সময় পার করছে সবগুলো সেলফোন অপারেটর। আদালত নির্ধারণ করে দেয়া বকেয়া এজিয়ারের কারণে ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেড সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। এখন ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম দাঁড়িয়েছে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করতে না পারলে ডিওটিকে অপারেটরগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনাও দিয়েছেন।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ভারতী এয়ারটেলকে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারকে ৩৫ হাজার ৫৮৬ কোটি রুপি পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে তরঙ্গভাড়া ২৪ হাজার ৭২৯ কোটি এবং লাইসেন্স ফি বাবদ ২৮ হাজার ৩০৯ কোটি রুপি পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বকেয়া এজিআরের কারণে ভোডাফোন আইডিয়ার সংকট ক্রমেই বাড়ছে। দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে মোট ৫৩ হাজার কোটি রুপি বকেয়া এজিআরের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি বকেয়া এজিআরের আংশিক পরিশোধের পর থেকে অপারেটরটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভোডাফোন আইডিয়া শুরু থেকে বলে আসছিল এ বিপুল পরিমাণ বকেয়া পরিশোধ করার মতো পরিস্থিতিতে তারা নেই। বকেয়া এজিআর পরিশোধে বাধ্য করা হলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, ভারতী এয়ারটেলের বকেয়ার পরিমাণ কম হওয়ায় দুই কিস্তিতে মোট বকেয়ার প্রায় অর্ধেক পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে বকেয়া এজিআরের কারণে ভোডোফোন আইডিয়ার কার্যক্রম বন্ধ হলে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী চাকরি হারাবেন। একই সঙ্গে বিপদে পড়বেন প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরাও। দেশটিতে ৩৩ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এ বিপুলসংখ্যক গ্রাহক তো বিপদে পড়বেনই। সেসঙ্গে কাজ হারাবেন ভোডাফোনের ওপর নির্ভরশীল অসংখ্য ব্যবসায়ী। দ্বিতীয় বৃহৎ সেলফোন অপারেটর ভোডাফোনের কার্যক্রম বন্ধ হলে ভারতের টেলিযোগাযোগ ব্যবসা খাতও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। এছাড়া প্রতিযোগিতা কমে যাওয়ায় গ্রাহকদের ওপরও চাপ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বকেয়া এজিআর নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত আসার পর গত বছরের ডিসেম্বরেই ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান কুমার মঙ্গলম বিড়লা জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য ছাড়া তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ভারতে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়। এরপর গত কয়েক মাসে সে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। লোকসানের অংকও বেড়েছে। ভোডাফোন আইডিয়ার পক্ষ থেকে সরাসরি কিছু বলা না হলেও শিগগিরই অপারেটরটির কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।