মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে আর্থিক সংকটে রয়েছে দেশের মানুষ। যার প্রভাব পড়েছে মোবাইল সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রেও। করোনার মহামারীকালে দেশে মোবাইল ফোন সেবার গ্রাহক ধারাবাহিকভাবে কমতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে মোবাইলে ইন্টারনেট গ্রাহকও কমেছে। চলতি বছরের মে মাস শেষে দেশে মোবাইল গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ১৫ লাখ, যা ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় ৪৬ লাখ কম। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে মোবাইলের গ্রাহক যে হারে কমেছে, সে তুলনায় মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকও ততটা কমেনি। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মে শেষে ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে ২ লাখ।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল গ্রাহক বাড়তে দেখা গেছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায়। মার্চ থেকেই মোবাইল গ্রাহক কমতে শুরু করে, যা মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে। কোনো একটি অপারেটরের নয়, গ্রাহক কমছে সব অপারেটরের।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ৯০ দিনের মধ্যে কোনো সিমে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো বা ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই তাকে সক্রিয় গ্রাহক হিসেবে গণ্য করে। অবশ্য একজন গ্রাহক একাধিক সিম ব্যবহার করতে পারেন।
বিটিআরসির হিসাবে, ২০১৯ সালের মে মাসে দেশে মোবাইল গ্রাহক ছিল ১৬ কোটি ৮ লাখ। এরপর ধারাবাহিকভাবে তা বেড়ে গিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে মোবাইল গ্রাহক ১৬ কোটি ৬১ লাখে উন্নীত হয়। এরপর থেকে তা প্রতি মাসেই কমতে শুরু করেছে। সর্বশেষ মে মাসে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ১৬ কোটি ১৫ লাখে এসে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হারিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণফোন। রবি অজিয়াটাও গ্রামীণফোনের কাছাকাছি গ্রাহক হারিয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণফোনের মোবাইল গ্রাহক ছিল ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৬০ হাজার, যা মে শেষে ৭ কোটি ৪২ লাখ ৬০ হাজারে নেমেছে। এই তিন মাসে গ্রামীণফোন একাই ১৬ লাখ গ্রাহক হারিয়েছে। মে শেষে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ অপারেটর রবি আজিয়াটার গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৩২ হাজার, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৪ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার। এ সময়ে রবি হারিয়েছে ১৫ লাখ ৭৯ হাজার গ্রাহক। একই সময়ে বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা ১৪ লাখ ৩০ হাজার কমে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৪০ হাজারে। রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। মে শেষে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে আগামীতে মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক আরও কমতে পারে। বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক আরও ৫ শতাংশ বাড়ানোর ফলে মোবাইলে কথা বলা ও এসএমএস পাঠানোর ক্ষেত্রে করভার দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি। এর মানে হলো, এখন থেকে ১০০ টাকা রিচার্জে কথা বলা ও এসএমএস পাঠানোয় সরকারের ঘরে যাবে ২৫ টাকার মতো, যা আগের চেয়ে ৩ টাকা বেশি। চলতি বাজেটে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে করভার দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকার পাবে প্রায় ১৮ টাকা।
অপারেটররা বলছে, নতুন করে কর আরোপের ফলে মানুষ মোবাইলে ব্যয় কমিয়ে দেবে। কারণ, এখন করোনার কারণে মানুষের আয় কমে গেছে। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বড় সংকটের মধ্যে পড়েছেন। সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটার্স অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) জানায়, দেশের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মানুষের স্মার্টফোন নেই। সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে তারাই মূলত বেশি চাপে পড়বেন। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের বেশির ভাগের পক্ষে ব্যবহার কমিয়ে খরচ কমানো ছাড়া উপায় থাকবে না।
এদিকে দেশে সামগ্রিকভাবে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়লেও মোবাইলে ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে। গত ফেব্রুয়ারি শেষে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড সেবার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার। এ সংখ্যা মে শেষে ১০ কোটি ২১ লাখ ১৩ হাজারে উন্নীত হয়। এ সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার বেড়েছে ৪০ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারিতে মোবাইলে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ৯ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার, যা মে শেষে ২ লাখ ৮ হাজার কমেছে। এ সময়ে ব্রডব্যান্ড সেবার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ৪৮ হাজার থেকে ৮০ লাখ ৮৬ হাজারে উন্নীত হয়েছে।