ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির টেলিযোগাযোগ কোম্পানি রিলায়েন্স জিও ইনফোকমের প্রায় ১০ শতাংশ মালিকানা কিনছে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক। এ অধিগ্রহণ চুক্তির মূল্য ৫৭০ কোটি ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৩ হাজার ৫৭৪ কোটি রুপি। গতকাল মার্ক জাকারবার্গ নিয়ন্ত্রিত ফেসবুকের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ফেসবুকের দাবি, বিশ্বজুড়ে নিজেদের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি করতেই জিওর সঙ্গে তাদের এ জোটবদ্ধ হওয়া। খবর হিন্দুস্তান টাইমস ও এনডিটিভি।
রিলায়েন্স জিওর পৃথক বিবৃতিতে বলা হয়, জিও প্লাটফর্মে বিনিয়োগ করতে চলেছে ফেসবুক। তাদের ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ মালিকানা কিনছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুকের এ চুক্তির ভিত্তিতে জিওর ডিজিটাল প্লাটফর্মের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪ লাখ ৬২ হাজার কোটি রুপি।
বর্তমানে মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (আরআইএল) আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান হলো জিও প্লাটফর্ম। রিলায়েন্সের ডিজিটাল সেবা প্রদান করছে এ প্রতিষ্ঠান। আর এ জিও প্লাটফর্মের আওতাধীন টেলিযোগাযোগ কোম্পানি হলো রিলায়েন্স জিও ইনফোকম লিমিটেড। ভারতে এ সেলফোন অপারেটরটির গ্রাহক সংখ্যা ৩৮ কোটি ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঋণের বোঝা কমাতে বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন ব্যবসায় বিলগ্নীকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে রিলায়েন্স। এরই অংশ হিসেবে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে সৌদি তেল শোধন সংস্থা আরামকোর কাছে নিজেদের ২০ শতাংশ মালিকানা বেচে দিতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে রিলায়েন্স (পেট্রো)। গুগলের সঙ্গেও একটি পৃথক বিলগ্নীকরণের আলোচনা চলছে। যদিও সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত তথ্য কোনো পক্ষ প্রকাশ করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিও প্লাটফর্মের সঙ্গে চুক্তির ফলে ভারতে আরো বিস্তার লাভ করবে ফেসবুক। চীনের পর ফেসবুকের সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে ভারতে। এরই মধ্যে ভারতে ৪০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে ফেসবুক নিয়ন্ত্রিত আরেক জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের। জানা যায়, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভারতে আর্থিক লেনদেন সেবা চালু করতে চাইছে ফেসবুক। টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানটিকে জনসাধারণের কাছে পৌঁছতে সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে মুকেশ আম্বানি বলেন, ২০১৬ সালে যখন জিওর আবির্ভাব ঘটেছিল, তখন একটাই লক্ষ্য ছিল। আর তা হলো ডিজিটাল মাধ্যমে ভারতের উদয় এবং তার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক ভারতীয়র জীবন উন্নত করা। একই সঙ্গে ভারতকে বিশ্বের প্রধান ডিজিটাল সোসাইটি হিসেবে মেলে ধরা। যে কারণে ফেসবুকের প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আশা করছি, আমাদের যৌথ উদ্যোগ ভারতে ডিজিটাল পরিবেশকে আরো ভালোভাবে মেলে ধরবে এবং ভারতীয়দের জীবনমান আরো উন্নত করবে।
অন্যদিকে মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক পোস্টে বলেন, বিশ্বে এখন অনেক কিছু ঘটে চলেছে। তবে আমি ভারতে আমাদের কাজ সম্পর্কে একটি তথ্য ভাগ করে নিতে চাই। জিও প্লাটফর্মের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে চলেছে ফেসবুক। আমরা সেখানে আর্থিক বিনিয়োগ করছি। বেশকিছু বড় প্রকল্পে আমরা একযোগে কাজ করব এবং ভারতে ব্যবসা বৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগাব।
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড়, সাশ্রয়ী ও দ্রুত প্রবৃদ্ধির টেলিকম বাজার। তবে দেশটির টেলিকম খাত টানা কয়েক বছর নজরকাড়া সব অর্জনের পর এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে সংকটপূর্ণ সময় পার করছে, যা একটি বাজারের সমগ্র চিত্র বদলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একদিকে সেলফোন অপারেটরগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা, অন্যদিকে তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে। এতে বাড়তি অনিশ্চয়তা যোগ করেছে অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউর (এজিআর) সংজ্ঞা নিয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে চলমান মামলার রায় ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশনের (ডিওটি) পক্ষে যাওয়া। দেশটির টেলিকম খাতে মূল্যযুদ্ধ মোকাবেলা করতে গিয়ে সেলফোন অপারেটরগুলোর মুনাফা শূন্যের কোটায় নেমেছে। বাধ্য হয়ে গত কয়েক বছরে একাধিক অপারেটর বাজারটি থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে এবং কয়েকটি অপারেটর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে একীভূত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেলফোন অপারেটরগুলোর অর্থ সংকট এবং তীব্র প্রতিযোগিতা ও মূল্যযুদ্ধের কারণে বাজারে যেকোনো সময় পুরো ভিন্ন চিত্র দেখা যেতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জিও-ফেসবুকের জোট ভারতের ডিজিটাল সেবা খাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতীয়রা বিশ্বের যেকোনো দেশের থেকে সবচেয়ে কম দামে ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার করেন। দেশটিতে মোবাইল কল রেটও তুলনামূলক কম। রিলায়েন্স জিও কার্যক্রম শুরুর পর মূল্যযুদ্ধের জের ধরে দেশটিতে মোবাইল কল রেট অনেকটাই কমে গেছে। গত তিন বছরে ভারতে একবারও মোবাইল কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার দাম বাড়ানো হয়নি। বরং ক্রমাগত কমতে দেখা গেছে। সর্বশেষ গত নভেম্বরে দুটি সেবার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল জিও। ক্রমাগত লোকসানের মুখে ভোডাফোন আইডিয়া ও ভারতী এয়ারটেলও ডিসেম্বর থেকে বাড়তি শুল্কের ঘোষণা দেয়। এতে সেলফোন অপারেটরগুলোর গ্রাহকদের মোবাইল কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার জন্য বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে।