বিশ্বজুড়ে চলমান করোনা মহামারির সময়ে গ্রাহক চাপ বাড়লেও দেশজুড়ে নিজস্ব তত্বাবধানে পরিচালিত ১৪টি ‘গ্রামীনফোন সেন্টার’ এখন কার্যত বন্ধ। ঢাকার গুলশানের একটি লাউঞ্জ ছাড়া সবগুলো সেবা সেন্টারই আপাত বন্ধ। আর গত চার মাস ধরে হোম অফিসে পাঠানো নেটওয়ার্কের ১২০ জন এবং কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের ৬২ জনকে কার্যত কর্মহীন রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে তারা এখন স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত হওয়া আশঙ্কা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামীণফোনের নাম্বার ওয়ান নেটওয়ার্ক ও গ্রাহক সেবা এখন তৃতীয় পক্ষ ভেন্ডরদের মাধ্যমে কম টাকায় অল্প শিক্ষিত, অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও অনির্ভরশীল জনবল দ্বারা পরিচালনা, ব্যাবস্থাপনা ও রক্ষনাবেক্ষণ করা হচ্ছে। এমনকি সুইস বা গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্ক স্থাপনা এবং নিজস্ব তত্তাবধানে পরিচালিত গ্রাহক সেবাও তৃতীয় পক্ষ ভেন্ডরদের মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সেবা দেয়ার ইতোমধ্যেই নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে খুলনা অঞ্চলের ১ কোটি ৮০ লাখ গ্রাহককে। গত ১৯ আগস্ট যশোরের মেইন সুইচ রুম ক্র্যাশ করায় দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা সমস্যা পোহাতে হয় গ্রাহকদের।
অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন, এতে করে দেশের টেলিকম নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা ও কাস্টমারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভান্ডারকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এটা জাতীয় জননিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক হুমকি।
বিশ্বস্তসূত্রে জানাগেছে, সরকার তথা বিটিআরসির অডিট আপত্তির পাওনা দাবি পরিশোধ ও গ্রামীণফোনকে এসএমপি ঘোষণার ফলে টেলিনর তথা মালিকপক্ষের আর্থিক ও অধিক থেকে অধিকতর মুনাফা লাভের যে, ক্ষতি হয়েছে তা পূরনের উদ্দেশ্যে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের এসব কর্মকাণ্ড কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির উপর এর বিরূপ প্রভাব এবং দেশের জননিরাপত্তা, সুশাসন ও জাতীয় নিরাপত্তার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে গ্রামীণফোনে শ্রমিকদের রেজিষ্টার্ড ট্রেড ইউনিয়ন “গ্রামীণফোন এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন”।
এ বিষয়ে ইতিমধ্যে গ্রামীণফোন এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ) সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিটিআরসি’র বরাবর আবেদন করেছে। এছাড়াও কর্মসংস্থান, গ্রাহক ও নেটওয়ার্ক পরিষেবা এবং সম্ভাব্য জনসাধারণ ও জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত ও সমুন্নত রাখতে সংগঠনটি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, শ্রম প্রতিমন্ত্রীসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক ও কর্তৃপক্ষ এমনকি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
গ্রামীনফোন এম্প্লয়ীজ ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মিয়া মাসুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, “গ্রামীনফোনকে বাংলাদেশের এক নম্বর মোবাইল অপারেটর হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যেই অভিজ্ঞ কর্মীরা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে, গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কর্মহীন করে চাকরি থেকে ছাঁটাই করার হঠকারি ও আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং অনতিবিলম্বে কর্মহীন সকল কর্মীদের স্বপদে পুনর্বহালের আবেদন জানাচ্ছি। গ্রামীণফোন এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন শ্রম আইন লংঘন করে বেআইনি ও অবৈধভাবে কাউকে চাকরিচ্যুত করা কোনভাবেই মেনে নিবে না।”
মিয়া মাসুদ আরও বলেন, গ্রামীণফোন এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন একটি রেজিষ্টার্ড ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে তার সকল শ্রমিকদের আইনসংগত অধিকার ও গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা চালু রাখার লক্ষ্যে কোম্পানির যেকোনো অবৈধ, অনৈতিক ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত কখনোই মেনে নিবেনা।
অভিযোগ রয়েছে, ইতোপূর্বে কল সেন্টারকে (১২১) কে তৃতীয় পক্ষ ভেন্ডরের মাধ্যমে পরিচালনা করায় বর্তমানে হটলাইনে গ্রামীণফোন গ্রাহকেরা মান সম্মত সেবা আর পাচ্ছেন না। এছাড়াও নেটওয়ার্কের মান জরিপকারি প্রতিষ্ঠান “ওকলা”র সাম্প্রতিক জরিপে গ্রামীনফোন শক্তিশালী নেটওয়ার্ক হিসেবে তার পূর্বের অবস্থান হারিয়েছে।-