সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে এক হাজার কোটি টাকা জমা দেওয়া এবং সেই রায়ের কপিসহ বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আবেদনের পরেও কিছুতেই যেন গ্রামীণফোনের ওপর থেকে উঠছিল না বিটিআরসি’র নিষেধাজ্ঞার খড়গ।
অবশেষে খানিকটা হলেও মন গলেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের।
গত সপ্তাহে এক কমিশন বৈঠকে গ্রামীণফোনের যন্ত্রপাতি আমদানির আবেদনের ৩০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসিকে পে-অর্ডার হিসেবে এক হাজার কোটি টাকা প্রদান করে গ্রামীণফোন। আগামী ৩১ মে’র মধ্যে তাদের আরো এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করার কথা।
বিটিআরসি চাইছিল ৩১ মে’র আগে গ্রামীণফোনের কোনো কিছুই অনুমোদন করা হবে না। কিন্তু গ্রামীণফোন কোর্টের রায় নিয়ে হাজির হওয়ায় তারা নিজেদের অবস্থান থেকে খানিকটা সরে আসল।
এদিকে বিটিআরসি’র নিষেধাজ্ঞার কারণে গত আট মাস ধরে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কের সকল রকম মেইনটেনেন্স বন্ধ রয়েছে। ফলে তাদের গ্রাহক সেবার মান দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিষয়টি তারা বারবার বিটিআরসি’র সামনে তুলে ধরলেও তাতে কাজ হয়নি।
গত জুলাই মাসে বিটিআরসি সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে গ্রামীণফোন এবং রবি’র সকল প্রকার অনুমোদন বন্ধ করে দেয়।
আইন অনুসারে অপারেটরদের নতুন প্যাকেজ চালু, নেটওয়ার্ক সম্প্রচারণ এবং মেইনটেনেন্সের জন্যেও অপারেটরগুলোকে বিটিআরসি’র কাছ থেকে পূর্বানুমোদন নিতে হয়।
গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবি’র কাছে ৮৬৭ কোটি টাকা পাওনা দাবিতে তখন এমন শক্ত অবস্থানে যায়।
পরে কোর্টের রায় অনুসারে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে রবি দুই কিস্তিতে ৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করে। জানুয়ারিতে তাদের প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়ার পরেই বিটিআরসি তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
এসব বিষয়ে অবশ্য গ্রামীণফোন আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের আট মাসের বেশী সময় নেটওয়ার্কের তেমন কোনো কাজই তারা করতে পারেনি। ফলে গ্রাহক সেবার মান খুবই খারাপ হয়ে গেছে। এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি টাকা দেওয়ার পরেও আরো সময়ক্ষেপণ করে তাহলে সেটি গ্রাহকদেরকে খারাপ সেবা নিতেই বাধ্য করবে।
এর আগে বিটিআরসির করা অডিটে গ্রামীণফোনের কাছে তারা মোট ১২ হাজার ৫৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা হিসেবে দাবি করে। যার মধ্যে বিটিআরসির অংশ ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি আর এনবিআরের অংশ ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা।
বিটিআরসির পাওনা দাবিকৃত ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকার মধ্যে মূল টাকা হলো ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। বাকি ৬ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা-ই বিলম্ব ফি, যেটি মূল টাকার ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে হিসেব করা হয়েছে।
বিষয়টি আদালতে গড়ালে গত ২৪ নভেম্বর আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে (২৪ ফেব্রুয়ারি) গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরে তাদের রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় এক হাজার কোটি টাকা এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আরো এক হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশনা দেন সুপ্রিম কোর্ট।